জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই আবহে দাঁড়িয়ে কী ভাবে নিজেদের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেওয়া যায়, আজ দিনভর সেই রণকৌশলে ব্যস্ত থাকলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আগামিকাল শাসক শিবিরের পক্ষে প্রথম ভোট যেখানে নরেন্দ্র মোদী দেবেন বলে শোনা যাচ্ছে, তখন উল্টো দিকে কংগ্রেসের চিন্তা বাড়িয়েছে রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতি। ভোট শেষ হওয়ার আগে তিনি মালয়েশিয়া সফর থেকে ফিরে আসবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইন্ডিয়া মঞ্চের মধ্যেই। এ দিকে তেলঙ্গানার বিআরএসের পরে ওড়িশার বিজেডি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটে অংশ নেবে না বলে আজ জানিয়ে দিয়েছে।
স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখিয়ে জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে। আগামিকাল তাঁরই উত্তরসূরি বেছে নিতে নির্বাচন। সেখানে মুখোমুখি এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন ও ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি। লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদ মিলিয়ে এনডিএ-র পক্ষে রয়েছে ৪৩৬টি ভোট। ইন্ডিয়া-র পক্ষে রয়েছেন ৩২৪ জন সাংসদ। হিসাবই বলে দিচ্ছে, একজন প্রার্থীকে জিততে হলে ন্যূনতম যে ভোট (৩৯১টি)-এর প্রয়োজন, তা পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় রাধাকৃষ্ণনের। তা সত্ত্বেও আজ দিনভর বিএসপি, শিরোমণি অকালি, মেঘালয়ের ভিপিপি, মিজোরামের জেডপিএমের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত রইল শাসক শিবির। সব মিলিয়ে এনডিএ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৪৪০ ছাড়িয়ে যাবে বলেই আশা করছে বিজেপি।
প্রথম বারের সাংসদেরা যাতে ভোট দিতে ভুল না করেন, সে জন্য আজও ভোটের মহড়ায় অংশ নেন বিজেপি-সহ এনডিএ সাংসদেরা। ক্রস ভোটিং-এর সম্ভাবনা রুখতে ঠিক হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নেতৃত্বে দল বেঁধে এসে ভোট দেবেন। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার সাংসদদের নেতৃত্ব দেবেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তেমনই গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়ের সাংসদের নেতৃত্বে থাকছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনসুখমাণ্ডবীয় ও শিবরাজ সিংহ চৌহানেরা। এর মধ্যে বিপক্ষের প্রার্থী সুদর্শন রেড্ডি একজন অবসরপ্রাপ্তবিচারপতি হয়ে কী করে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি লালু প্রসাদের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে পারলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘রেড্ডি এক দিকে সাংসদদের বিবেকের ডাকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন। অথচ, তিনি নিজে একজন অপরাধীর কাছে ভোটচাইতে গেলেন!’’
সংখ্যার লড়াইয়ে পরাজয় অনিবার্য। কিন্তু আরএসএস-এর ভাবধারার সঙ্গে সংবিধান ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ের বার্তা দেওয়াটাই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের লক্ষ্য। বিরোধীদের হিসাবে ১১০-১২০ ভোটের ব্যবধান থাকবে। বিআরএস ভোটাভুটিতে যোগ দেবে না, এমনটা আগেই জানা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিজেডি-রও ভোটে যোগ না দেওয়ার বিষয়টকে নৈতিক জয় বলেই ধরা হচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, বিজেডি ও বিআরএস-এর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আগাগোড়া কথা চালিয়েছে তারা।
তবে ইন্ডিয়া মঞ্চের সব ভোট যে তাদের পক্ষেই থাকবে, এমনটানা-ও হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনা এড়ানো যাচ্ছে না। সন্দেহের তির উদ্ধবপন্থী শিবসেনার দিকে। মনে করা হচ্ছে, ৩-৪ জন সাংসদ যাঁরা একনাথ শিন্দের দিকে যেতে পা বাড়িয়ে রয়েছেন, তাঁরা এনডিএ-র পক্ষে ভোট দেবেন। একই ভাবে আপ-এর রাজ্যসভার ১০ জনের মধ্যে একাধিক সাংসদের শাসকদলের পক্ষে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)