অপরাধ ঘটা তো দূরের কথা, ‘তার ফিসফিসানিটুকুও যখন ঘটেনি’ তখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে করা এফআইআর কেন বাতিল হবে না? এডিটরস গিল্ডের সভাপতি ও সরেজমিন দলের বিরুদ্ধে করা মণিপুরের বিজেপি সরকারের এফআইআর নিয়ে প্রশ্ন তুলে দ’সপ্তাহের মধ্যে তার জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। এই দু’সপ্তাহের মধ্যে সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
মণিপুরে ভয়াবহ গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে এলাকা ঘুরে তা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে দেশের সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড। সেই রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে নিশ্চেষ্টতা এবং একটি পক্ষ অবলম্বনের অভিযোগ আনা হয়। প্রশাসন রাজ্যে যে ভাবে দীর্ঘদিন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে তারও সমালোচনাও করা হয় রিপোর্টে। একই সঙ্গে বলা হয়, এক শ্রেণির অনুগত সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে শাসক দল পক্ষপাতদুষ্ট খবর করিয়েছে, যা উত্তাপ ও সংঘর্ষকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বস্তুত এই অভিযোগ আরও অনেকেই তুলেছেন, কিন্তু এ মাসের ২ তারিখে প্রকাশিত এডিটরস গিল্ডের রিপোর্টে তা যে ভাবে বহু মানুষের বয়ান ও নির্দিষ্ট ঘটনা দিয়ে উল্লেখ করা হয়, বিপাকে পড়ে মণিপুরের বিজেপি সরকার এবং কেন্দ্রের শাসক দল। তার পরেই এডিটরস গিল্ডের সভাপতি সীমা মুস্তাফা এবং এবং মণিপুরে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করে রাজ্য প্রশাসন। সেই এফআইআর-এ এই রিপোর্টকে যেমন ‘পক্ষপাতদুষ্ট, বানানো এবং কারও কথায় তৈরি’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, অভিযোগ করা হয়েছে ‘মণিপুরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা বাড়ানোর’ উদ্দেশ্যে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এডিটরস গিল্ড।
এই এফআইআর খারিজ করার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল গিল্ড। সরকারের পক্ষে কৌঁসুলি এস গুরু কৃষ্ণকুমার সওয়ালে বলেন, “বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে গিল্ডের রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। সরেজমিন রিপোর্ট যদি হত, তা হলে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অন্য গোষ্ঠীর ১০০-২০০ মানুষের ছবি ও বয়ানও তাতে থাকত। সেনা বাহিনীকে জানিয়েও দলটি মণিপুরে যায়নি।” প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এ দিন বলে, “যে অপরাধ ঘটেইনি, তা নিয়ে এফআইআর হয়ে গেল?” প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “সেনারা গিল্ডকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছে, রিপোর্টটি বাস্তবসম্মত নয়, পক্ষপাতদুষ্টও। একটি দল সংঘর্ষের এলাকায় গিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেটা ঠিকও হতে পারে ভুলও হতে পারে। কিন্তু এটাই তো মত প্রকাশের স্বাধীনতা।”
এর পরেই বেঞ্চ সরকারকে নির্দেশ দেয়, এফআইআর-টি কেন বাতিল করা হবে না সে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। ২ সপ্তাহ পরে ফের শুনানির দিন ধার্য করা হচ্ছে, সে দিনই তাদের এই জবাব দিতে হবে। এই ২ সপ্তাহের মধ্যে এফআইআর-এ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না মণিপুর সরকার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)