E-Paper

এখনও অধরা পহেলগামের জঙ্গিরা

কারা সেদিন নিরীহ পর্যটকদের বেছে বেছে হত্যা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বৈসরন উপত্যকা তোলপাড় করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৫ ০৭:৪০
পাক গোলাবর্ষণে নিহত জ়াকির হুসেনের শোকার্ত পরিবার। শনিবার, জম্মুতে।

পাক গোলাবর্ষণে নিহত জ়াকির হুসেনের শোকার্ত পরিবার। শনিবার, জম্মুতে। ছবি: পিটিআই।

আজ থেকে ১৮ দিন আগে, কাশ্মীরে স্বর্গের মতো বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের রক্তস্রোত বইয়ে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। ২৫ জন পর্যটক আর কাশ্মীরের ভূমিপুত্র এক টাট্টুওয়ালার মর্মান্তিক জীবনাসানের খবরে গোটা দেশ যখন ক্ষোভে ফুটছে, তখন ধাপে ধাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কড়া কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। তারপর পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ভিতরে থাকা জঙ্গি শিবিরগুলি ধ্বংস করতে গভীর রাতে ভারতের আচমকা হামলা— অপারেশন সিঁদুর। ভারতের প্রত্যাঘাতের পর কয়েকদিন ধরে দিনে রাতে পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই এবং অবশেষ সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা। কিন্তু এত কিছুর পরে, আজও অধরাই থেকে গেল পহেলগামের জঙ্গিরা।

কারা সেদিন নিরীহ পর্যটকদের বেছে বেছে হত্যা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বৈসরন উপত্যকা তোলপাড় করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তথ্যপ্রমাণ জোগাড় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তদন্তকারীদের নিজস্ব সূত্রে এনআইএ জানতে পেরেছে, বৈসরনের হত্যালীলায় অন্ততপক্ষে পাঁচ থেকে সাতজন জঙ্গির যোগ ছিল। তাদের চিহ্নিতও করেছে এনআইএ। ঘটনার পর যে সব জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করেছিল এনআইএ, তাদের মধ্যে পুলওয়ামার বাসিন্দা আসিফ শেখ ও অনন্তনাগের বাসিন্দা আদিল ঠোকারের বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অবশ্য সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে যে দিন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিদের আস্তানা ক্ষেপণাস্ত্র হানায় গুড়িয়ে দিয়েছে ভারত, সেদিনই এনআইএ-র তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ৫০ বছর বয়সি শেখ সাজ্জাদ গুল পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের মূল মাথা। লস্কর-ই তইবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্টেন্স ফ্রন্টের (টিআরএফ) সংগঠনের শীর্ষ পদে সে-ই বসে রয়েছে। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির বাসিন্দা শেখ সাজ্জাদ গুল, নাম ভাড়িয়ে যে সাজ্জাদ আহমেদ শেখ নামেও পরিচিত, এই জঙ্গিটি তার জীবনে বৈসরনেই প্রথমবার হত্যালীলা চালায়নি। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তার। ২০২০ ও ২০২৪ সালে মধ্য ও দক্ষিণ কাশ্মীরে রক্ত বইয়েছে সে। এছাড়া, ২০২৩ সালে মধ্য কাশ্মীরে গ্রেনেড হামলা কিংবা অনন্তনাগে পুলিশকর্মী হত্যা— একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে গিয়েছে শেখ সাজ্জাদ গুল। এনআইএ তার মাথার দাম ঘোষণা করেছে দশ লক্ষ টাকা। কিন্তু পহেলগাম হামলার মূল চক্রী এখন কোথায়— সেই খবর তদন্তকারীদের সামনে নেই।

যে ঘটনা শুধু ভারত কেন, গোটা দুনিয়াকে আলোড়িত করেছে, পহেলগামের সেই হামলাকারী জঙ্গিরা কোথায়, সেই প্রশ্নে নিরুত্তর নিরাপত্তা বাহিনী এবং এনআইএ এখন নীরব। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য পেতে আপাতত দেশবাসীর কাছে আবেদন করেছে এনআইএ। ঘটনার পরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সন্দেহভাজন চার জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু একটি সূত্রের দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীদের মারফত জঙ্গিদের যে বিবরণ এনআইএ-র কাছে জমা পড়েছে, তার সঙ্গে আগের স্কেচের ফারাক রয়েছে। সম্ভবত সংশয় এড়াতে ফের প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। হামলার সময়ের একাধিক ছবি, ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে। এনআইএ সেই সব ভিডিয়ো, ছবিও খতিয়ে দেখছে। এনআইএ-এর মতে, পর্যটক এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ঘটনার দিনে, ঘটনা ঘটার আগে বা পরে কিছু শুনেছেন, দেখেছেন, ছবি তুলেছেন। এ ধরনের যে কোনও তথ্য তদন্তে সাহায্য করতে পারে। তবে পহেলগাম কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি বা জঙ্গিদের গতিবিধি সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের মতে, গোয়েন্দারা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন যে ভাবে ঘটনার এত দিন পরেও জঙ্গিরা যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট, ওই এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে সাহায্য পাচ্ছে জঙ্গিরা। আপাতত সেই স্থানীয় সাহায্যকারীদের চিহ্নিত করাই সবচেয়ে বড় লক্ষ্য গোয়েন্দাদের।

পহেলগামের হত্যালীলার বিচার চেয়ে গোটা ভারতের চাপের মুখে অধরা জঙ্গিদের খুঁজে বার করাই এখন চ্যালেঞ্জ তদন্তকারীদের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pahalgam Terror Attack Pahalgam Incident Jammu and Kashmir

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy