Advertisement
১৯ মে ২০২৪

প্রিয়ঙ্কা-শীলা জুটিতে ভরসা রাখছেন সনিয়া

উত্তরপ্রদেশের ভোটে প্রিয়ঙ্কা বঢরাকে তুরুপের তাস করেই মাঠে নামতে চলেছে কংগ্রেস। খাতায় কলমে কোনও পদ না দিয়ে তাঁকে রাহুল গাঁধীর পাশাপাশি প্রচারের প্রধান তারকা হিসেবে কাজে লাগানো হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কংগ্রেসের মুখ হিসেবে শীলা দীক্ষিতকেই ঠেলে নামাচ্ছেন সনিয়া গাঁধী।

প্রচারে প্রিয়ঙ্কা বঢরা। —ফাইল চিত্র।

প্রচারে প্রিয়ঙ্কা বঢরা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশের ভোটে প্রিয়ঙ্কা বঢরাকে তুরুপের তাস করেই মাঠে নামতে চলেছে কংগ্রেস। খাতায় কলমে কোনও পদ না দিয়ে তাঁকে রাহুল গাঁধীর পাশাপাশি প্রচারের প্রধান তারকা হিসেবে কাজে লাগানো হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কংগ্রেসের মুখ হিসেবে শীলা দীক্ষিতকেই ঠেলে নামাচ্ছেন সনিয়া গাঁধী।

এত দিন মূলত অমেঠী-রায়বরেলীর গণ্ডিতেই প্রচার বা সংগঠনের কাজ দেখতেন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু কংগ্রেসের নেতারা চাইছিলেন, মা ও দাদার লোকসভা কেন্দ্রের গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে গোটা উত্তরপ্রদেশেই প্রচারে নামুন প্রিয়ঙ্কা। এআইসিসির উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত নেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে এ বিষয়ে প্রিয়ঙ্কার কথাও হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রিয়ঙ্কা মোটামুটি রাজি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে দু’তিন দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।

উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী রণকৌশল তৈরির দায়িত্ব পাওয়ার পরে ‘পোল স্ট্র্যাটেজিস্ট’ প্রশান্ত কিশোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কার মধ্যে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হোক। কিন্তু কংগ্রেস হাইকম্যান্ড তা খারিজ করে দেওয়ার পর প্রশান্ত কিশোর পরামর্শ দেন, প্রিয়ঙ্কাকে প্রচারে আরও বড় দায়িত্ব দেওয়া হোক। পাশাপাশি কংগ্রেসের পুরনো ব্রাহ্মণ ভোটব্যাঙ্ককে ফিরিয়ে আনতে কোনও ব্রাহ্মণ নেতা বা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হোক। তাতেই শীলার নাম উঠে আসে।

দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা অবশ্য একেবারেই রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে সনিয়ার সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। শীলা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জানতে চান, উত্তরপ্রদেশে দলের সম্ভাবনা জয়ের কতখানি। হাইকম্যান্ডের তরফে জানানো হয়, কংগ্রেস মূলত বিজেপির সঙ্গে তৃতীয় স্থানের জন্য লড়াই করছে। কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের দলই থাকবে। এ কথা শুনেই শীলা জানিয়ে দেন, তিনি ১৫ বছর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার পরে রাজ্যপাল হয়েছেন। রাজনৈতিক কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে উত্তরপ্রদেশের হারের দায় নিতে রাজি নন। তা-ও যেখানে ভোটের আর মাত্র কয়েক মাস দেরি।

অনিচ্ছুক হলেও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব শীলার উপরে চাপ তৈরি করেন। তাঁকে বোঝানো হয়, ইন্দিরা জমানার মন্ত্রী প্রয়াত উমাশঙ্কর দীক্ষিতের পুত্রবধূ হিসেবে তিনি ভোটে ছাপ ফেলতে পারেন। কংগ্রেস সভানেত্রীর চাপে তিনি যে বাধ্য হয়ে রাজি হচ্ছেন, সেই ইঙ্গিত দিয়ে আজ শীলা বলেন, ‘‘আমি উত্তরপ্রদেশের পুত্রবধূ। দলের অনুগত সৈনিক। দল কোনও দায়িত্ব দিলে আমি তা নেব।’’ তবে উত্তরপ্রদেশের ভোটের যে আর বেশি দেরি নেই, তা তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন শীলা। খাতায়-কলমে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন না কি তিনি প্রচার কমিটির প্রধান হবেন, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি শীলা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘ঘোষণা হলে আপনারা জেনে যাবেন। এখন বলব না। আলোচনা চলছে।’’

প্রশান্ত কিশোরের হিসেব অনুযায়ী, প্রিয়ঙ্কাকে প্রচারে নামানোর পাশাপাশি শীলা দীক্ষিতকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বা রাজ্যের সভানেত্রী করা হলে কংগ্রেস পুরো ব্রাহ্মণ ভোট পেতে পারে। পাশাপাশি মুসলমান ও দলিত বাদে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোট পেলে কংগ্রেসের ভোটের হার ২৭ থেকে ২৮ শতাংশে পৌঁছতে পারে। গত বিধানসভায় কংগ্রেস ৪০৩টির মধ্যে মাত্র ২৮টি আসনে জিতেছিল। সে তুলনায় এ বার দলের ফল অনেকটা ভাল হতে পারে। প্রিয়ঙ্কা অবশ্য প্রথমে রাজি ছিলেন না। তিনি রাজনীতিতে নামলে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না, তা নিয়েও শীর্ষনেতৃত্বের প্রশ্ন ছিল। গুলাম নবি সনিয়া ও প্রিয়ঙ্কা, দু’জনের সঙ্গেই বৈঠক করেন। প্রিয়ঙ্কা নিজেও আলাদা ভাবে গুলামের বাড়িতে বৈঠক করতে যান। প্রিয়ঙ্কা যে উৎসাহ দেখাচ্ছেন, তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

কংগ্রেস যখন ঘর সাজাতে ব্যস্ত, বিজেপিও হাত গুটিয়ে বসে নেই। শীলার নাম ঘোষণা হলেই তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লি সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিজেপি মাঠে নামবে। একই ভাবে রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের আসল উদ্দেশ্যই প্রিয়ঙ্কাকে অস্বস্তিতে ফেলা। সেই সুরও আরও চড়বে।
তবে কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপি দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও উত্তরপ্রদেশের ভোটে তা কাজ করবে না। আর শীলা লখনউয়ের রাজনীতিতে সময় দিলে দিল্লিতে অজয় মাকেন ও তাঁর সম্পর্কের জটিলতারও অবসান হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sheila dixit Priyanka Vadra Sonia Gandhi congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE