Advertisement
E-Paper

স্নায়ুর লড়াই চরমে, অনিশ্চিত আলোচনা

দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক শুরু হতে বাকি ছিল আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু নাটকীয় পট পরিবর্তনে সেই বৈঠক ঘিরেই এখন চরম অনিশ্চয়তার মেঘ। এমনকী কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের পাক হাইকমিশনে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে বলেও আজ সন্ধেবেলা রটে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৪
জনসভায় বক্তা কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক। শুক্রবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।

জনসভায় বক্তা কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক। শুক্রবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।

দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক শুরু হতে বাকি ছিল আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু নাটকীয় পট পরিবর্তনে সেই বৈঠক ঘিরেই এখন চরম অনিশ্চয়তার মেঘ। এমনকী কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের পাক হাইকমিশনে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে বলেও আজ সন্ধেবেলা রটে গেল। নয়াদিল্লি সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে বৈঠকের আদর্শ পরিস্থিতি যে আপাতত নেই, সে কথা মানছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা। মোট কথা, বৈঠক ‘বাতিল’— এই কথাটা বলতে নারাজ দু’পক্ষই। চূড়ান্ত স্নায়ুযুদ্ধে একে অন্যের কোর্টে বল ঠেলছে দিল্লি ও ইসলামাবাদ!

গত বছর কাশ্মীরের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গেই পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত বৈঠক করার পর বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। এ বার সচেতন ভাবেই বৈঠক বাতিলের পথে হাঁটেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তবে, গত কাল কাশ্মীরে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য গৃহবন্দি করা হয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের। অনেকের মতে, পাক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরোক্ষে দিল্লি বুঝিয়ে দিয়েছে, শান্তি আলোচনায় সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ উমর ফারুক বা ইয়াসিন মালিকের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কোনও গুরুত্ব নেই।

আজ দিল্লির তরফে সরকারি ভাবে ইসলামাবাদকে জানিয়ে দেওয়া হয়— ১) দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল ও সরতাজ আজিজের বৈঠকে কেবল সন্ত্রাস নিয়েই আলোচনা হবে। ২) ডোভালের সঙ্গে বসার আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন না সরতাজ আজিজ। অর্থাৎ নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কোনও আলোচনায় যে দিল্লির মত নেই, সে কথা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এবং বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ডোভালের সঙ্গে বৈঠকের পর সরতাজ কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কিন্তু মূল বৈঠকে কোনও তৃতীয় পক্ষকে বরদাস্ত করা হবে না।

এই আলোচ্যসূচি ঘিরেই চড়তে শুরু করে উত্তেজনার পারদ। পাকিস্তান পত্রপাঠ জানিয়ে দেয়, দিল্লির এই কথা মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ভারত যে ভাবে ‘একটি বিষয়ের মধ্যে’ আলোচনা সীমাবদ্ধ করতে চাইছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, তারা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক নয়। পাক

বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়, হুরিয়তের সঙ্গে আগেও তাদের নেতারা কথা বলেছেন। তা জারি থাকবে। কারণ, পাকিস্তান মনে করে তাঁরাই কাশ্মীরের প্রকৃত প্রতিনিধি। যার উত্তরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ভারত-পাক সম্পর্কে কোনও তৃতীয় পক্ষ নেই।’’

দিল্লির এই চাপ সত্ত্বেও হুরিয়ত-আজিজ বৈঠকের পুরনো সূচিই বজায় রাখে পাক দূতাবাস। অর্থাৎ, সেই বৈঠক রাখা হয় ডোভালের সঙ্গে বৈঠকের আগেই। ফলে আরও উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। ইতিমধ্যে সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর ছড়িয়ে পড়ে, বৈঠক বাতিল! যে খবর জানতে পেরেই খারিজ করে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, বৈঠক বাতিল করে এখন সাউথ ব্লক তা স্বীকার করতে চাইছে না। গোটা দিনের চাপান-উতোর তত ক্ষণে পুরোদস্তুর দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের চেহারা নিয়েছে। দু’দেশের বিদেশ মন্ত্রকই পরপর বিবৃতি জারি করে। দিল্লি জানায়, ‘উফার বৈঠকের পর থেকে একটি নির্দিষ্ট ছক মেনে এনএসএ পর্যায়ের বৈঠক বাতিলের চেষ্টা করছে পাকিস্তান। আজ তা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। পাক সরকারের এই অবস্থান ভারতকে আদৌ অবাক করেনি।’

