Advertisement
E-Paper

আইআইটিতে চান্স পেয়েও নম্বরে অখুশি, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী ছাত্রী

পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু দিন আগেই। ফল প্রকাশেরও সময় হয়ে এসেছিল। গত বুধবার প্রকাশ পেয়েছে আইআইটি এন্ট্রান্সের সেই ফল। তাতে নামও ছিল ১৭ বছরের ছাত্রী কীর্তি তিওয়ারির। কিন্তু, সেই ফল ওই কিশোরীর মনের মতো হয়নি। তাই, একটি সুইসাইড নোট লিখে ছ’তলা থেকে সটান ঝাঁপ দিয়েছিল সে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় গাজিয়াবাদের ওই ছাত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৬ ১৩:৩৫

পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু দিন আগেই। ফল প্রকাশেরও সময় হয়ে এসেছিল। গত বুধবার প্রকাশ পেয়েছে আইআইটি এন্ট্রান্সের সেই ফল। তাতে নামও ছিল ১৭ বছরের ছাত্রী কীর্তি তিওয়ারির। কিন্তু, সেই ফল ওই কিশোরীর মনের মতো হয়নি। তাই, একটি সুইসাইড নোট লিখে ছ’তলা থেকে সটান ঝাঁপ দিয়েছিল সে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় গাজিয়াবাদের ওই ছাত্রী।

কীর্তি রাজস্থানের কোটায় একটি বেসরকারি কোচিং সেন্টারে আইআইটি এন্ট্রান্সের জন্য পড়াশোনা করত। একা কীর্তি নয়, পরিসংখ্যান বলছে, পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না হয় এ বছর এখনও পর্যন্ত কোটাতেই পাঁচ জন ছাত্রছাত্রী আত্মঘাতী হয়েছে। গত বছর ১৮ জন ছাত্রছাত্রী একই কারণে আত্মঘাতী হয়েছিল। কিন্তু, আইআইটি এন্ট্রান্সে পাশ করার পরেও কেন নিজেকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে নিতে হল ওই কিশোরীকে?

মনোবিদদের মতে, এখন বেশির ভাগ মানুষই অবসাদে ভোগেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা ২০-২৫ শতাংশ হলেও মেয়েদের মধ্যে তা ৩০ শতাংশেরও বেশি। মনোবিদ মোহিত রণদীপের মতে, অবসাদে ভোগার সময় ছোটখাটো ব্যর্থতাকেও যেন ম্যাগনিফাইং গ্লাসের তলায় রেখে দেখে এই ছাত্রছাত্রীরা। ফলে একটা ব্যর্থতা দিয়েই হিসেব কষে নেয় গোটা জীবনটাকে। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে হারতে শিখতে হয়। আমরা ছোটবেলা থেকে খেলাধুলো করতাম। সেখানে জেতার পাশাপাশি হারতেও শিখতে হত। এখন তো খেলাধুলোই উঠে গিয়েছে।’’ তার উপর রয়েছে অন্য এক চাপ। এই ধরনের ক্ষেত্রে একটা পরিবার অনেক পরিকল্পনা করে, অনেক টাকা খরচ করে একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে। বাবা-মা সন্তানের উপর কোনও চাপ তৈরি না করলেও, তার নিজের ভেতরেই অদ্ভুত এক সঙ্কট তৈরি হয়। সে মনে করতে থাকে বাবা-মা তার উপর একটা বিনিয়োগ করেছেন। ভাল ফল না করতে পারলে, গোটাটাই ব্যর্থ হবে। মোহিত বলছেন, ‘‘ব্যর্থতার এই ধারণা কিন্তু আপেক্ষিক। এই ছাত্রী কিন্তু উত্তীর্ণ হয়েছিল। অর্থাত্ তার কাছে যা ব্যর্থতা, অন্যের কাছে সেটাই সাফল্য। আসলে, অবসাদের সময় চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়াটাই বদলে যায়।’’

আরও খবর
এমবিএ পাশ, অথচ চাকরির উপযুক্ত নন!

মনোবিদ সুরজিত্ দেবনাথের মতে, এই ধরনের কোচিং সেন্টারে প্রথম থেকেই একটা বিষয়ে জোর দেওয়া হয়, যদি তুমি জিততে না পারো, তা হলে তোমার জীবন ব্যর্থ। যদি তুমি কারও থেকে পিছিয়ে পড়, তা হলেও তুমি ব্যর্থ। তাঁর কথায়, ‘‘সে কারণেই ফল প্রকাশের পর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আশ্চর্য রকমের হতাশা কাজ করে। সেই জায়গা থেকেই তারা জীবন থেকে সরে যেতে চায়।’’

কীর্তির বাবা একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালান। গাজিয়াবাদেই থাকেন। কিন্তু, ওই দিন তিনি কোটাতেই ছিলেন। বুধবার ফল বেরোনোর পর জানা যায়, আইআইটি এন্ট্রান্সের কাট মার্ক নেমেছে ১০০-য়। অথচ কীর্তি পেয়েছে ১৪৪ নম্বর। মেয়ের এমন রেজাল্টে তিনি ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। সেই খুশি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিষাদে বদলে যায়! বছর দুয়েক আগে মেয়েকে গাজিয়াবাদ থেকে কোটায় নিয়ে এসে ভর্তি করিয়েছিলেন ওই কোচিং সেন্টারে। পাশাপাশি ক্লাস ইলেভেনে একটি স্কুলেও ভর্তি হয় কীর্তি। যে আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মেয়েকে রেখেছিলেন তিনি, সেই ফ্ল্যাটেরই ছ’তলা থেকে ঝাঁপ দেয় সে। তার আগে লিখে রেখে যায় একটি সুইসাইড নোট। তাতে ওই কিশোরী লিখে গিয়েছে, ‘এই ফলে আমি মোটেও খুশি নই। তাই নিজেকে সরিয়ে নিলাম।’

তবে মোহিতবাবুর মতে, বিষণ্ণতার এই অসুখে প্রায় সব ক্ষেত্রেই উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। অভিভাবকদেরও সচেতনতা প্রয়োজন।

Cleared IIT KOTA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy