যথাসময়ে ফিরে এল সেই প্রখ্যাত ‘অ্যালার্জি’!
নয়াদিল্লির সুনেহরি বাগে রাহুল গান্ধীর নতুন বাংলোয় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এবং তৃণমূলের মধ্যে দেখা গিয়েছিল অভিনব উষ্ণতা। বাংলা ভাষাভাষীদের হেনস্থা, ভোটার তালিকার নিবিড় পর্যবেক্ষণ, উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর মতো বিষয়গুলি নিয়ে বাদল অধিবেশন জুড়ে এই দু’দলের সমন্বয় ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মসৃণ।
নাটকীয় ভাবে সেই তাল কেটে গেল অধিবেশেন শেষ দু’দিনে। আর সংসদ শেষ হওয়ার পর প্রকাশ্যেই চলে এসেছে তৃণমূলের পুরনো ‘অ্যালার্জি’। কংগ্রেসকে দূরে রেখে বিরোধীদের মধ্যে ‘জিঞ্জার’ গোষ্ঠী তৈরির রাজনৈতিক সক্রিয়তাও ফের দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাকে ফোন করে অনুরোধ করেছিলেন অগস্টের শেষ সপ্তাহে রাহুল গান্ধী-তেজস্বী যাদবের বিহারে ভোটাধিকার যাত্রায় কোনও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে পাঠাতে। তৃণমূল তাদের অসম্মতি জানিয়ে দিয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর পটনার সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজেই অনুরোধ করেছিলেন রাহুল। অভিষেক অথবা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই সমাবেশে থাকার আমন্ত্রণ ছিল রাহুল-তেজস্বীর তরফে। তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের খবর, ওই সম্মেলনে মমতার যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অভিষেক নিজে যাবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
গতকালই বিবৃতি দিয়ে তৃণমূল এবং এসপি নেতা অখিলেশ যাদব জানিয়ে দিয়েছিলেন, মন্ত্রীদের অপসারণ নিয়ে আনা তিনটি নতুন বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে যোগ দেবেন না তাঁরা। আজ এই যোগ না দেওয়ার দলে ভিড়ল আপ-ও। দলের নেতা সঞ্জয় সিংহ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে একটি বার্তা পোস্ট করে জানিয়েছেন, ‘‘এই বিল অগণতান্ত্রিক। বিপক্ষ মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ মামলা করে তাদের গরাদে ভরে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলই উদ্দেশ্য। আদৌ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই বিল আনা হয়নি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বিল সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটিতে যোগ দেব না।’’ সূত্রের দাবি, শিবসেনার উদ্ধব গোষ্ঠীও সম্ভবত যৌথ কমিটিতে যোগ দেবে না। আজই তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, ‘‘এই যৌথ সংসদীয় কমিটি সম্পূর্ণ মূল্যহীন। আমরা আগেই জানিয়ে দিয়েছি এতে যোগ দেব না।’’ তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, বিরোধী পক্ষের তিনটি দল যোগ না দেওয়ায় কমিটিতে বিরোধীদের অন্তত ৫ জন (দলগুলির আসন সংখ্যার অনুপাতে) সদস্য কম থাকবে। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বিরোধীদের মতপার্থক্যে কংগ্রেস ওই যৌথ কমিটিতে একলা হয়ে পড়বে।
প্রশ্ন উঠছে, গত এক মাসের মধুচন্দ্রিমার পর তৃণমূল কেন আবার কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে? দলীয় সূত্রের বক্তব্য, এই নতুন তিনটি বিল নিয়ে তৃণমূল লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সাসপেন্ড হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও ওয়েলে নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গলা ফাটিয়ে গিয়েছে। তখন পাশে কংগ্রেসকে পাওয়া যায়নি। তৃণমূলের বক্তব্য, সকালে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের ঘরে কংগ্রেস কথা দিয়েছিল যে, একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়া হবে ওয়েলে। কথা তারা রাখেনি নিজেদের আসন থেকে এই বিল নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার ‘লোভে’। আসনে দাঁড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে বিলটি ছিঁড়েই কংগ্রেস তাদের প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ রেখেছিল শেষ দিন রাজ্যসভায়। তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, কংগ্রেসের এই আচরণ তাঁরা ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি এটাও বলা হচ্ছে, রাহুল গান্ধীর বাংলোয় নৈশভোজের পর যে ১৩ জন নেতাকে নিয়ে ভিতরের ঘরে বৈঠক হয়েছিল (যাতে উপস্থিত ছিলেন অভিষেকও), সেখানে অগস্টের শেষ সপ্তাহে যাত্রায় যোগ দেওয়ার কোনও প্রস্তাবই দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ১ সেপ্টেম্বরের জনসভার আমন্ত্রণই করা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে নতুন প্রস্তাব দিলেই দৌড়নো তৃণমূলের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ‘না’ বলে দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই কারণগুলি নিছকই মোড়ক মাত্র। সংসদীয় অধিবেশনে এসআইআর-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতার প্রয়োজন ছিল দিল্লি থেকে। অধিবেশন শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বার পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মেজাজে ফিরছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। রাজ্যে কংগ্রেস তৃণমূলের নির্বাচনী শরিক নয়, ছাব্বিশেও তা হওয়ার সম্ভাবনা এখনও গভীর জলে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)