বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সংবিধান সম্মত নয় বলে সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার মত দিয়েছিল। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন দাবি তুললেন, সংবিধানে সংশোধন করে রাজ্যপালদের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হোক। তাঁর যুক্তি, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ যে মত দিয়েছে, তাতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপালের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে যে রায় দিয়েছিল, তাতে কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ, সাংবিধানিক বেঞ্চ ‘উপদেশমূলক মত’ দিয়েছে।
মোদী জমানায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্য রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিল। ডিএমকে শাসিত সরকারের বিল রাজ্যপাল দিনের পর দিন আটকে রাখছেন, এই অভিযোগ তুলে স্ট্যালিনের সরকারই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। সেই মামলাতেই গত এপ্রিলে বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার নেতৃত্বে দুই বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির জন্য বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দেয়। এই রায় ঠিক কি না, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স’-এর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মত জানতে চান। বৃহস্পতিবার বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ মত দিয়েছে, রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতির জন্য সময়সীমা বাঁধা ভুল ছিল। কারণ, তাঁদের ক্ষমতা সংক্রান্ত সংবিধানের ২০০ ও ২০১তম অনুচ্ছেদে এমন কিছু বলা নেই।
আজ স্ট্যালিন দাবি তুলেছেন, রাজ্যপালের সময় বেঁধে দিতে সংবিধান সংশোধন না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তাঁর যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের বৃহস্পতিবারের মতের কোনও প্রভাব এপ্রিল মাসের রায়ের উপরে পড়বে না। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির বেঞ্চ ১৯৭৪ সালের রায়ে বলেছে, আদালতের ‘উপদেশমূলক মত’-এর কার্যকারিতা নেই।
প্রবীণ আইনজীবী মুকুল রোহতগির মতে, সংবিধানের প্রণেতারা আশা করেননি, রাজ্যপালরা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হবেন। সেই কারণেই সংবিধানে রাজ্যপালের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের মতের ফলে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রবীণ আইনজীবী তথা মিজ়োরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবের মতে, ‘‘সংবিধানে যে হেতু রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নেই, তাই সুপ্রিম কোর্টের সামনে আর কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু সেই সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রের মনোনীত রাজ্যপালরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল আটকে বসে থাকছেন। তা রুখতে সংবিধান সংশোধনই একমাত্র রাস্তা। প্রশ্ন হল, বিড়ালের গলায় ঘন্টিবাঁধবে কে?”
সুপ্রিম কোর্ট নিজের এপ্রিল মাসের রায় নভেম্বর মাসেই সংশোধন করে ফেলায় তা নিয়েও আইনজীবীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁদের প্রশ্ন, শীর্ষ আদালত শতমুখে কথা বললে কী ভাবে হবে? বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চ আর এক বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার বেঞ্চের রায়কে ভুল বলছে। দু’বছর পরে বিচারপতি পারদিওয়ালা প্রধান বিচারপতি হবেন। তখন তাঁর বেঞ্চে আবার একই বিষয়ে মামলা উঠলে কী হবে? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দের অভিযোগ, ‘‘একের পর এক প্রধান বিচারপতির রায়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সুবিধা হওয়ার রাস্তা খুলছে। বিরোধী শাসিত রাজ্যের জন্য বাধা তৈরি হচ্ছে। তার পরে প্রশ্ন উঠছে, বিরোধীরা দুর্বল কেন!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)