বিহারের পরে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। গোটা দেশেই ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধন করা হবে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানাল নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে কেন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এই কাজ শুরু হল, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন উঠল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ আজ প্রশ্ন তুলেছে, বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পরিমার্জন বা ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন কেন নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মধ্যে ঢুকছে? তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। যদি নাগরিকত্ব যাচাই করতে হয়, তা হলে আরও আগে কাজ শুরু করা উচিত ছিল। নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে হাতে সময় কম রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ।
বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনে প্রায় ৩ কোটি মানুষের নাম বাদ পড়ে যাবে আশঙ্কা জানিয়ে দশটি বিরোধী দল ও একাধিক সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল। মামলাকারীদের অন্যতম আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণন প্রশ্ন তোলেন, যদি সারা দেশেই ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধন হয়, তা হলে তা বিহার থেকে কেন শুরু হল? আর এক আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দাবি তোলেন, সুপ্রিম কোর্টের এর আগের রায়ে বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তির ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় নাম থাকে, তা হলে তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বাধ্য করা যাবে না। বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন যেমন চলছে, চলুক। কিন্তু তার সঙ্গে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনকে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই নির্বাচন কমিশন বিহারের ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে।
বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া বলেন, সামনেই বিহারের ভোট। সে ক্ষেত্রে সময় খুবই কম। কারণ আইন অনুযায়ী কারও নাম বাদ গেলে তাঁকে মৌখিক শুনানির সুযোগ দিতে হবে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রথমে ৩০ দিনের মধ্যে কিছু কাজ হবে। তার পরে আরও ৩০ দিনের মধ্যে আরও কিছু কাজ হবে। এই সময় খুবই কম। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন নির্বাচনের দিকে নজর রেখে এই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হচ্ছে? যদি কারও নাম বাদ যায়, পরিস্থিতির কারণে বা ভুল করে, তা হলে তাঁর বক্তব্য শোনার কোনও ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি বাগচী।
নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধন করতে নেমে বলেছে, ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বিহারের ভোটার তালিকায় থাকা সবাইকে ফর্ম পূরণ করতে হবে। আজ কমিশন জানিয়েছে, এখনও ১৫ দিন বাকি। ইতিমধ্যেই ৬০ শতাংশ ফর্ম জমা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, কেউ পরিস্থিতির কারণে ফর্ম পূরণ করতে না পারলে খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবেন। কমিশনের বক্তব্য, তিনি ফের সময় পাবেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে কি না! বিচারপতি বাগচী বলেন, যাঁরা নাগরিক নন, তাঁদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে তালিকা সংশোধনে কোনও ভুল নেই। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নির্বাচনকে জড়ানো ঠিক নয়। বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, একবার ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে, কোনও আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করে না। যদি নাগরিকত্ব যাচাই করতে হয়, তা হলে নথি সঠিক ভাবে যাচাই করতে হবে। এই নথি যাচাইয়ের সংস্থা থাকতে হবে। তার জন্য কি অনেক দেরি হয়ে যায়নি?
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, আগে কেক তৈরি হতে দিন। বিচারপতিরা বলেন, একবার কেক তৈরি হয়েছে জানুয়ারিতে। তখন ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছে। মামলাকারীদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, একবার ডিম ফাটিয়ে ফেললে আর তা আগের অবস্থায় ফেরানো যায় না। কপিল সিব্বল বলেন, নির্বাচন কমিশনের কোনও ক্ষমতাই নেই কে নাগরিক, কে নয়, তা যাচাই করার। নির্বাচন কমিশন বলছে, ফর্ম পূরণ না করলে ভোট দিতে পারবে না। কী ভাবে এ সব চলতে দেওয়া যায়?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)