বিদেশ মন্ত্রকের অভিযোগ, নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকের বিষয়ে ভারতের প্রস্তাব যাওয়ার ২২ দিন পরে পাকিস্তান তার জবাব দিয়েছিল। তার পর এমন আলোচ্যসূচি তারা স্থির করেছে, যা উফায় মোদী-শরিফ বৈঠকের পুরোপুরি উল্টো। দুই প্রধানমন্ত্রী স্থির করেছিলেন, এনএসএ বৈঠকে কেবল সন্ত্রাসা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু এর মধ্যে হুরিয়তকে টেনে এনে পাকিস্তান দুই প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকেই অসম্মান করছে।

যার উত্তরে পাকিস্তানের দাবি, শর্ত চাপাচ্ছে ভারতই। দুই প্রধানমন্ত্রী সার্বিক আলোচনার কথা বলেছিলেন। যার মধ্যে দু’দেশের মধ্যে বকেয়া সমস্ত বিষয়ই পড়ে। কিন্তু ভারত গত বছরের মতোই ‘ভিত্তিহীন’ যুক্তি দেখিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু কেন এত মরিয়া পাকিস্তান?

দিল্লির কর্তাদের মতে, উফায় মোদী-শরিফ বৈঠকের পর থেকেই একের পর এক ভারত-বিরোধী ঘটনা ঘটে চলেছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক বাহিনীর গোলাগুলির তীব্রতা বেড়েছে, জঙ্গি হামলা হয়েছে পঞ্জাবের গুরুদাসপুর ও জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে। উধমপুর হানায় ধৃত নাভেদের স্বীকারোক্তি-সহ সন্ত্রাসে মদতের বিবিধ সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে অজিত ডোভাল যে তাদের বৈঠকে চেপে ধরবেন, তা জানে পাকিস্তান। তাই যে কোনও ভাবে বৈঠক বাতিল করতে নওয়াজ শরিফ সরকারকে প্রবল চাপ দিচ্ছে পাক সেনা ও আইএসআইয়ের একাংশ। সন্ত্রাস নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চাপে রয়েছে ইসলামাবাদ। সম্প্রতি আফগানিস্তানে জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ না করলে সামরিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে আমেরিকা। তার উপরে দিল্লিতেও মুখ পোড়াতে নারাজ পাক নেতৃত্ব। তাই বৈঠক বাতিলের প্রবল চেষ্টা চলছে। তুলে আনা হচ্ছে একের পর এক অজুহাত।

বস্তুত, নিয়ন্ত্রণরেখায় অশান্তি বা পরের পর জঙ্গি হামলা এই বৈঠক বাতিলেরই ছক বলে মনে করেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, এত কিছুর পরেও বৈঠক বাতিল না হওয়ায় কাশ্মীর-তাস খেলা হয়েছিল মোদী সরকারকে প্ররোচিত করতে। আরও একটা কারণ ছিল। উফায় কাশ্মীরের কথা না বলায় দেশে ফিরে প্রবল সমালোচিত হয়েছিলেন শরিফ। সম্ভবত তাই এ বার কাশ্মীর প্রশ্নে গলা ফাটিয়ে মোল্লাতন্ত্র ও পাক সেনার ক্ষোভ কিছুটা মেটানোর চেষ্টা করছে তাঁর সরকার।

২০১৪-এ বৈঠক বাতিল করে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মোদীও। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই ‘ভুল’ আর করতে চান না তিনি। তা ছাড়া, রাজনৈতিক ভাবেও মোদী সরকারের পক্ষে বৈঠক বাতিল করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই মোদী সরকারের পাক নীতিকে ‘হাসির খোরাক’ বলে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস।

ফলে প্ররোচনা সত্ত্বেও বৈঠক বাতিলের চরম তাসটি খেলতে চান না মোদী। আপাতত যে ভাবেই হোক, সরতাজ আজিজকে আলোচনার টেবিলে আনতেই মরিয়া তাঁর সরকার।

abpnewsletters India Pakistan Kashmir NSA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy