Advertisement
E-Paper

‘আবার পতাকা তুলতে পারব’!

অথচ বাচ্চাদের মাথায় এমন চিন্তা আসার কথাই নয়। কিন্তু ৩১ অগস্ট যত এগিয়ে আসছে, মসিবরের বাবা আলফারুক ইসলাম আর রবিউলের বাবা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে সেই দুশ্চিন্তাই ঘুরে ফিরে আসছে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বন্যার জল নেমেছে বটে। কিন্তু দক্ষিণ শালমারার বিভিন্ন অংশে রাস্তাগুলো এখনও খানাখন্দে, জলে ভরা। কষ্ট করেই ছাত্ররা আসছে বনফুল জাতীয় বিদ্যালয়ে। স্বাধীনতা দিবসের সকালে স্কুলে জাতীয় পতাকা তোলা হবে। কিন্তু সেই উত্তেজনার মধ্যেও কাঁটা বিঁধে আছে প্রাক প্রাথমিকের ছাত্র মসিবর ইসলাম আর রবিউল ইসলামের বুকে। আগামী বছর তারা জাতীয় পতাকা তোলার অধিকার পাবে তো? নিজের পরিবারে থাকার অধিকারটুকুও কি থাকবে? ভাবছে প্রাক প্রাথমিকের ফকরুদ্দিন আহমেদ বা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আকিদা পরভিনও।

অথচ বাচ্চাদের মাথায় এমন চিন্তা আসার কথাই নয়। কিন্তু ৩১ অগস্ট যত এগিয়ে আসছে, মসিবরের বাবা আলফারুক ইসলাম আর রবিউলের বাবা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে সেই দুশ্চিন্তাই ঘুরে ফিরে আসছে। কারণ, পরিবারের সকলের নাম খসড়ায় থাকলেও বাচ্চাগুলোর নাম বাদ দিয়েছেন এনআরসি কেন্দ্রের কর্তারা!

বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অসমের পরিষদীয় মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি খসড়া এনআরসির তালিকা তুলে ধরে দাবি করছিলেন, সংখ্যালঘু ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এত মানুষের নাম ঢোকে কী করে? নিশ্চয় এঁদের মধ্যে বাংলাদেশি আছেন। তাই খসড়া ফের যাচাই করা দরকার। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য সেই দাবি খারিজ করেছে। কিন্তু সরকারের এমন মানসিকতায় ক্ষুব্ধ ধুবুড়ি, দক্ষিণ শালমারা-মানকাচরের মানুষ। তাঁদের উল্টো দাবি, ন্যায্য প্রমাণ দেখানোর পরেও অনেক পরিবারে বাচ্চাদের নাম তালিকাছুট। অনেক বিবাহিত মহিলার নামও তালিকায় তোলা হয়নি।

দক্ষিণ শালমারা কলেজের শিক্ষক মজিবুর রহমান এনআরসি কেন্দ্রে অফিসার ছিলেন। তিনি জানান, নথিপত্র সব থাকার পরেও অনেক ছোট বাচ্চার নাম-বয়সের তারতম্য বা নামের বানানে ভুলের উদাহরণ দেখিয়ে এবং বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত শংসাপত্র ও রেশন কার্ডের প্রমাণ না মেনে নাম বাদ দিয়েছে জেলাশাসকের দফতর। বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে উকিল ও সাক্ষীর সই থাকা কাজি সংস্থার দেওয়া ২০-৩০ বছর আগের প্রমাণপত্রও মানা হয়নি। তাঁদের রেশন কার্ডকেও ‘দুর্বল নথি’ হিসেবে গণ্য করে আবেদনপত্র বাতিল করেন ম্যাজিস্ট্রেট।

২০১৭ সালে ধুবুড়ির নস্করা স্কুলের দুই ছাত্র আর প্রধান শিক্ষকের কোমর জলে দাঁড়িয়ে পতাকা তোলার ছবি দেশে ভাইরাল হয়েছিল। গত বছর দেখা যায়, সেই ছাত্রদের মধ্যে হায়দর আলি খানের নাম এনআরসিতেই নেই। পতাকা তোলার ছবি আপলোড করা শিক্ষক মিজানুর রহমান
জানান, কম ছাত্র থাকায় ফকিরগঞ্জের সেই নিম্ন প্রাথমিক স্কুলটি পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক স্কুলের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। হায়দরের নাম ঢোকানোর আবেদনপত্র মিজানুর নিজে পূরণ করে দিয়েছেন। হায়দরের ক্ষেত্রেও তার মা, দাদা, বোনের নাম তালিকায় উঠেছিল। এ বছরেও নতুন স্কুলে তেরঙা ওড়ানোয় অংশ নিচ্ছে হায়দর। আর হায়দর, মসিবর, রবিউলদের পরিবার দিন গুণছে ৩১ অগস্টের। আর ১৬ দিন পরে ছেলেদের যেন কেড়ে না নেয় এনআরসি!

NRC School students Shalmara Assam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy