গুজরাতের অহমদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্তম্ভিত তাইল্যান্ডের অভিনেতা তথা সঙ্গীতশিল্পী রুয়াংসাক লয়চুসাক। এই খবর তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছে ২৭ বছরের পুরনো একটি ঘটনার কথা। তিনিও ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। তাই এয়ারওয়েসের যে বিমানে তিনি ছিলেন, সেটি অবতরণের সময়ে জলাভূমিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু রুয়াংসাক বেঁচে গিয়েছিলেন। দাবি, তাঁকেও বাঁচিয়ে দিয়েছিল সেই ১১এ। বিমানের যে আসন অহমদাবাদের দুর্ঘটনার পর চর্চায় উঠে এসেছে। কারণ, বিমানের বাকি সকলের মৃত্যু হলেও ওই আসনের যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশ বেঁচে গিয়েছেন। তিনিই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির একমাত্র জীবিত যাত্রী, বসেছিলেন আপৎকালীন দরজার পাশে ১১এ আসনে।
অহমদাবাদের বিমানটিতে যাত্রী এবং বিমানকর্মী-সহ মোট ২৪২ জন ছিলেন। ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিমানটি রানওয়ে ছেড়ে কিছুটা ওড়ার পরেই লোকালয়ে একটি বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খায় এবং ভেঙে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে বিমানে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন ধরে যায়। এখনও ভেঙে পড়া বিমানের ধ্বসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা ২৭৪-এ পৌঁছে গিয়েছে। হাসপাতাল থেকে রমেশ জানিয়েছেন, কী ভাবে এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার পরেও তিনি বেঁচে গেলেন, তা নিজেও বুঝতে পারছেন না। ওই বিমানেই ছিলেন রমেশের ভাই, যাঁর মৃত্যু হয়েছে। রমেশের এই কাহিনি পৌঁছেছে তাইল্যান্ডেও। যা শুনে রুয়াংসাক সমাজমাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। অহমদাবাদের বিমানের একমাত্র জীবিত যাত্রীর আসনসংখ্যার সঙ্গে তাঁর আসনসংখ্যাও মিলে গিয়েছে বলে দাবি। তিনি জানিয়েছেন, ২৭ বছর আগের সেই অভিশপ্ত বিমানে তিনিও ১১এ-তে বসেছিলেন।
আরও পড়ুন:
ফেসবুকে তাইল্যান্ডের স্থানীয় ভাষায় পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন রুয়াংসাক। ১৯৯৮ সালের ১১ ডিসেম্বর রুয়াংসাকের বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। তাই এয়ারওয়েসের টিজি২৬১ বিমানে ছিলেন তিনি। বিমানটি দক্ষিণ তাইল্যান্ডে অবতরণের সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে জলাভূমিতে। সেই বিমানে মোট ১৪৬ জন ছিলেন। ১০১ জনেরই মৃত্যু হয়েছিল। গুটিকয়েক যে ক’জন বেঁচে গিয়েছিলেন, রুয়াংসাক তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
রমেশের ‘মিরাক্ল’-এর কথা শুনে তাঁর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, দাবি রুয়াংসাকের। লিখেছেন, ‘‘ভারতে বিমান দুর্ঘটনার একমাত্র জীবিত যাত্রী আমার মতোই সেই ১১এ সিটে বসেছিলেন!’’ যদিও ২৭ বছরের পুরনো সেই বিমানের ‘বোর্ডিং পাস’ এখন আর তাঁর কাছে নেই, জানিয়েছেন রুয়াংসাক। তবে তাঁর দাবি, সেই সময়ের একাধিক সংবাদপত্রে তাঁর আসনসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছিল। এখনও ঘাঁটলে তা পাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া, তাঁর নিজেরও খুব ভাল করে আসনের নম্বর মনে আছে।
অভিশপ্ত সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে রুয়াংসাক জানান, সে দিন তিনি নতুন জীবন পেয়েছিলেন। এটি তাঁর ‘দ্বিতীয় জীবন’। এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি তাই সমবেদনা জানিয়েছেন তারকা। এর আগেও একাধিক বার তিনি ওই দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন। ঘটনার পর দীর্ঘ কয়েক দশক তিনি আর বিমানেই ওঠেননি। ২৭ বছর আগে দুর্ঘটনাস্থল থেকে রুয়াংসাকের একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। সেখানে দেখা গিয়েছে, দু’জন উদ্ধারকারী ধরাধরি করে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ওই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
অহমদাবাদের দুর্ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে রমেশ বলেছেন, ‘‘বিমান ওড়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড পর একটা প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। তার পরেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। সব কিছু খুব দ্রুত ঘটে গিয়েছিল। যখন উঠে দাঁড়াই, চারপাশে শুধু লাশ আর লাশ। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উঠেই আমি দৌড়তে শুরু করি। চারপাশে বিমানের অনেক টুকরো পড়েছিল। তার পর কেউ আমাকে টেনে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলল।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনিতে আমার সিটটা খুলে এসেছিল। তাই হয়তো আমি বেঁচে গিয়েছি। আমি যে দিকে পড়েছিলাম, সেখানে হস্টেলের একতলার ফাঁকা জায়গা ছিল কিছুটা। সেখান দিয়ে আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু উল্টো দিকে হস্টেলের দেওয়াল ছিল। সে দিক থেকে হয়তো কেউ বেরোতে পারেনি। আমার বাঁ হাত একটু পুড়ে গিয়েছে।’’ রমেশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। ফিরছিলেন লন্ডনে। তাঁর বেঁচে থাকার খবর পেয়েই নিজের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন তাইল্যান্ডের রুয়াংসাক।