Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Bilkis Bano

Bilkis Bano: অপরাধীদের মুক্তিতে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন বিচারপতি, বিলকিস-বিতর্ক শুনতে রাজি হল শীর্ষ আদালত

১৫ অগস্ট, দেশের স্বাধীনতা দিবসে ধর্ষণ ও এক পরিবারের সাত সদস্যের খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার।

গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা জনস্বার্থ মামলা শুনতে রাজি সুপ্রিম কোর্ট।

গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা জনস্বার্থ মামলা শুনতে রাজি সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২২ ০৬:৩০
Share: Save:

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বম্বে হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ইউ ডি সালভি। তিনিই ওই ১১ জন অপরাধীকে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। আর আজই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, অপরাধীদের মুক্ত করতে গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা জনস্বার্থ মামলা শুনতে রাজি আছে তারা। এ নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির আর্জি শোনার পর প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

১৫ অগস্ট, দেশের স্বাধীনতা দিবসে ধর্ষণ ও এক পরিবারের সাত সদস্যের খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার। অপরাধীদের ফুলমালা মিষ্টিতে শুধু বরণ করে নেওয়াই হয়নি, তাদের ব্রাহ্মণ পরিচয় দেখিয়ে সংস্কারী আখ্যাও দিয়েছেন বিজেপির এক বিধায়ক। গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বম্বে হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সালভি, এক দিন যদি ওই অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন। সালভি বলেছেন, ‘‘সিদ্ধান্ত (এদের মুক্তির) যে কেউ নিন না কেন, আমার মনে হয়, সেটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সমস্ত তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখার পরেই এদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকার কী ভাবল, সেটা একটা প্রশ্ন।’’ সালভি বলেন, ‘‘যে বিচারপতি রায় দিলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁর মতামত কি তাঁরা জানতে চেয়েছে? আমি বলছি, মুক্তির ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। এ ছাড়া, এই ঘটনার তদন্ত সিবিআই করেছিল। এই ধরনের ব্যাপারে এগোতে গেলে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের পরামর্শ নিতে হয়। জানিনা, সেটাও করা হয়েছে কিনা। আর যদি সেটা করা হয়ে থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান ঠিক কি?’’ প্রাক্তন বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার অধিকার সরকারের রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবদিক বিবেচনা করে দেখতে হয়। জানিনা, ওরা (গুজরাত সরকার) সে সব খতিয়ে দেখেছে কিনা।’’

যে ভাবে ওই ১১ জন অপরাধীকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি সালভি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা একেবারেই ঠিক হয়নি। কেউ কেউ আবার মনে করেছেন, এসব হিন্দুত্বের অংশ, এরা ব্রাহ্মণ— এই ধরনের ভাবনাও মেনে নেওয়া যায় না।’’ বম্বে হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির যুক্তি, ১১জন অপরাধীকে মুক্তি দেওয়ার আগে বিলকিস বানোর পরিবারের কথা ভাবা উচিত ছিল। কারণ, অত্যাচারের শিকার হয়েছে তাঁরা। প্রাক্তন বিচারপতি সালভির কথায়, ‘‘যে অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হল, তারা কি ক্ষমা চেয়েছে? অথচ তাদের গলাতে মালা পরিয়ে দেওয়া হল। মনে হয় না, অপরাধ নিয়ে তাদের অনুশোচনা হয়েছে।’’

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের সাজা দিয়েছিলেন যিনি, সেই বিচারপতিই প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করায় অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে গুজরাত সরকার। এদিকে, আজ সুপ্রিম কোর্টেও জানিয়ে দিয়েছে, অপরাধীদের মুক্তির বিরোধিতায় আনা পিটিশনগুলি শোনা হবে। প্রধান বিচারপতির আদালতে আজ সকালে বিষয়টি তোলেন আইনজীবী অপর্ণা ভট্ট। আগামিকালই বিষয়টি শোনার আর্জি জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি এই বিষয় নিয়ে শুনতে রাজি হয়ে যান। তিনি আইনজীবী কপিল সিব্বলের কাছে জানতে চান, গুজরাত সরকার সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরই অপরাধীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা। সিব্বল জানান, সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার সুযোগ দিয়েছিল। বিচারপতি অজয় রাস্তোগির আদালত সেই নির্দেশ দেন। এরপরেই প্রধান বিচারপতিকে সিব্বল বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে কিছু বলছি না, অপরাধীদের মুক্তির সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাচ্ছি।’’

সিপিএম নেত্রী সুভাষিনী আলি, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সাংবাদিক রেবন্তী লাল, অধ্যাপিকা রূপরেখা বর্মারা বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তির বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তেলঙ্গানা বিধান পরিষদের সদস্য ও টিআরএস নেত্রী কে কবিতাও প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bilkis Bano Supreme Court of India Gujarat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE