বিহারে ফের ক্ষমতায় এলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন এনডিএ জোটের? বিজেপির আসন সংখ্যা জেডিইউ-এর থেকে বেশি হলে কি বিজেপি প্রশাসনিক প্রধানের পদ দখলের ক্ষেত্রে অগ্রণী হবে? আজ পটনায় একটি সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এমন সব প্রশ্নের মুখে অমিত শাহ কিন্তু সংশয় রেখে দিলেন। বললেন, ‘‘নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে আমরা ভোটে লড়ছি। জেতার পরে সব শরিক মিলে সিদ্ধান্ত নেবে, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন।’’
সূত্রের মতে, আজ সন্ধ্যায় পটনা পৌঁছন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাতে যান দলীয় দফতরে। সেখানে মাঝ রাত পর্যন্ত কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আগামিকাল সকালে নীতীশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে শাহের। তার পরেই ছাপরায় সভা করতে যাবেন তিনি। বিহারের উত্তরাংশে দলের অবস্থা ভাল নয়। সূত্রের মতে, রাতের বৈঠকে উত্তর বিহারে কী ভাবে এনডিএ-র ফলাফল গতবারের চেয়ে ভাল হতে পারে, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন শাহের। তাঁর দেওয়া পরামর্শের ভিত্তিতে দীপাবলিকে সামনে রেখে আরও বেশি করে আমজনতার কাছেপৌঁছনোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা।
দলের বৈঠকের আগে একটি সংবাদসংস্থার অনুষ্ঠানে যান শাহ। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এনডিএ জিতলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। শাহ বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে ঠিক করার আমি কেউ নই।’’ তার পরেই জানান, নীতীশের নেতৃত্বে জোট লড়ছে। এবং একই সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘জিতলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেব, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে সামনে রেখেই এনডিএ জোট নির্বাচনে লড়ছে। তা হলে কি এনডিএ জিতলে নীতীশের ভাগ্যে আর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি জুটবে না? গত বেশ কয়েক মাস ধরেই নীতীশের স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা চলছে বিহারের রাজনৈতিক মহলে। পাশাপাশি, বিভিন্ন সময়ে নীতীশ যে জোট বদল করেছেন, তাতেও বিজেপির কাছে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। এই অবস্থায় শাহের এমন মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এর পরে যখন প্রশ্ন করা হয়, বিজেপি জেডিইউ-এর থেকে বেশি আসন পেলে কি শাহেরা মুখ্যমন্ত্রীর পদ দাবি করবেন, তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখনও তো আমাদের বিধায়ক সংখ্যা জেডিইউ-এর থেকে। আমরা কি মুখ্যমন্ত্রী পদ দাবি করেছি?’’
নীতীশ অবশ্য আজ পুরোদস্তুর প্রচারে নেমে পড়েছেন। এ দিন সমস্তিপুরের সরায়রঞ্জন এলাকায় একটি জনসভায় লালুপ্রসাদ-রাবড়ী দেবীর সময়কালে বিহারের পরিস্থিতি তুলে ধরে নীতীশ বলেন, ‘‘আমাদের সরকার আসার আগে লোকে সন্ধ্যার পরে ঘর থেকে বের হত না। প্রায়শই হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সংঘাত লেগে যেতে। স্কুল ছিল না। ছিল না শিক্ষক।’’ নীতীশের দাবি, তিনি ক্ষমতায় এসে প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নতি ও পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার যে উন্নয়নের কাজে পাশে ছিল, তারও উল্লেখ করেন তিনি।
বিজেপি এ দিন তাদের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রচারে নামায়। আজ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ছাড়াও দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করেন। নীতীশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বললেও যোগী সেই প্রসঙ্গই টেনে আনেন প্রচারে। দাবি করেন, ‘‘আরজেডি-কংগ্রেসের বিকাশ নয়, বোরখা চাই। যাতে দেশের সর্বনাশ নিশ্চিত হয়। ভোট চুরি সম্ভব হয়।’’
দক্ষিণ বিহারে বিজেপি তথা এনডিএ জোটের পরিস্থিতি আশানরূপ হলেও, উত্তর বিহারে ভাল ফলের লক্ষ্যে কোমর কষে প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস-আরজেডি জোট। উত্তর বিহারে যে দলের প্রস্তুতি ভাল নেই, তা বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই আজ থেকে তিন দিনের সফরে অমিত শাহের পাখির চোখ হতে চলেছে উত্তর বিহার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)