লোকসভার ভেতরে এমন ভাবে রেগে যেতে তাঁকে আগে কেউ কখনও দেখেনি। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে, তাঁকে শান্ত করতে গিয়ে এগিয়ে আসেন ছেলে রাহুল। মায়ের কাঁধে হাত রেখে শান্ত হতে বলেন। কিন্তু, সনিয়া গাঁধী এতটাই রেগে ছিলেন যে কাঁধ ঝাকিয়ে সরিয়ে দেন রাহুলের হাত।
বুধবারের দুপুর। এক প্রস্ত মুলতুবির শেষে ফের লোকসভার অধিবেশন শুরু হয়েছে। ললিত বিতর্কে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন আলোচনার অনুমতি দেওয়ার পর কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে তাঁর বক্তব্য পেশ করছেন। তিনি যখন বক্তব্যের শেষের দিকে, তখন গৌতম নামে রাজস্থানের এক সাংসদ ক্রমাগত সনিয়ার উদ্দেশে কটূক্তি করা শুরু করেন। তাঁর বোনের নাম না করে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘মাসির কাছে টাকা আছে।’’ বার বার এক কথা শুনে শেষে রেগে যান সনিয়া। হঠাত্ই নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন কংগ্রেস সভানেত্রী। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নেমে আসেন ওয়েলে। স্পিকারের আসনের সামনে এসে তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘উনি আমার সম্পর্কে কী বলছেন? এটা কী হচ্ছে?’’ তত ক্ষণে সনিয়াকে অনুসরণ করে ওয়েলে নেমে এসেছেন কংগ্রেসের সব সাংসদ। নেমে আসেন রাহুল গাঁধীও। কংগ্রেস সাংসদরা দাবি জানাতে থাকেন, গৌতমকে ক্ষমা চাইতে হবে। খাড়্গে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্পিকার অধিবেশন ফের সাময়িক ভাবে মুলতুবি করে দেন।
মুলতুবি শেষে ফের অধিবেশন শুরু হতে রাহুল তাঁর মায়ের কাছে যান। কাঁধে হাত রেখে মা-কে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, সনিয়া তখনও ক্ষোভে ফুঁসছেন। এক ঝাঁকুনিতে রাহুলের হাত সরিয়ে দেন তিনি। এ বারের বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই সনিকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। এমনকী, কংগ্রেসের ২৫ জন সাংসদকে বহিষ্কার করার পর সংসদ ভবন চত্বরে দলের ধর্না কর্মসূচিতেও তাঁর ভূমিকা দেখেছে গোটা দেশ। কনুইয়ের উপর কালো কাপড় বেঁধে হাতের মুষ্ঠি আকাশের দিকে ছুড়ে যে ভাবে গলার শিরা ফুলিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘ইয়ে তানাশাহি নেহি চলেগি’ তাতে রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই আশ্চর্য হয়েছিলেন।
কিন্তু, সে দিনের সঙ্গে আজকের সনিয়ার বিস্তর ফারাক। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, সে দিন কংগ্রেসের একটি পরিকল্পিত কর্মসূচি ছিল। সেখানে কী করা হবে, সাংসদদের ভূমিকা কী হবে, তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল। কিন্তু, আজ সে সবের বালাই ছিল না। সনিয়ার আজকের রাগ কার্যত আকস্মিক এবং স্বতস্ফূর্ত। এ দিন যে ভঙ্গিমায় তিনি কার্যত তেড়ে গেলেন, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। আগে কখনও তাঁকে এ ভাবে দেখেনইনি লোকসভায় দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর পাশে বসা সতীর্থরা।