কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতির বিপ্রতীপে নিজস্ব শিক্ষানীতি প্রকাশ করল তামিলনাড়ু সরকার। শুক্রবার তামিলনাড়ুর শিক্ষানীতি প্রকাশের পরে স্ট্যালিনের ঘোষণা, সে রাজ্যের স্কুলগুলিতে দু’টিই ভাষা চলবে— তামিল এবং ইংরেজি। ‘হিন্দি আধিপত্যে’র বিরুদ্ধে স্ট্যালিন সরকার ধারাবাহিক ভাবে সুর চড়িয়ে গিয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। সেই আবহে স্ট্যালিনদের দ্বিভাষা শিক্ষানীতি প্রণয়ন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন ভাষার কথা বলা হয়েছে। সেখানে মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার কথা যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনই রয়েছে হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার প্রসঙ্গও। তবে তামিলনাড়ু সরকার ঘোষিত রাজ্য শিক্ষানীতিতে দু’টি ভাষার উপরেই জোর দিয়েছেন স্ট্যালিন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেখানে হিন্দির উল্লেখ করেননি তামিলনাড়ুর শিক্ষামন্ত্রী। বস্তুত, তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই দু’টি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক— ইংরেজি এবং স্থানীয় ভাষা। তিন ভাষা নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে হিন্দি শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানার মতো দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলি থেকে অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই। যদিও কেন্দ্রের দাবি তারা কোনও রাজ্যের উপরেই জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেবে না।
‘হিন্দি আগ্রাসন’-এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে সুর চড়িয়ে আসছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, উত্তর ভারতের বিভিন্ন ভাষাকে দৃশ্যত গ্রাস করেছে হিন্দি ভাষা। উদাহরণ হিসাবে ভোজপুরি, মৈথিলি, অওয়াধি, ব্রজ, বুন্দেলি, গঢ়ওয়ালি, কুমায়ুনি, মগহী, মাড়ওয়ারি, মালভী, ছত্তীসগঢ়ী, সাঁওতালি, অঙ্গিকা, হো, খড়িয়া, খোরঠা, কুড়মালী, কুরুখ, মুন্ডারী এবং আরও অনেক ভাষার কথা বার বার তুলে ধরতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। স্ট্যালিনের অভিযোগ, এই ভাষাগুলি এখন ধুঁকছে। একচেটিয়া হিন্দি চালুর উদ্দেশ্য প্রাচীন মাতৃভাষাকে হত্যা করা বলে দাবি তাঁর।
আরও পড়ুন:
স্ট্যালিন অতীতে বার বার অভিযোগ করেছেন, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের অতীতের ভাষাকে ধ্বংস করে ওই জায়গাগুলিকে ‘হিন্দি হৃদয়পুর’ করে তোলা হয়েছে। তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে যে কেন্দ্রকে কোনও ভাবেই ‘হিন্দি আধিপত্য’ ছড়াতে দেওয়া হবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ডিএমকে নেতা। ‘হিন্দি আগ্রাসন’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বার্তাও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বিতর্কেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে। সমাজমাধ্যমে স্ট্যালিন লেখেন, “এটা এমন একটি ভাষার উপর সরাসরি আক্রমণ, যে ভাষায় দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছিল।” তিনি আরও লেখেন, “অহিন্দি ভাষার উপর আক্রমণের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন সম্মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি।” এ বার নিজস্ব শিক্ষানীতি প্রকাশ করে ‘হিন্দি আগ্রাসন’-এর বিরুদ্ধে আরও এক পদক্ষেপ করলেন স্ট্যালিন।