নিঃসন্তান হিন্দু বিধবা মহিলার মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির দাবিদার কে? বাপের বাড়ির লোকজন না শ্বশুরবাড়ির সদস্যেরা? দুই পরিবারের মামলায় এমনই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল সুপ্রিম কোর্টকে। আদালত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন উল্লেখ করে জানিয়ে দিল, বিয়েতে মেয়েদের ‘কন্যাদানের’ সঙ্গে সঙ্গে ‘গোত্রদান’ও হয়ে যায়। ফলে সম্পত্তি পাওয়ার কথা তাঁর শ্বশুরবাড়িরই। যদিও এখনও এই মামলার রায় ঘোষণা করেনি শীর্ষ আদালত।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, কোনও নিঃসন্তান বিধবা যদি মৃত্যুর আগে উইল করে নিজের সম্পত্তি ভাগ করে না-দিয়ে যান, তবে তাঁর সম্পত্তি পাওয়ার কথা স্বামীর পরিবারের সদস্যদেরই। ওই মহিলার সম্পত্তিতে তাঁর বাপের বাড়ির কোনও অধিকার থাকার কথা নয়। বুধবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টের একমাত্র মহিলা বিচারপতি বিভি নাগরত্না এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে। বিচারপতি নাগরত্নার পর্যবেক্ষণ, হিন্দু সমাজে বিয়েতে ‘কন্যাদান’-এর রীতি রয়েছে। সেই রীতি অনুযায়ী, বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের গোত্রও বদলে যায়। যে রীতি হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে, আদালতের কোনও নির্দেশের ফলে তা ভেঙে যাক, তা আদালত চায় না।
আরও পড়ুন:
কোভিড অতিমারি চলাকালীন কমবয়সি এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের সম্পত্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের পথে হেঁটেছে দুই পরিবার। যুবকের মা দাবি করেছেন, পুত্র এবং পুত্রবধূ, উভয়ের সম্পত্তিই তাঁর পাওয়ার কথা। তিনিই আইন অনুযায়ী ওই সম্পত্তির যোগ্য উত্তরাধিকারী। কিন্তু বধূর মা তাতে রাজি নন। তিনি নিজের মেয়ের সম্পত্তিতে নিজের অধিকার দাবি করেছেন। ফলে মামলা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। শীর্ষ আদালতে আইনজীবী জানিয়েছেন, এই সমস্যা আরও অনেক মামলাতেই দেখা দিচ্ছে। জনস্বার্থে এতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
কন্যাদান এবং গোত্রদানের রীতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে আইনজীবীকে বিচারপতি নাগরত্না জানিয়েছেন, যে কোনও বিবাহিত মহিলার দায়িত্ব তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়িকে নিতে হয়। বিচ্ছেদের সময় ভরণপোষণের মামলা মহিলারা স্বামীর বিরুদ্ধেই করেন। বাপের বাড়ির কারও বিরুদ্ধে নয়। দক্ষিণ ভারতের বিয়ের প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘বিয়ের রীতিনীতি অনুযায়ী, পাত্রী এক গোত্র থেকে অন্য গোত্রে চলে যান। বিশেষত দক্ষিণ ভারতে এই রীতি খুব স্পষ্ট। তবে মহিলারা চাইলে নিজের সম্পত্তির উইল করতে পারেন। আবার বিয়েও করতে পারেন।’’ আইনানুসারে, বিধবার সন্তান বা সন্ততি থাকলে মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির দাবিদার তাঁরা। যদি তিনি নিঃসন্তান হন, তবে স্বামীর উত্তরাধিকারীরাই তাঁর সম্পত্তি ভোগ করবেন। আগামী নভেম্বরে এই মামলা আবার শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। তখন রায় ঘোষণা করা হতে পারে।