Advertisement
E-Paper

‘ঘটি-বাটি বিক্রি করে এসেছি, ফিরে কী করব?’, ভারত সরকারের দ্বারস্থ পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি পরিবার

অনেক পরিবারই পাকিস্তান থেকে ভারতে আসার আগে সেখানে তাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা যা ছিল সবই বিক্রি করে দিয়ে এসেছে। শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে উন্নত জীবনযাপনের আশায় ভারতে পাড়ি দিয়েছিল পরিবারগুলি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪
Sold everything, how can return, Pakistani families urges to Indian government

ভারতে থাকতে চেয়ে আবেদন পাকিস্তানি পরিবারদের। ছবি: পিটিআই।

বাবার কোলে ছোট্ট শিশু, অন্য জন হাত ধরে আছে। তাঁদের পিছনে ঘোমটার আড়ালে দাঁড়িয়ে ৩০-৩৫ বছর বয়সি এক মহিলা। সম্পর্কে তিনি ওই ব্যক্তির স্ত্রী! সকলের চোখেমুখে হতাশা। প্রশ্ন, ‘‘পাকিস্তানে সব কিছু বিক্রি করে ভারতে এসেছিলাম! এখন ওখানে ফিরব কী ভাবে? থাকব কোথায়? খাবই বা কী?’’

পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানিদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। তার পর থেকেই রাজস্থানের বাড়মেরের সিআইডির অপরাধ দমন শাখার অফিসের সামনে ভিড় বাড়ছে পাকিস্তানি হিন্দু পরিবারগুলির। তারা সকলেই স্বল্পমেয়াদি ভিসায় ভারতে এসেছিল। এখন বড় সমস্যায় পড়েছে তারা। সিআইডি অফিসের বাইরে দাঁড়ানো তেমনই এক পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘ভারতে ভালই ছিলাম। পাকিস্তানে আমাদের জন্য কিছু নেই। সব কিছুর দামই আকাশছোঁয়া। কাজকর্ম নেই তেমন।’’ পহেলগাঁও কাণ্ডের পর বিনা মেঘে তাদের মাথায় বাজ পড়েছে। অসহায়, হতাশ হয়ে ঘুরছে সরকারি অফিসগুলোর দরজায় দরজায়। আর্জি, তাদের ভারতে থাকার বৈধতা নিশ্চিত করা হোক।

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের এক হিন্দু পরিবার গত ১৯ এপ্রিলই ভারতে এসেছিল। সেই পরিবারে সদস্যসংখ্যা ১৮। সিআইডি অফিসের কর্তাদের হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করছেন সকলে। আবেদন, তাঁদের যেন তাড়িয়ে দেওয়া না হয়। থাকতে দেওয়া হয় ভারতে। পরিবারের এক সদস্য সুরেশ তাঁদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘৪৫ দিনের ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলাম। এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসে উঠেছিলাম। আসার আগে পাকিস্তানে আমাদের যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে এসেছি। আমাদের বড় পরিবার। এখানেই থাকার ইচ্ছে ছিল। ও দেশে আমাদের আর কিছু নেই। দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য আবেদন করেছি। জানি না কী হবে। তবে আমরা এখানে পাকাপাকি ভাবে থাকতে চাই।’’

পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় দুঃখিত পরিবারগুলি। তবে তাদের দাবি, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা কেবল শান্তি এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে চাই। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যাতে আমাদের ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।’’ সকলের একটাই দাবি, ‘‘সব কিছু বিক্রি করে এসেছি, এখন পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে কী করব?’’ এমন পরিবারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রায় প্রতি দিনই তাদের ভিড় বাড়ছে বাড়মের সিআইডি অফিসের বাইরে। কারও পরিবারে সদস্যসংখ্যা ১৭, কারও আবার ছোট পরিবার।

উমেরকোটের বাসিন্দা জালাম সিংহ এক মাস আগে স্ত্রীকে নিয়ে মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে এসেছিলেন। তাঁদের পুত্র ভারতীয় নাগরিক। এখন তাঁরাও দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় ভারতে থাকতে চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের মতোই স্বরূপ সিংহ নামে এক ব্যক্তিও ভারতে এসেছিলেন দিন কয়েক আগে। তাঁর কন্যা ভারতীয় নাগরিক হলেও স্বরূপ, তাঁর স্ত্রী এবং দুই পুত্র পাকিস্তানেই থাকতেন। ২৯ এপ্রিল তাঁর একমাত্র কন্যার বিয়ে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতির পর তাঁদেরও দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। তাঁর অনুরোধ, কন্যার বিয়েতে থাকতে চান! এমন পরিবারগুলি প্রত্যেকে দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য আবেদন করেছে।

পাকিস্তান থেকে যাঁরা বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছেন, তাঁদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে পাকিস্তানিদের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে ‘সার্ক’ ভিসাও। বেঁধে দেওয়া হয়েছে সময়ও। পাকিস্তানিদের স্বল্পমেয়াদি ভিসা (১২ ধরনের) বাতিল করেছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। জানানো হয়েছে, ‘সার্ক’ ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২৬ এপ্রিল, অর্থাৎ শনিবারই তাঁদের ভারত ছাড়ার শেষ দিন ছিল। মেডিক্যাল ভিসা বাদে প্রায় সব পাকিস্তানি ভিসার মেয়াদই শেষ রবিবার, অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল। মেডিক্যাল ভিসার মেয়াদের শেষ তারিখ ২৯ এপ্রিল অর্থাৎ মঙ্গলবার। তবে এই তালিকা থেকে বাদ থাকছে দীর্ঘমেয়াদি ও কূটনৈতিক ভিসা! নরেন্দ্র মোদীর সরকারের নির্দেশে বিপদে পড়েছে এই পরিবারগুলো।

Pahalgam Terror Attack Pakistani Pahalgam Incident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy