Advertisement
E-Paper

যাদব বংশে মুষলপর্ব, সব নজর আজ মুলায়মের দিকে

ইটের বদলে পাটকেল, পাটকেলের বদলে আধলা! যাদব বংশে মুষলপর্ব চরমে পৌঁছলো আজ! বাবা-ছেলে ও তাঁদের ঘিরে সৎমা, সৎভাই, সম্পর্কিত ভাই আর ‘অমর’ কিছু চরিত্র! ক্ষমতার উত্তরাধিকার নিয়ে এদের মধ্যে সংঘাতের অজস্র কাহন রয়েছে ইতিহাস-পুরাণে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৮

ইটের বদলে পাটকেল, পাটকেলের বদলে আধলা! যাদব বংশে মুষলপর্ব চরমে পৌঁছলো আজ!

বাবা-ছেলে ও তাঁদের ঘিরে সৎমা, সৎভাই, সম্পর্কিত ভাই আর ‘অমর’ কিছু চরিত্র! ক্ষমতার উত্তরাধিকার নিয়ে এদের মধ্যে সংঘাতের অজস্র কাহন রয়েছে ইতিহাস-পুরাণে। উত্তরপ্রদেশের যাদবকুলে চলছে তেমনই এক ধুন্ধুমার লড়াই।

সদ্য গত কালই ছেলে অখিলেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী উদয়বীর সিংহকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বাবার বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিলেন কাকা শিবপাল সিংহ যাদবকে। শিবপাল দলের উত্তরপ্রদেশ শাখার সভাপতি। মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত হওযার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিলেন তাঁরই সম্পর্কিত ভাই রামগোপাল যাদবকে। অভিযোগ, সমাজবাদী পার্টিকে ডোবাতে তিনি বিজেপির সঙ্গে মিলে চক্রান্ত করছেন। কিছু দিন ধরে মুলায়মের এই সম্পর্কিত ভাইটিই মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের হয়ে সওয়াল করে যাচ্ছিলেন। আজও রামগোপাল জানিয়েছেন, যাদবকুলে এই ‘ধর্মযুদ্ধে’ তিনি অখিলেশেরই পাশে থাকবেন।

এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন মুলায়ম। সকলের নজর এখন সেই বৈঠকের দিকে। পরিবারে ও দলে বিরোধ চরমে উঠলেও ‘নেতাজি’ ওই বৈঠকেই মোক্ষম কোনও চালে সামলে নেবেন সব— এমন আশায় বুক বাঁধছেন মুলায়মের অনুগামীরা। যদিও এ নিয়ে সন্দেহ নেই যে, পারিবারিক ও রাজনৈতিক কোন্দল আজ যে আকার নিয়েছে, তা সমাজবাদী পার্টিতে বিভাজনের লক্ষণ আরও স্পষ্ট করে তুলল। প্রশ্ন উঠে গেল, মুলায়মের দলে ভাঙন কি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা?

যুযুধান

অখিলেশের চাল

• শিবপাল যাদব-সহ চার মন্ত্রী বরখাস্ত।

• ফিল্ম কর্পোরেশন থেকে সরলেন জয়া প্রদা

মুলায়মের পাল্টা

• বহিষ্কৃত রামগোপাল

সোমবার সপা বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক মুলায়মের

উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে এই পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশির হাওয়া বিজেপি শিবিরে। তাদের আশা, সমাজবাদী পার্টিতে ভাঙনের জেরে যদি উত্তরপ্রদেশে মুলায়মপন্থী সংখ্যালঘু ভোটেও ভাঙন ধরে তাতে বিজেপির লাভ। যদি না অবশ্য সেই সংখ্যালঘু ভোটের পুরোটাই মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির দিকে চলে যায়।

চলতি রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রয়েছে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধীরও। মুলায়ম, অমর সিংহকে দুর্বল করে অখিলেশ যদি আলাদা দল গড়েন, তবে কংগ্রেস তার শরিক হতে পারে— এমন প্রস্তাবও গোপন বৈঠকে অখিলেশকে দিয়ে রেখেছেন রাহুল। যার সূত্র ধরে বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি আজ অভিযোগ আনেন, সমাজবাদী পার্টিতে ভাঙনের খেলার পিছনে রয়েছেন রাহুল। তিনি এর থেকে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন।

ভোট-রাজনীতির এই কুরুক্ষেত্রে সংঘাতের বীজটি কী? সমাজবাদী পার্টির অন্দরে অনেকে বলছেন, অর্থই অনর্থের মূলে। কাকা শিবপালই সরকারে থেকে পুরো ‘ক্ষীর’ খেয়ে যাচ্ছিলেন। অখিলেশ তাতে বাদ সাধতেই গোল বেধেছে। মুলায়ম এর পর শিবপালকে প্রদেশ সভাপতি করায় ও ছ’বছর নির্বাসনে থাকা অমর সিংহকে দলে ফেরানোয় বাবা-ছেলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। আগুনে ঘি পড়ে যখন শোনা যায়, অখিলেশের বদলে পরের দফায় শিবপালকেই গদিতে বসাতে চাইছেন মুলায়ম-অমররা। শিবপাল-অমর বনাম অখিলেশ-রামগোপাল— আড়াআড়ি দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে দল। ক্ষোভে অখিলেশ নতুন দল গড়তে পারেন, এমন জল্পনা বাড়তে থাকে। অখিলেশ চিঠি লিখে বাবাকে জানিয়ে দেন, ৫ নভেম্বর দলের রজত জয়ন্তী বর্ষ উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে থাকবেন না। ৩ তারিখ রথ যাত্রায় বেরোবেন। পিতা-পুত্রের এই দ্বন্দ্বের জেরে কাল বিধান পরিষদের সদস্য উদয়বীর সিংহকে দল থেকে বহিষ্কার করেন মুলায়ম। মুলায়মকে লেখা চিঠিতে উদয়বীর অভিযোগ করেছিলেন, অখিলেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন তাঁর সৎমা। আশ্রয় নিচ্ছেন ‘কালা জাদু’-রও!

বাবা উদয়বীরকে বহিষ্কার করতেই তড়িঘড়ি আজ দলের বিধায়কদের বৈঠকে ডাকেন ছেলে। অখিলেশ ঘোষণা করেন, অমর সিংহের ঘনিষ্ঠ কাউকে তিনি মন্ত্রিসভায় রাখবেন না। এর পরই কাকা শিবপাল, নারদ রাই, ওমপ্রকাশ সিংহ, শাহদাব ফতিমা— এই ৪ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার কথা ঘোষণা করেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে অখিলেশ দাবি করেন, ‘নেতাজি’র প্রতি তাঁর পূর্ণ সম্মান রয়েছে। অমর সিংহই নষ্টের গোড়া। তিনিই দলে বিভাজন তৈরি করেছেন। আগুন লাগিয়েছেন তাঁদের পরিবারে। বিধায়করা পরে প্রকাশ্যেই অমর-বিরোধী স্লোগান দেন। এ দিনই অমর-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন সাংসদ তথা অভিনেত্রী জয়া প্রদাকে উত্তরপ্রদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরও আগে আজ সকালে রামগোপাল দলীয় কর্মীদের এক পাতার একটি চিঠি দেন। ভাইপোর হয়ে সওয়াল করে তাতে লেখেন ‘‘অখিলেশের বিরোধিতা করছেন যাঁরা, বিধানসভার মুখই তাঁরা দেখবেন না। যেখানে অখিলেশ, সেখানে বিজয় সুনিশ্চিত।’’

সকাল থেকে এই নাটকের মধ্যেই লখনউয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন সদ্য মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত হওয়া ‘কাকা’ শিবপাল। রামগোপালকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা কথা ঘোষণা করেন সেখানে। অভিযোগ আনেন, বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রামগোপাল ‘নেতাজি’কে দুর্বল করে দেওয়া ও দলের ভরাডুবি ঘটনার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তাঁর আস্কারাতেই দলে কিছু লোক আজকাল আর প্রবীণ নেতাদের সম্মান করেন না।

দলে এই ডামাডোলের মধ্যেই মুলায়মের কাল বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা। তার আগেই চার মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে অখিলেশ আজ বুঝিয়ে দিলেন, আর আপস নয়। এ বার সংঘাতেই যাবেন তিনি। তাঁর এই পদক্ষেপের পর মুলায়মের পক্ষেও চুপ করে থাকা সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। রামগোপালকে বরখাস্ত করাটা সম্ভবত যার সূচনা। এ বার বাবা-ছেলে সরাসরি সংঘাতে গেলে যাঁরা এত দিন দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য লোকদেখানো সন্ধির পরামর্শ দিচ্ছিলেন, তাঁরাও আর পর্দার আড়ালে থাকতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মুলায়মের আগামিকালের বৈঠকটি। ভাঙন ঠেকাতে দলের প্রধান হিসেবে মুলায়ম কী সিদ্ধান্ত নেন, সে দিকে নজর রাখছে বিজেপি-কংগ্রেস।

সূত্রের খবর, অখিলেশের পক্ষ থেকে রামগোপাল ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী পার্টি নামে একটি নতুন দল গড়ার আবেদন করেছেন নির্বাচন কমিশনে। মুলায়মের দলের প্রতীক সাইকেল। এরই পাল্টা মোটরবাইক প্রতীক চিহ্ন চাওয়া হয়েছে নতুন দলের জন্য।

অখিলেশ কি শেষ পর্যন্ত সেই মোটরবাইকে সওয়ার হবেন? নাকি মুলায়মের মোক্ষম কোনও চালে সন্ধি হবে পিতা-পুত্রে, সাইকেলেই থেকে যাবেন অখিলেশ?

উত্তরের অপেক্ষায় উত্তরপ্রদেশ।

আরও পড়ুন: ইতিহাসের পাতায় পিতা বনাম পুত্র

নতুন দল গড়ছেন না, দলীয় বৈঠকে জানালেন অখিলেশ

Samajwadi Party Mulayam Singh Yadav Akhilesh Yadav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy