‘নগদকাণ্ডে’ নাম জড়ানো বিচারপতি যশবন্ত বর্মার দায়ের করা মামলা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, এ ভাবে মামলা দায়ের করাই উচিত হয়নি!
সুপ্রিম কোর্ট গঠিত অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন বিচারপতি বর্মা। ওই মামলা থেকে আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই। তার পর মামলাটি যায় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসীহর বেঞ্চে। সোমবার দুই বিচারপতির বেঞ্চ প্রশ্ন করে, কেন তদন্ত রিপোর্টটি মামলার নথিতে নেই? জবাবে আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, ওই নথি চাইলে যে কেউ দেখতে পারেন। পাল্টা বিচারপতি দত্ত বলেন, ‘‘তবুও মামলার নথির সঙ্গে সেটি থাকা জরুরি ছিল।’’
শুনানিতে এক জন বিচারপতির অপসারণ নিয়ে সংবিধানের নিয়মকানুনও তুলে ধরেন সিব্বল। তাঁর বক্তব্য, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ম মেনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘যত ক্ষণ না কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে আপত্তিকর আচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে, তত ক্ষণ এ ধরনের বিষয় নিয়ে সংসদেও আলোচনা করা যায় না। এ ভাবে জনসমক্ষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা, সংবাদমাধ্যমে প্রচার সমস্ত কিছুই নিষিদ্ধ। এ ধরনের ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় লঙ্ঘন করে।’’
পাল্টা বিচারপতিদের বক্তব্য, যখন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তখন কেন আপত্তি তোলা হয়নি? জবাবে সিব্বল জানান, বিচারপতি বর্মা তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন, কারণ, তিনি জানতে চেয়েছিলেন, উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ কার। মামলার পরবর্তী শুনানি বুধবার।
চলতি বছরে দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে যাওয়ার পরে প্রথম নোটের কথা জানা যায়। দাবি করা হয়, সেখানে আধপোড়া নোটের বান্ডিল দেখা গিয়েছে। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। বিতর্কের আবহেই দিল্লি হাই কোর্ট থেকে ওই বিচারপতিকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলি করা হয়। পরবর্তী সময়ে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। গত ৩ মে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে।
ওই সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন খন্না। অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তিনিই অবসরগ্রহণের কয়েক দিন আগে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট-এর (অপসারণ) সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন। এর পরেই ওই রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিচারপতি বর্মা।