টাকা রয়েছে। কিন্তু খরচ হচ্ছে না।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে বাসের ভিতরে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন জ্যোতি সিংহ। তার পরেই দেশ জুড়ে মহিলাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু হয় নির্ভয়া তহবিল। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে, ওই খাতে বরাদ্দ টাকার খরচই করতে পারছে না রাজ্যগুলি। গত তিন বছরে নির্ভয়া তহবিলের মাত্র ৩০ শতাংশই খরচ হয়েছে! যার জেরে ক্রমশ বরাদ্দ কমানোর রাস্তায় হেঁটেছে কেন্দ্র।
২০১৩ সালে চালু হওয়া তহবিলের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের পরিমাণ ১০০০ কোটি টাকা থেকে কমে ২০১৭-১৮ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৫০ কোটি টাকায়! ঘটনাচক্রে গত ৮ মার্চ রাজ্যসভায় নির্ভয়া ফান্ডের টাকা কোথায় কী ভাবে খরচ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস সাংসদ মাজিদ মেমন। তাতেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ে। সরকার উত্তরে জানায়, ওই খাতে বরাদ্দ খুব কম খরচ হওয়ায় তহবিলে টাকা পড়েই রয়েছে।
মহিলা সুরক্ষা প্রশ্নে সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবের সমালোচনা করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও। দিন কয়েক আগে সংসদে পেশ হওয়া কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরমের নেতৃত্বাধীন স্থায়ী কমিটির রিপোর্টেও বলা হয়, গোটা দেশেই মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আদৌ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না। ফলে মহিলাদের উপরে অপরাধ কমার লক্ষণ নেই। কেন্দ্রীয় ওই তবহিলে নিজেদের সাহায্যও এক ধাক্কায় কমিয়েছে মন্ত্রক। পরিসংখ্যান বলছে, গত আর্থিক বছরে (২০১৭-১৮) ৩১৩.৩০ কোটির পরিবর্তে আসন্ন আর্থিক বছরে (২০১৮-১৯) মাত্র ৮১.৭৫ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। যার সমালোচনা করেছে কমিটি। পাল্টা যুক্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই খাতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট। যদি দরকার পড়ে, তা হলে ফের অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুবিকাশ মন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন ওই টাকার বিনিময়ে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, অমদাবাদ লখনউ এবং কলকাতাকে মহিলাদের জন্য নিরাপদ শহর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুরুতে নির্ভয়া তহবিলের অর্থ নিতে রাজি না হলেও এ বছর থেকে মত বদলেছে পশ্চিমবঙ্গ। নবান্ন সূত্রে খবর, নির্ভয়া তহবিলের টাকা দু’ভাগে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণ ও ‘সেফ সিটি’ নির্মাণ। কেন্দ্রের দেওয়া ১৮১ কোটি টাকার বিনিময়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, কলকাতা ও শহরতলির নটি মহিলা থানার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও থানাগুলিতে বেশি সংখ্যক মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিল্লি পাচ্ছে ৬৬৩.৬৭ কোটি টাকা। যা দিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাসে সিসিটিভি, ভিডিও মনিটরিং, মুখের বৈশিষ্ট্য দেখে মানুষ চেনার মতো আধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রের সাহায্যে অপরাধীকে ট্র্যাকিং-করার কাজে ব্যবহার করা হবে।
(সহ প্রতিবেদন: চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy