আগামিকাল শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহ। প্রথম সপ্তাহের গোটাটাই ভেস্তে যাওয়ার পরে অবশেষে আগামিকাল থেকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা শুরু হতে চলেছে লোকসভায়। আর রাজ্যসভায় মঙ্গলবার থেকে ওই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, বিরোধীদের চাপে পড়ে অবশেষে সংসদের উভয় কক্ষে সিঁদুর নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। অন্য দিকে সরকারের দাবি, গোড়া থেকেই সরকার সব বিষয়ে আলোচনায় রাজি ছিল। কিন্তু বিরোধীদের কারণে তা শুরু করা যায়নি।
গোড়া থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীরা। আজ এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, অপারেশন সিঁদুর হঠাৎ করে থেমে যাওয়ার পর থেকেই ওই বিষয়টিনিয়ে আলোচনার দাবিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিয়ে সরব ছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। ঠিক কী কারণে ওই আলোচনা হতে চলেছে এবং কংগ্রেস কোন বিষয়গুলি নিয়ে সরকারের কাছে জানতে চাইবে তা নিয়ে রমেশ জানান, গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। হামলাকারী জঙ্গিরা এখনও ধরা পড়েনি। কংগ্রেসের দাবি, শোনা যাচ্ছে ওই জঙ্গিরা অতীতে পুঞ্চ ও গুলমার্গ হামলার পিছনে ছিল। ওই জঙ্গিরা কোথায় হারিয়ে গেল তা নিয়ে সরকারের উপর চাপ বাড়াবে দল। অপারেশন সিঁদুর শেষের পরে একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়। যাতে অনুপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়গুলি তোলা হয়। কেন প্রধানমন্ত্রী তাতে ছিলেন না তা নিয়েও সরব হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেসের।
সংঘাতের পর থেকেই বিভিন্ন সেনাকর্তার মুখে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে ভিন্ন ধরনের তথ্য সামনে এসেছে। জয়রামের কথায়, গত ৩০ মে সিঙ্গাপুরে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান স্বীকার করে নেন, সংঘাতের সময়ে প্রথম দু’দিনে ভারতীয় সেনা একাধিক ভুল করেছিল। যার জন্য একাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয় ভারতের। পরবর্তী সময়ে ইন্দোনেশিয়াতে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস কর্মী সেনাকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন শিবকুমার স্বীকার করে নেন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে অপারেশন সিঁদুর বেশ ভাল রকম প্রভাবিত হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল। তিনি একাধিক ভারতীয় বিমান ধ্বংস হওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া গত ১৪ জুলাই জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হা স্বীকার করে নেন গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণেই পহেলগাম হামলা হয়েছিল। কেন ওই গোয়েন্দা ব্যর্থতা, কাদের দোষে ওই ব্যর্থতা হয়েছিল তা নিয়ে বিশদে আলোচনা দাবি করেছে কংগ্রেস।
প্রশ্নের মুখে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকাও। গত ১০ মে থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড এখন পর্যন্ত ২৬ বার ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ থামানোর পিছনে তাঁর যে হাত ছিল সেই দাবি করে এসেছেন বলে দাবি করেছেন জয়রাম। কংগ্রেসের অভিযোগ, আমেরিকা এও হুমকি দেয়, ভারত অবিলম্বে যুদ্ধ না থামালে বাণিজ্য চুক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। বিষয়টিগুলির পিছনে সত্যতা কতটা রয়েছে তা নিয়ে সংসদে সরকারের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে কংগ্রেস।
অন্য দিকে শাসক শিবিরের দাবি, সরকার গোড়া থেকেই আলোচনায় রাজি ছিল। কিন্তু বিরোধীদের কারণে ওই আলোচনা শুরু করা হয়নি। আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া আলোচনায় শাসক শিবিরের পক্ষে অংশ নেবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর, নিশিকান্ত ঠাকুরেরা। আলোচনার সময়ে সংসদের উভয় কক্ষে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)