এমনকী ঘনিষ্ঠরাও আড়ালে বলে থাকেন, এই স্বামীর চোখে সবাই যেন আসামী!
ইনি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। অধুনা বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ। যিনি এ বারে বন্দুকের নল নিজের দলের সরকারের দিকেই ঘুরিয়ে দিয়েছেন! যা নিয়ে বিজেপি নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।
রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হওয়ার পর থেকে রাজ্যসভায় একাই ধুন্ধুমার বাধিয়ে দিয়েছেন স্বামী। বিজেপি শিবিরের হয়ে কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে লাগাতার আক্রমণ করে গিয়েছেন সনিয়া গাঁধীকে। সংসদে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সনিয়াকে আক্রমণের জন্য কংগ্রেস আজই প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের পাশাপাশি স্বামীর বিরুদ্ধেও স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনার কথা জানিয়েছে। সেই স্বামী এ বারে নিশানা করে বসলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনকে। বলে দিলেন, দেশের অর্থনীতি সামলানো ওঁর কম্ম নয়। ওঁকে শিকাগোতেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া উচিত!
রঘুরামের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে গিয়ে স্বামী যে যুক্তি দিয়েছেন, সেটি নরেন্দ্র মোদী সরকারেরও অনেকে মনে করেন। স্বামীর যুক্তি, মূল্যবৃদ্ধি কমানো ও অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এ দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। ইউপিএ আমলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর নিযুক্ত হওয়া রাজনের সঙ্গে মোদী সরকারের ঠান্ডা যুদ্ধ অনেক দিন ধরেই চলছে। কিন্তু স্বামী যে ভাবে তাঁকে আক্রমণ করেছেন, তাতে বিজেপিরই অনেকে অশনি সঙ্কেত দেখছেন।
বিজেপির এক নেতা আজ বলেন, ‘‘সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর ব্যাপারে এই আশঙ্কাটাই ছিল। আজ উনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে বলেছেন। কাল দলের যে কোনও নেতা বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগবেন।’’ বিজেপি যে কথাটা এখনও রাখঢাক করে বলছে, সেটিই আজ প্রকাশ্যে বলে দিয়েছে কংগ্রেস। দলের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে আরএসএস সাংসদ করে এনেছে শুধু সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণ করার জন্য নয়। স্বামী নিজেই দেশের অর্থমন্ত্রী হতে চান। আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে আক্রমণ করে সেই বার্তাটিই তিনি দিয়ে রাখলেন মোদী-জেটলিকে।’’
কংগ্রেসের বক্তব্য, আইআইএম-এর অধ্যাপক আর বৈদ্যনাথনকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর করার প্রস্তাব আগেই দিয়েছেন স্বামী। সংসদে যে নথি পড়ে তিনি সনিয়াকে আক্রমণ করেছেন, সেটি ইতালির আদালতের রায় নয়। একটি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা তথ্য। ওই ওয়েবসাইটটির নেপথ্যে রয়েছেন বৈদ্যনাথন ও সঙ্ঘের নেতা গুরুমূর্তি। সঙ্ঘ-চালিত ওয়েবসাইটকে ইতালির আদালতের রায় বলে চালানোর অভিযোগেই শুক্রবার স্বামীর
বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিতে চলেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আমি আগেই বিজেপি নেতৃত্বকে সতর্ক করেছিলাম, সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর যেমন স্বভাব, তাতে আজ সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণ করছেন। কিন্তু ক’দিন পরে বিজেপির বিরুদ্ধেই তোপ দাগবেন! এমনকী মোদীর গদিও টলমল করে দিতে পারেন উনি!’’ একই সঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে কংগ্রেসের লুকনোর বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিজেপির রাজনৈতিক আক্রমণ মোকাবিলার পথ কংগ্রেস জানে। কিন্তু স্বামী যখন নিজের দলকেই নিশানা করবেন, তখন কী ভাবে সামলানো যাবে, সেটাই ভাবুক বিজেপি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy