জনতার মনোভাব এবং বহিরাগত চাপের কাছে আদালত নতিস্বীকার করতে পারে না। ধর্ষণ-খুনের এক মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বেকসুর খালাস করে এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট করে দিয়েছে, শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়া যায় না। চেন্নাইয়ের ওই ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মনে করিয়ে দিচ্ছে আরজি কর-কাণ্ডের কথা। ওই সময়েও মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় আসামি সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবি উঠেছিল গোটা রাজ্যে। সিবিআই-ও মৃত্যুদণ্ডের জন্য সওয়াল করেছিল। তবে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছিলেন, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়। চার দিক থেকে ফাঁসির দাবি উঠলেও বিচারক তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। শিয়ালদহ আদালত আরজি কর-কাণ্ডের সাজা ঘোষণার প্রায় সাড়ে চার মাস পরে এ বার চেন্নাইয়ের এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিল, জনতার মনোভাবের কাছে নতিস্বীকার করতে পারে না আদালত।
চেন্নাইয়ের এই মামলাটির সূত্রপাত ২০১৭ সালে। ওই বছর সাত বছর বয়সি এক নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছিল। নিম্ন আদালত এক বছরের মধ্যেই সাজা ঘোষণা করে দেয়। অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা দেয় আদালত। পরে মাদ্রাজ হাই কোর্টও ফাঁসির নির্দেশই বহাল রাখে। কিন্তু বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেয়। এই মামলার তদন্তে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীত ভাবে দোষ প্রমাণ করতে তদন্তকারীরা ব্যর্থ হয়েছেন বলেও জানিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন:
আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই মামলার ক্ষেত্রে উঠে আসা অভিযোগ একটি ‘জঘন্য অপরাধ’। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিলে সমাজে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। তবে আদালতকে স্রেফ অনুমানের দ্বারা প্রভাবিত করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, “অভিযুক্তের অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে হয় সরকারপক্ষকে। ফৌজদারি আইনবিধির এটিই মৌলিক নীতি। আমরা এটিকে এড়িয়ে যেতে বা উপেক্ষা করতে পারি না। দুঃখের বিষয়, সরকারপক্ষ এই মামলা তা প্রমাণ করতে শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”
চেন্নাইয়ের ওই মামলার ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছে আদালত। যে সিসিক্যামেরার ফুটেজে অভিযুক্তকে দেখা গিয়েছে বলে তদন্তকারীরা দাবি করছেন, সেই ফুটেজ আদালতে জমা পড়েনি। সেই কারণেই এই সন্দেহ তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মনে। আদালতের মন্তব্য, “মনে হচ্ছে তদন্তকারী আধিকারিকেরা ইচ্ছাকৃত ভাবে সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন। আবেদনকারী (অভিযুক্তকে) বলির পাঁঠা বানিয়ে তাঁরা সত্যিটা এড়িয়ে গিয়েছেন।”