Advertisement
E-Paper

বুরহান খুনের প্রতিবাদে ফুঁসছে গোটা কাশ্মীর!

সালটা ২০১০। অন্য অনেক দিনের মতোই সে দিনও কাশ্মীরে কয়েক জায়গায় জারি হয়েছে কার্ফু। দক্ষিণ কাশ্মীরের দাদসারা বাজারের মধ্যে হঠাৎই তিন জনকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে সিআরপিএফ আর পুলিশের জওয়ানরা। মার খেয়ে এক জন অজ্ঞান হয়ে যায়। বাকি দু’জন কোনও রকমে পালায়। ছুটতে ছুটতেই তাদের মধ্যে এক কিশোর বলে যায়, ‘‘বদলা নেব এর।’’

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪০
বুরহানের মৃতদেহ ঘিরে ভিড় ও বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি।

বুরহানের মৃতদেহ ঘিরে ভিড় ও বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি।

সালটা ২০১০। অন্য অনেক দিনের মতোই সে দিনও কাশ্মীরে কয়েক জায়গায় জারি হয়েছে কার্ফু। দক্ষিণ কাশ্মীরের দাদসারা বাজারের মধ্যে হঠাৎই তিন জনকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে সিআরপিএফ আর পুলিশের জওয়ানরা। মার খেয়ে এক জন অজ্ঞান হয়ে যায়। বাকি দু’জন কোনও রকমে পালায়। ছুটতে ছুটতেই তাদের মধ্যে এক কিশোর বলে যায়, ‘‘বদলা নেব এর।’’

বুরহান ওয়ানি নামে ওই কিশোরই পরে নতুন মুখ হয়ে ওঠে হিজবুল মুজাহিদিনের। গত কাল যৌথ বাহিনীর হাতে যার মৃত্যুর জেরে আপাতত উত্তাল কাশ্মীর। জনপ্রিয় জঙ্গি নেতার মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তর কাশ্মীরের খাদিনয়ার থেকে দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম— সর্বত্রই বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নিহত অন্তত ১৬ বিক্ষোভকারী। আহতের সংখ্যা ১৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৯২ জনই নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান। মৃত্যু হয়েছে এক পুলিশকর্মীরও। আশঙ্কা, হতাহতের সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। গত কালই স্থগিত হয়েছিল অমরনাথ যাত্রা। আজও তা চালু করা যায়নি। আটকে পরা সব যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যত দ্রুত সম্ভব যাত্রা ফের চালু করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের কর্তা এস এম সহায়। এই আশ্বাসেও অবশ্য ঘোর অনিশ্চয়তায় অমরনাথ যাত্রীরা। এই রণক্ষেত্র পরিস্থিতির কারণে কাশ্মীর উপত্যকায় আগামী কালের ইউজিসি-নেট পরীক্ষা স্থগিত ঘোযণা করেছে সিবিএসই।

পরিস্থিতি দেখে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইট করেছেন, ‘‘মৃত বুরহান ওয়ানি জীবিত বুরহান ওয়ানির চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, জীবদ্দশাতেই বা কেন এমন মারাত্মক জঙ্গি হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ কাশ্মীরের ত্রাল এলাকার এক সম্পন্ন পরিবারের ছেলেটি? বুরহানের বাবা মুজফ্ফর ওয়ানি ও বন্ধু আনায়েত আহমেদ যে কাহিনি শোনালেন তা একেবারে হিন্দি ছবির মতো। আনায়েত জানাচ্ছেন, ২০১০-এ এক দিন কার্ফুর মধ্যে তিনি ও বুরহানের দাদা খালিদ মোটরবাইকে দাদসারে গিয়েছিলেন খাবার কিনতে। সেখানে বুরহানকে দেখে ওকেও সঙ্গে নিয়ে ফিরছিলেন। পথে পুলিশের কয়েক জন তাদের আটকায়। আনায়েতের কথায়, ‘‘ওরা বলল, যা সিগারেট কিনে আন। আমরা রাজি হলাম না। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল মার।’’ মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় খালিদ। বুরহান ও আমি ছুটে পালাই। তখনই বুরহান বলেছিল, বদলা নেব এর।’’

এর পরেই বুরহান যোগ দেয় হিজবুল মুজাহিদিনে। ক্রমে হিজবুলের নয়া মুখ হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আইএসের মতোই কাশ্মীরি যুবকদের জঙ্গি সংগঠনে টানা, খিলাফত প্রতিষ্ঠার ডাক দেওয়ার কাজে ব্যাপক ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে থাকে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে এক দিন দাদার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে খবর পাঠায় বুরহান। দাদসারার জঙ্গলে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে ফিরছিল খালিদ। হঠাৎ তাকে ঘিরে ফেলে সেনারা। মুজফ্ফর ওয়ানির কথায়, ‘‘জঙ্গি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার অপরাধে খালিদকে গুলি করে মেরে ফেলে সেনাবাহিনী। বুরহানের মৃতদেহ দেখার জন্য আমি তৈরি ছিলাম, খালিদের নয়।’’ এখন তাঁর বক্তব্য, ‘‘বুরহান যে বন্দি না হয়ে মারা গিয়েছে সেটা বরং স্বস্তির।’’

কী করে খোঁজ মিলল এই তরুণ হিজবুল নেতার? সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার জন্যই সহজে বুরহানের অবস্থান খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে গত কাল জানিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। আজ শোনা গিয়েছে নয়া তত্ত্ব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, বুরহানের খবর পাওয়ার পিছনে কাজ করেছে এক তরুণীর ঈর্ষা! সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রে প্রচুর মহিলা বন্ধু ছিল সুপুরুষ বুরহানের। প্রথম প্রথম সমবয়সি মেয়েদের সঙ্গেই ভাব জমাত এই জঙ্গি নেতা। পরে আরও বেশি বয়সের মহিলাদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব পাতায় সে। তাতে আপত্তি করে তার এক তরুণী বান্ধবী। ফলে ওই তরুণীকে খুনের হুমকি দেয় বুরহান। শেষ পর্যন্ত পুলিশকে বুরহানের নির্দিষ্ট অবস্থান জানিয়ে দেয় ওই তরুণীই।

যে ভাবেই হোক, বুরহানের নাগাল পাওয়াকে বড় সাফল্য বলে মনে করছে বাহিনী। আজ বুরহানের দেহ যখন বাড়িতে আনা হয় ত্রালে তখন শেষ বিকেলের আলো। বুরহানকে শেষ বার দেখতে ভিড় করেছেন হাজার হাজার মানুষ। শেষকৃত্যের সময়ে ইদগাহে ঢুকতেও পারেননি সকলে। অনেকেই উত্তেজিত। তারই মধ্যে শান্ত গলায় লরিগাম এলাকার সরকারি স্কুলের প্রাক্তন প্রিন্সিপ্যাল, মুজফ্ফর ওয়ানি বললেন, ‘‘আমার ছেলের জন্য প্রার্থনা জানাতেই পারেন। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবেন না। ওটা আমাদেরই সম্পত্তি।’’

Burhan Wani kashmir killing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy