Advertisement
১৮ মে ২০২৪
নিয়োগে কাঁটা অমিত-মামলা

মোদীকে দুষে রেহাই চান ভাবী বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে তাঁর নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তুলেছে নতুন সরকার। এই অবস্থায় আজ নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়ার অভিযোগ তুলে বিচারপতির সুপারিশ-তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দিতে বললেন প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যম। ইউপিএ সরকারের শেষ পর্বে সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারপতি হিসেবে চার জনের নাম সুপারিশ করেছিল প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম। এঁরা হলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র, ওড়িশার প্রধান বিচারপতি আদর্শ গয়াল এবং দুই আইনজীবী রোহিংটন নরিম্যান ও গোপাল সুব্রহ্মণ্যম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে তাঁর নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তুলেছে নতুন সরকার। এই অবস্থায় আজ নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়ার অভিযোগ তুলে বিচারপতির সুপারিশ-তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দিতে বললেন প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যম।

ইউপিএ সরকারের শেষ পর্বে সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারপতি হিসেবে চার জনের নাম সুপারিশ করেছিল প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম। এঁরা হলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র, ওড়িশার প্রধান বিচারপতি আদর্শ গয়াল এবং দুই আইনজীবী রোহিংটন নরিম্যান ও গোপাল সুব্রহ্মণ্যম। চার জনের কারও নাম নিয়েই আপত্তি তোলেনি আগের সরকার। কিন্তু মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে সুব্রহ্মণ্যমের নাম নিয়ে আপত্তি জানায়। কলেজিয়ামের কাছে আর্জি জানানো হয় সুব্রহ্মণ্যমের বিষয়টি ফের খতিয়ে দেখার জন্য।

সুব্রহ্মণ্যমের নামে কেন আপত্তি? সুব্রহ্মণ্যমের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তাঁকে বিচারপতি পদে বসতে দিতে চাইছে না সরকার। সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় তিনি মোদী-ঘনিষ্ঠ অমিত শাহকে বিপাকে ফেলেছিলেন। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

ভুয়ো সংঘর্ষ মামলার জেরে গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হওয়া অমিত শাহ এখন বিজেপির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা। লোকসভা ভোটে তাঁকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মোদী। সেখানে দলকে বিপুল ভাবে জিতিয়ে এনেছেন অমিত শাহ। অন্যত্রও মোদীর প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। এখন অমিতকে সভাপতি পদে বসিয়ে মোদী দলের উপরে নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করতে চাইছেন বলেও খবর।

সুব্রহ্মণ্যমের মতে, এহেন ‘সেনাপতিকে’ বিড়ম্বনায় ফেলার কারণেই ‘রাজার’ কুনজরে পড়েছেন তিনি। তাঁর গায়ে কাদা ছেটাচ্ছে মোদী সরকার। আর সেই কারণেই আজ তিনি প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছেন কলেজিয়ামের সুপারিশ থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য।

কেন্দ্রের তরফে অবশ্য প্রকাশ্যে সুব্রহ্মণ্যমের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “বিষয়টি স্পর্শকাতর। আমার মন্তব্য করা শোভা পায় না।”

সরকারি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, সিবিআই এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছে। সিবিআইয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউপিএ জমানায় সলিসিটর জেনারেল হিসেবে তিনি প্রধান অভিযুক্ত এ রাজাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। ২০১০ সালে সিবিআই যখন টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন দুর্নীতির মামলায় তদন্ত করছে, তখন রাজার আইনজীবীর সঙ্গে সিবিআই এবং ইডি কর্তাদের বৈঠক করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সুব্রহ্মণ্যম। অথচ সে সময় সলিসিটর জেনারেল হিসেবে তিনি নিজেই সিবিআইয়ের হয়ে মামলা লড়ছিলেন। একই দুর্নীতি মামলায় জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ নীরা রাডিয়ার ফোনে আড়ি পেতে জানা গিয়েছিল, সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে নীরার কথাবার্তা হয়েছে। নীরা সুব্রহ্মণ্যমকে দিল্লির পাঁচ তারা হোটেলে নিখরচায় স্যুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। আইবি রিপোর্টেও এই সব অভিযোগ সমর্থন করা হয়।

সুব্রহ্মণ্যম নিজে যদিও সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। রাজাকে সাহায্য করার বিষয়ে তাঁর যুক্তি, সিবিআই রিপোর্টে যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন দুর্নীতি বা তদন্তে রাজার নাম ছিল না। তাঁর কথায়, “পরে সলিসিটর জেনারেল হিসেবে আমিই প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিই রাজার বিরুদ্ধে তদন্ত যেন বন্ধ না হয়। আমি সরকারের উল্টো অবস্থানই নিয়েছিলাম।” নীরার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও উড়িয়ে সুব্রহ্মণ্যমের দাবি, নতুন সরকার গঠনের আগেই আইবি তাঁর নামে ছাড়পত্র দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতিই তাঁকে সে কথা জানিয়েছিলেন।

সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের আরও অভিযোগ, তিনি আইনি যুক্তির থেকে আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের উপরেই বেশি ভরসা করেন। মন্দিরে গিয়ে প্রথা ভেঙে পুজো করেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেরলের শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দির থেকে সোনা চুরি ধরেন সুব্রহ্মণ্যম। কিন্তু তার কোনও কৃতিত্ব নিতে চাননি তিনি। জানিয়েছিলেন, ঈশ্বরের দেখানো পথে চলেই বেআইনি কাজকর্ম ধরেছেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হলে তাঁর রায়ে এই মনোভাবের প্রতিফলন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রের।

সুব্রহ্মণ্যমের পাল্টা বক্তব্য, “আমি পুজোআচ্চা করি বলে আইনি যুক্তি ভুলে যাই, এই দাবিটাই অদ্ভুত।” তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের অভিযোগ, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই সিবিআই এবং আইবি নতুন করে নেতিবাচক রিপোর্ট তৈরি করেছে।

ইউপিএ-র দ্বিতীয় ইনিংসে টু-জি স্পেকট্রাম দুর্নীতি নিয়ে মতবিরোধের জেরে সলিসিটর জেনারেলের পদ ছাড়েন সুব্রহ্মণ্যম। তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব আজ তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছে। আনন্দ শর্মার অভিযোগ, সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় সওয়াল করার জন্যই মোদী সরকার সুব্রহ্মণ্যমের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে।

সুব্রহ্মণ্যম নিজেও বলেছেন, “অন্যান্য কারণ বাদ দিতে দিতে আমি এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছচ্ছি যে, এটাই একমাত্র কারণ হতে পারে। তবে অমিত শাহর বিরুদ্ধে আমার কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ছিল না। আইনি যুক্তি মেনেই আমি সওয়াল করেছিলাম।”

কংগ্রেস আজ বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগও তুলেছে। যার পাল্টা বিজেপি শিবির বলছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে সরকারের কোনও ভূমিকাই থাকবে না, তা হতে পারে না। কারণ সরকারই দেশের কাছে দায়বদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gopal subramaniam chief justice supreme court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE