জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়, আজ দুপুরে এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আর রাতেই জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত বিল নিয়ে রাজ্যসভাতে আলোচনায় অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘এত কিছুর পরেও বিরোধীরা বলছেন ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ অনুচিত। এরা আসলে পরাজয়ের মধ্যে নিজেদের জয় খুঁজে পান। আমি হলে তো এক মাস সংসদেই আসতাম না।’’ চিরাচিত ভাবে, কাশ্মীর সমস্যার জন্য দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিরোধীরা কক্ষত্যাগ করায় আজ রাজ্যসভাতেও ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় জম্মু-কাশ্মীর সংশোধিত পুনর্গঠন বিল ও জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল। এরপর রাষ্ট্রপতি এতে সই করলে যা আইনে পরিণত হবে।
২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যদা প্রত্যাহার সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নিজেদের রায়ে আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন করানোর নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ মর্যদা প্রত্যাহারের পরে কেটে গিয়েছে চার বছর। তাই লোকসভার মতোই রাজ্যসভাতেও আজ বিরোধীরা গোড়া থেকেই ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দাবি তোলেন। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট এ নিয়ে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আসলে তাঁদের জয় বলে দাবি করেন কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি-পবন খেড়ারা। কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘এত দেরি করে নির্বাচন করার কী প্রয়োজন! আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুত রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হোক জম্মু-কাশ্মীরকে।’’ জবাবে শাহ বলেন, ‘‘সরকারও সংসদে জানিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন হবে।’’
প্রথমে সংসদ, তার পরে রাষ্ট্রপতির সই ও শেষে সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেস আজ দাবি করেছেন ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার সঠিক ছিল না। পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘আমরা সম্মানের সঙ্গে ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে অসহমতি প্রকাশ করছি।’’ নেহরুকে দোষারোপ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাল্টা, ‘‘আজ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারতের অংশ কোনও রাজ্যের সার্বভৌম ক্ষমতা থাকতে পারে না। নেহরুও সে সময়ে বিশেষ মর্যাদাকে অস্থায়ী ধারা হিসাবে যোগ করেছিলেন। তিনি যদি মনে করতেন ওই ধারা জরুরি তা হলে তা স্থায়ী ধারা হিসাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতেন। আসলে যাঁরা নেহরুর প্রশংসা করেন, তাঁরা অন্ধ ভাবে তাঁকে মেনে চলতে গিয়ে সংবিধান সভাকে, সংবিধানকে অপমান করছেন।’’ যদিও চিদম্বরমের মতে, এ কথা ঠিক, অচ্ছেদ ৩৭০ অস্থায়ী ধারা। কিন্তু যে ভাবে তা প্রত্যাহার হয়েছে তা কি সঠিক ভাবে হয়েছে?
শাহ দাবি করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা থাকার কারণেই সেখানে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা এত গভীরে পৌঁছেছে। তাঁর যুক্তি, ‘‘অনুচ্ছেদ ৩৭০ আসলে সন্ত্রাসবাদকেই উৎসাহ দিয়েছে।’’ পাশাপাশি, মোদী জামানায় বিশেষ করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে কী ভাবে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ কমেছে, পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন শাহ।
লোকসভাতে ওই বিল সংক্রান্ত আলোচনায় কাশ্মীর প্রশ্নে নেহরুর দু’টি ভুল নিয়ে সরব হয়েছিলেন শাহ। আজকের বিতর্কেও ওই বিষয়গুলি তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, নেহরুর জন্যই কাশ্মীরে সেনা পাঠাতে দেরি হয়েছিল। শাহের মতে, শেখ আবদুল্লাকে বিশেষ পদ পাইয়ে দেওয়ার জন্যই ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযুক্তিকরণ
দেরিতে হয়। তিনি দাবি করেন, জুনাগড়, হায়দরাবাদ, যোধপুর, লাক্ষাদ্বীপের মতো এলাকাগুলির সংযুক্তিকরণে বল্লবভাই পটেল থাকায় কোনও সমস্যা হয়নি। নেহরু কেবল কাশ্মীরের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। নেহরুর নীতির দিকে আঙুল তুলতেই আজ লোকসভার ধাঁচে রাজ্যসভাতেও ওয়াক আউট করে কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির।
ফলে বিরোধী শূন্য রাজ্যসভাতেও ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় ওই বিল দু’টি। এর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর সংশোধিত পুনর্গঠন বিলে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার আসনসংখ্যা ৮৩ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)