Advertisement
০৭ মে ২০২৪

যুদ্ধ ভুলে গিয়ে খোশ গল্পে যুযুধানরা

দিন দশেক আগে তাঁর রায়ের বিরুদ্ধেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেসের পঁচিশ জন সাংসদকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে গর্জে উঠে লোকসভা বয়কট করেছিলেন।

রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

দিন দশেক আগে তাঁর রায়ের বিরুদ্ধেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেসের পঁচিশ জন সাংসদকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে গর্জে উঠে লোকসভা বয়কট করেছিলেন। তার পর টানা চার দিন ধর্নাও দিয়েছিলেন সংসদ চত্বরে। কংগ্রেস সভানেত্রী যে এতটা আক্রমণাত্মক হতে পারেন, সেই বুঝি প্রথম বার দেখা গেছিল!

অথচ রাজনীতির ফ্রেমের বাইরে সেই রাগী মুখটা বেমালুম হারিয়ে গেল আজ! স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানে দেখা গেল, অশোক হলের এক কোণে পরস্পরের হাত ধরে খোশ গল্প করছেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ও সনিয়া গাঁধী। অফ হোয়াইট শাড়ি পরেছিলেন সনিয়া। গলায় মুক্তোর মালা। সুমিত্রা মহাজনও প্রায় একই রকম সেজেছেন। শাড়িতে হাল্কা গোলাপি পাড়। দু’জনেরই এক মুখ হাসি!

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নিমন্ত্রণে ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি-সহ মন্ত্রিসভার সব গুরুত্বপূর্ণ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। আবার সনিয়া-মনমোহন, গুলাম নবি আজাদ-সহ কংগ্রেসের নেতাদেরও সেখানে দেখা যায়। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় সুষমা স্বরাজেরও। রাহুল গাঁধী অবশ্য ছিলেন না। ফলে সংসদে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর সুষমা-রাহুল মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারত, সেই ছবিটা অধরাই থেকে গেল! তবে ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার ও উপ-রাজ্যপাল নাজিব জঙের সঙ্গে কেজরীবালের চলতি রাজনৈতিক বিবাদের কথা সুবিদিত। মজার ব্যাপার হল, সেই কেজরীবালকেই আজ দেখা যায় নাজিব জঙকে ডেকে গল্প করতে। পরে মোদীর সঙ্গেও কথা হয় কেজরীবালের। আবার রাজ্যসভার নেতা ও বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি-গুলাম নবি আজাদকেও খোশমেজাজে গল্প করতে দেখা যায়।

সংসদে রাজনৈতিক লড়াইয়ের ছবিটার তুলনায় আজকের সন্ধ্যার ছবিটা একেবারেই ভিন্ন মেরুতে ছিল। রাজনীতিকদের মতে, আসলে এটাই সুস্থ রাজনীতির দস্তুর। গুলাম নবি আজাদের কথায়, ‘‘এখানে কেউ তো কারও শত্রু নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। মতান্তর ও অবস্থানগত ফারাক রয়েছে। কিন্তু সামাজিক স্তরে দেখা হলে এক সঙ্গে চা খেতে আড্ডা মারতে অসুবিধা কোথায়?’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ছবিটা কি অদূর ভবিষ্যতে সংসদে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে? সংসদের সম্প্রতি বাদল অধিবেশনের গোটাটাই ধুয়ে গেছে। তবে বাদল অধিবেশন এখনও পুরোপুরি মুলতবি না করে দিয়ে এখনও জিইয়ে রেখেছে সরকার। জেটলিরা চাইছেন, বিশেষ অধিবেশন ডেকে পণ্য পরিষেবা কর বিল সংসদে পাশ করাতে। তবে তার আগে জল মাপতে চাইছে বিজেপিও। বিশেষ অধিবেশনও হট্টগোলের মুখোমুখি হলে তা ডেকেও লাভ নেই। এই অবস্থায় বিরোধী দল তথা কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চাইছেন জেটলিরা। সে দিক থেকে আজকের সন্ধ্যার মেলামেশাটা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।

যত দূর ‘অ্যাট হোম’ প্রসঙ্গ, আগের বছরগুলির তুলনায় এ বার নিমন্ত্রিতের সংখ্যাও ছিল বেশি। প্রণববাবুর মতই হল, রাষ্ট্রপতি ভবনকে আরও বেশি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া। শিল্পী, বণিক, রাজনীতিক, বিশিষ্টজন, আমলা, সেনা অফিসার, কূটনীতিক-সহ প্রচুর অতিথির সমাগম হয়েছিল বৃষ্টি উপেক্ষা করে। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু গোটা রাইসিনা পাহাড় এ বার আলোর মালায় সাজানোও হয়েছে সযত্নে। প্রসঙ্গত, প্রজাতন্ত্র দিবসেই সাধারণত এমন সাজগোজ হয়, স্বাধীনতা দিবসে এতটা সাজগোজের নজির নেই।

তবে এ সবের মাঝে কোথাও যেন মন খারাপও ছিল। দৃশ্যতই মনমরা দেখাচ্ছিল প্রণববাবুকে। রাইসিনার অন্দরমহলেরও মন ভাল নেই। কারণ, প্রণববাবুর স্ত্রী এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে । কিন্তু সরকারি নিয়ম কানুন, প্রথা কি সে কথা শোনে? তাই ‘অ্যাট হোম’ হল। অতিথি অভ্যাগতদের সঙ্গে সন্ধ্যায় অনেকটা সময় কাটাতেও হল রাষ্ট্রপতিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE