E-Paper

কাশ্মীরে জইশের পোস্টারই সন্ত্রাসের সূত্র

সোমবার হরিয়ানার ফরিদাবাদে জইশ-ই-মহম্মদ এবং আনসার গজওয়াতুল হিন্দ-এর একটি বড় চক্র ভেঙে দেওয়ার পরে পুলওয়ামায় ব্যাপক অভিযানে নামে নিরাপত্তা বাহিনী। গ্রেফতার করা হয় পুলওয়ামার কৈল এলাকার চিকিৎসক মুজ়াম্মিল শাকিল ওরফে মুসাইব-সহ বেশ কয়েক জনকে।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:২০
দিল্লিতে বিস্ফোরণের জেরে জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শ্রীনগরে। মঙ্গলবার।

দিল্লিতে বিস্ফোরণের জেরে জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শ্রীনগরে। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

শ্রীনগরের নওগামে জইশ-ই-মহম্মদ-এর পোস্টারই ছিল সূত্র। সেই সূত্র ধরেই তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বার করেছেন গোয়েন্দারা। উন্মোচিত হয়েছে সন্ত্রাসবাদের ফরিদাবাদ মডিউল।

গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়। ‘অপারেশন মহাদেব’-এর নেতৃত্বে থাকা জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এসএসপি জি ভি সুন্দীপ চক্রবর্তীর নজরে পড়ে জইশ-ই-মহম্মদ-এর ওই পোস্টারগুলি। তাতে নিরাপত্তাবাহিনীকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ওই অফিসারই প্রশ্ন তোলেন, ওই পোস্টারগুলি কে বা কারা লাগাল! শুরু হয় তল্লাশি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দু’জনকে আটক করা হয়। যারা ওই পোস্টারগুলি লাগিয়েছিল, অতীতে তাদের বিরুদ্ধে পাথর ছোড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল শোপিয়ানের এক ধর্মগুরু মৌলবি ইরফান আহমদের কাছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহের জিজ্ঞাসাবাদের পরে ইরফান জানান, জইশের ষড়যন্ত্রের কথা। যার যোগসূত্র ধরে জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে একের পর এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যায়, এই পোস্টারগুলি ফরিদাবাদ থেকে পরিচালিত একটি সেলের মাধ্যমে আনা হয়েছে।’’

সোমবার হরিয়ানার ফরিদাবাদে জইশ-ই-মহম্মদ এবং আনসার গজওয়াতুল হিন্দ-এর একটি বড় চক্র ভেঙে দেওয়ার পরে পুলওয়ামায় ব্যাপক অভিযানে নামে নিরাপত্তা বাহিনী। গ্রেফতার করা হয় পুলওয়ামার কৈল এলাকার চিকিৎসক মুজ়াম্মিল শাকিল ওরফে মুসাইব-সহ বেশ কয়েক জনকে। তদন্তদকারীদের মতে, ধৃতেরা ‘হোয়াইট কলার জঙ্গি নেটওয়ার্কের অংশ’। যাঁরা সামাজিক ও পেশাগত পরিচয়কে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসবাদীকাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ, তরুণদের নিয়োগ করত।

গত কাল লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণের পরে পুলওয়ামা জুড়ে ব্যাপক তল্লাশি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। ছ’জনকে আটক করে তারা। তার মধ্যে তিন জন পুলওয়ামার কৈল গ্রামের বাসিন্দা চিকিৎসক উমর-উন-নবীর আত্মীয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সে নিখোঁজ। তার সন্ধানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিবারের তিন জন সদস্যকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া এক জন কল-মিস্ত্রী আমির রসিদ মির, রাজ্যের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের কর্মী উমর রসিদ মির এবং জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষী তারিক মালিককে আটক করা হয়। পুলিশের এক উচ্চপদস্থ অফিসার বলেছেন, ‘‘জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

কৈল গ্রামের আর এক বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক মুজ়াম্মিল শাকিলকে ফরিদাবাদে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে উমরের ঘনিষ্ঠতার খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান, উমর গোষ্ঠীটির জন্য অর্থ সরবরাহ ও যানবাহন সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার গোয়েন্দা-বার্তার প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি উপত্যকা জুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। পুলওয়ামা, শোপিয়ান, অনন্তনাগ ও গান্ডেরবাল-সহ একাধিক জেলায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০০-রও বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই অতীতে পাথর ছোড়ার অভিযোগে জড়িত ছিলেন বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে সন্দেহ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Delhi Blast terror attack Jammu and Kashmir

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy