Advertisement
E-Paper

বিরোধী-মঞ্চ গড়তে সনিয়ার মহড়া সংসদেই

সংসদে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় বাড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীকে একঘরে করতে চাইছেন সনিয়া গাঁধী। এবং এর মধ্যে দিয়েই তাঁর দূরের লক্ষ্য, সরকার-বিরোধী বিভিন্ন বিষয়কে সামনে এনে এই দলগুলির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা, যাতে পরের লোকসভা ভোটে তা কাজে আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সংসদে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় বাড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীকে একঘরে করতে চাইছেন সনিয়া গাঁধী। এবং এর মধ্যে দিয়েই তাঁর দূরের লক্ষ্য, সরকার-বিরোধী বিভিন্ন বিষয়কে সামনে এনে এই দলগুলির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা, যাতে পরের লোকসভা ভোটে তা কাজে আসে।

কাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। এই সময়ে কংগ্রেসের এমন প্রয়াস ভেস্তে দিতে সক্রিয় মোদীও। আজ সর্বদল বৈঠকে পণ্য ও পরিষেবা কর(জিএসটি)-সহ বাকি বিলগুলি পাশ করাতে বিরোধীদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। জিএসটি নিয়ে মোদী বলেন, ‘‘কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে না ভেবে দেশের স্বার্থে রাজনীতির উপরে উঠে সবার কাজ করা উচিত।’’

জিএসটি বিল পাশ করানোর চেষ্টায় সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেয়ে কংগ্রেসকে একঘরে করার চেষ্টা করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এই অস্বস্তি কাটাতেই এ বার ইফতার পার্টিও বাতিল করতে হয়েছে সনিয়াকে। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে রাহুলকে সামনে রেখে আঞ্চলিক দলগুলির মাথা হয়ে ওঠাই কংগ্রেস নেত্রীর লক্ষ্য। সংসদের অধিবেশনের মঞ্চটিকে তাই কাজে লাগাতে চান তিনি। মূল্যস্ফীতি বা সাম্প্রদায়িকতার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আগেও আলোচনার দাবি তুলছিলেন সনিয়া, যাতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গোটা বিরোধী জোটকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা যায়। তা পুরোপুরি সফল হয়নি। তবে এ বার অরুণাচল নিয়ে কোর্টের রায় ও বিজেপির গ্রাস কেড়ে সেখানে কংগ্রেসের সরকার গঠন, সনিয়া শিবিরের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বদল বৈঠকে অনেক দলই কংগ্রেসের সুরেই উত্তরাখণ্ড ও অরুণাচলে রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করেছে। তবে অরুণাচল নিয়ে পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে বিজেপিও। দলের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘অরুণাচলে আসল গোলমাল ছিল কংগ্রেসের ভিতরেই। তাদের দল ভেঙেছে। আবার নিজেদের মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে নতুন সরকারও হয়েছে। এখানে বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’’

সর্বদল বৈঠকে কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদরা বলে এসেছেন, তাঁরা সংসদ চলতে দেবেন। কিন্তু ক‌ংগ্রেস সূত্রের মতে, এমন কিছু বিষয়ও সামনে আসতে পারে, যা সরকার মেনে না নিলে সংসদ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বৈঠকে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে মোদী সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁর ক্ষোভ, রাজ্যসভায় সংখ্যা নেই বলে সরকার ‘গিভ অ্যান্ড টেক’-এর নীতি নিয়ে চলে। কিন্তু লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় মোদী সরকার গা-জোয়ারি চালিয়ে যেতে থাকে। এটা চলতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে সংসদ চলতে দেওয়া নিয়ে কংগ্রেসের আশ্বাসকে পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না শাসক শিবির। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘অধিবেশন শুরুর আগে সব সময়েই বিরোধীরা সংসদ চলতে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু পরে কোনও না কোনও ছুতোয় হট্টগোল শুরু করে তাঁরা।’’

এর পাশাপাশি, সনিয়ার প্রয়াস এবং বিরোধী শিবিরের আপাত সমঝোতার মধ্যেও আবার থেকে গিয়েছে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা ও অবিশ্বাস। জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধিতার হোতা কে হবে, তা নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির বিবাদ রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব নিয়েও দলের মধ্যে রয়েছে বিতর্ক। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের হাতে বিরোধী জোটের রাশ তুলে দিতে নারাজ অনেক আঞ্চলিক দল। নীতীশ কুমারের মতো নেতারা এই জোটের মুখ হওয়ার দৌড়ে নিজেদের এগিয়ে রাখতে চাইছেন। সমাজবাদী পার্টির এক নেতা আজ বলেন, ‘‘শুনছি বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে গড়াপেটা হয়েছে। কংগ্রেসের হাতে অরুণাচল দিয়ে বিজেপি আসলে জিএসটি পাশ করিয়ে নিতে চাইছে।’’ পশ্চিমবঙ্গে ‘জোট’ গড়ে ভোটে লড়লেও সীতারাম ইয়েচুরির গলাতেও ছিল একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘সরকার জিএসটি নিয়ে শুধু কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলছে। ওদের মধ্যে এটা ম্যাচ গড়াপেটা।’’ জিএসটি নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকার জন্য মোদী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। অরুণ জেটলি আশ্বাস দিয়েছেন, সব দলের সঙ্গে এক বার আলোচনার পর, বিল পেশের আগে সর্বদল বৈঠক করা হবে।

তবে বিজেপি নেতৃত্বের এখন সব থেকে বড় লক্ষ্য হল, কংগ্রেসকে পুরোপুরি কোণঠাসা করে দেওয়া, যাতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। দলের এক নেতার ব্যাখ্যা, রাজ্যসভার সাম্প্রতিক ভোটে বিজেপির শক্তি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে সরকারকে আজও কংগ্রেসের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হয়। এই কারণেই বেঙ্কাইয়া নায়ডু, রাজীবপ্রতাপ রুডির মতো নেতাদের সংসদীয় মন্ত্রক থেকে সরিয়ে অনন্ত কুমার, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মতো মুখকে আনা হয়েছে। যাতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো যায় এবং তার ফলে কংগ্রেসের ওপর নির্ভরশীলতা কমে।

opposition party congress sonia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy