বিজেপির করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা সভাপতির নাম প্রায় চূড়ান্ত। আটকে রয়েছে কাছাড়। আজ রাজ্যের ১৮টি জেলা-প্রধানের নাম চূড়ান্ত করেছে দলের কোর কমিটি। দু’-তিনদিনের মধ্যে তাঁদের নাম ঘোষণা করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান সভাপতি কৌশিক রাইকে আরও একবার জেলার দায়িত্ব দেওয়া হবে, নাকি নতুন কাউকে সভাপতি করা হবে—এ নিয়েই কাছাড়ের দ্বন্দ্ব মিটছে না। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল পরিমল শুক্লবৈদ্যকে পূর্ত দফতরের দায়িত্ব দেওয়ায় সংগঠনে তাঁর গুরুত্বও বেড়েছে। কিন্তু ধলাইয়ের চারবারের বিধায়ক পরিমলবাবুর নিজস্ব কোনও গোষ্ঠী নেই। কাছাড়ে বিজেপি মূলত দু’টি শিবিরে বিভক্ত। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ ও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল এক দিকে। অন্য দিকে, রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় ও বর্তমান জেলা সভাপতি কৌশিক রাই। কবীন্দ্রবাবুকে পরিমলবাবু তাঁর রাজনৈতিক গুরু হিসেবে প্রকাশ্যেই স্বীকৃতি দেন। সামনে-পিছনে তাঁকে ‘স্যার’ বলেই সম্বোধন করেন। অন্য দিকে, বিভিন্ন সময়ে দিলীপবাবুকে কোণঠাসা করতে রাজদীপ-কৌশিক গোষ্ঠী পরিমলবাবুকেই সামনে এগিয়ে দিয়েছেন। তবে পরিমল শুক্লবৈদ্য কখনও কোন্দলে নিজেকে জড়াননি। তাঁর সমর্থন বা বিরোধিতা সব সময়েই ইস্যুভিত্তিক।
এবার জেলা সভাপতি নির্বাচনে পরিমল শুক্লবৈদ্যের ইস্যুভিত্তিক সমর্থনই রাজদীপ গোষ্ঠীকে মুশকিলে ফেলে দিয়েছে। অন্যদের সঙ্গে এ বার সভাপতি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন উদয়শঙ্কর গোস্বামীও। পরিমলবাবুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের। কবীন্দ্র-দিলীপ শিবির এবার এটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন। জেলা সভাপতি পদে তাঁদের প্রথম পছন্দের প্রার্থী ছিলেন সঙ্ঘ-অনুগত শান্তনু নায়েক। কবীন্দ্রবাবুর ছেলে কণাদ পুরকায়স্থও এই পদের জন্য আগ্রহী ছিলেন। তবে এই শিবির স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, উদয়শঙ্কর গোস্বামীকে সভাপতি করা হলে তারা মেনে নিতে তৈরি।
অন্য দিকে, রাজদীপ রায় সাংগঠনিক নির্বাচনেরও রাজ্য পর্যায়ের রিটার্নিং অফিসার। জেলা সভাপতি মনোনয়নের সিদ্ধান্ত যে পর্যায়ে চূড়ান্ত হচ্ছে, সেই কোর কমিটিরও সদস্য তিনি। ফলে তাঁকে গুরুত্ব না দিয়ে পরিমলবাবুর দাবি মেনে নেওয়াও নেতৃত্বের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে উদয়শঙ্কর গোস্বামীর বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলকে তরুণতর করার লক্ষ্যে যখন নরেন্দ্র মোদী, সর্বানন্দ সোনোয়ালরা এগোচ্ছেন, সেই সময় সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে কি জেলা কমিটির সভাপতি করা সমীচীন হবে! এই সব নানা প্রশ্ন ও সমীকরণে আটকে রয়েছে কাছাড়ের সভাপতি মনোনয়ন।
তবে মুখে ‘সাংগঠনিক নির্বাচন’ বললেও বিজেপি নেতৃত্ব ভোটাভুটির রাস্তায় হাঁটতে নারাজ। তাই চলছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় কাউকে দায়িত্ব প্রদানের কৌশলও গ্রহণ করা হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অবশ্য সেখানেও জটিলতা কম নয়। সূত্রটি জানিয়েছেন, কৌশিক রাইকে সরাতেই হবে, কবীন্দ্র-দিলীপ শিবিরের এই জোরালো দাবির মুখে রাজদীপ গোষ্ঠী বিকল্প হিসেবে সামনে আনছে বিমলেন্দু রায়কে। অন্য দিকে, পরিমল শুক্লবৈদ্য দ্বিতীয় নামে আগ্রহ প্রকাশ না করলেও কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, দিলীপ পালরা জানিয়ে দিয়েছেন, বয়সের দরুন উদয়শঙ্কর গোস্বামীকে সভাপতি না করা হলে শান্তনু নায়েককেই যেন বাছাই করা হয়।
রিটার্নিং অফিসার রাজদীপবাবু আজ স্বীকার করেছেন, ১৮টি জেলা কমিটির সভাপতির নাম কোর কমিটি মোটামুটি চূড়ান্ত করেছে। তবে এর মধ্যে হাইলাকান্দি-করিমগঞ্জও রয়েছে কিনা তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে চাননি। শুধু জানান, দু-চারদিনের মধ্যেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। জেলা পর্যায়েই সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। আর কাছাড়ের গোষ্ঠী-বিভাজনের কথা তিনি অস্বীকার করেন। ডেপুটি স্পিকার দিলীপ পাল এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আশা করছি, কাছাড় জেলা সভাপতি নামও শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy