Advertisement
E-Paper

ক্যানসারের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়াই! স্ত্রীর পাশে থাকতে লুক বদলালেন এই যুবক

দু’জনে ভিন ধর্মের। শানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টা শ্রুতির বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। ভিন ধর্মের ছেলের সঙ্গে সম্পর্কটা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না শ্রুতির পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০০
শ্রুতি ও শান।

শ্রুতি ও শান।

স্ত্রী ক্যানসার আক্রান্ত। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, স্টেজ ফোর-এ পৌঁছে গিয়েছে এই মারণ ব্যাধি। চিকিৎসকদের কাছ থেকে খবরটা পেয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন শান। কিন্তু সেই আঁচ লাগতে দেননি স্ত্রী শ্রুতির মনে। অভয় দিয়ে গিয়েছেন প্রতি মুহূর্তে। প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করেছেন স্ত্রীকে আরও বেশি খুশি রাখতে।

শ্রুতি নিজেও জানেন, মৃত্যু তাঁর শিয়রে হাজির। কিন্তু তাতে তাঁর পরোয়া নেই। শানের ভালবাসার বন্ধন যে ভাবে আগলে রেখেছে, এর থেকে বড় পাওনা তাঁর জীবনে আর কী-ই বা হতে পারে!

চিকিৎসার কারণে শ্রুতির চুল প্রায় উঠে গিয়েছে। মাথা ন্যাড়া। এক সময় চুলে ফুল লাগিয়ে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো সেই শ্রুতির আজ এই রূপ দেখে মন ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল শানের। তাই স্ত্রীকে উপহার দিতে নিজেই ন্যাড়া হয়ে যান তিনি। শ্রুতিকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলে সেই ছবি শেয়ারও করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কেরলের বাসিন্দা শান ইব্রাহিম বাদশাহ ও শ্রুতি। কলেজে পড়ার সময়ে তাঁদের দু’জনের আলাপ হয়েছিল। কিন্তু সেই আলাপটাও ছিল অদ্ভুত। একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

সাল ২০১৪। ওনাম উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল কলেজে। শান-শ্রুতির আলাপের সূত্রপাতটা এখান থেকেই। দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ান-কে শান সাক্ষাৎকারে জানান, এক তরুণীকলেজের বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে তাঁকে দেখিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছোড়েন।বলেছিলেন, “কানে জবা ফুল গুঁজে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যেতে হবে।”চ্যালেঞ্জটা লুফে নিয়েছিলেন শান, কিন্তু পাল্টা একটা চ্যালেঞ্জও তিনি ছুড়েছিলেন। শান বলেছিলেন, “আমি এটা করতে পারি একটা শর্তেই, যদি কলেজেরই কোনও মেয়ে আমার হাত ধরে হাঁটে!” এ ভাবেই আলাপের সূত্রপাত শ্রুতি-শানের। তার পর ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দু’জনের। কিন্তু এ পর্যন্তই ‘হ্যাপি জার্নি’ ছিল তাঁদের জীবনে। এর পর শুরু হয় সঙ্ঘাতের পর্ব।

আরও পড়ুন: নিজের গড়া তাজমহলে ‘মুমতাজের পাশেই’ ফের শায়িত হবেন ‘শাহজাহান’!

দু’জনে ভিন ধর্মের। শানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টা শ্রুতির বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। ভিন ধর্মের ছেলের সঙ্গে সম্পর্কটা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না শ্রুতির পরিবার। হুমকি দিয়েছিলেন, মেলামেশা করলে পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অশান্তির খবর শান আগেই পেয়েছিলেন। কিন্তু শ্রুতির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, এটা কোনও মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। শ্রুতির বাড়িতে গিয়ে কথাও বলেন শান। কিন্তু তাঁরা নাছোড় ছিলেন।সমস্যা শুরু হয় শানের বাড়িতেও। ভিনধর্মী হওয়ায় শ্রুতিকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের সম্পর্কে দুই পরিবারের অমত। কলেজের পাট চুকতেই শ্রুতির বাড়ি থেকেপাত্র খোঁজা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু শ্রুতি বেঁকে বসেন। সাফ জানিয়ে দেন, বিয়ে করলে শানকেই করবেন। ও দিকে, শানের পরিবার তাঁকে জানিয়ে দেয়, শ্রুতিকে যদি বিয়ে করতেই হয়, তা হলে তাঁকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু পরিবারের এই প্রস্তাবে রাজি হননি শান। অবশেষে ২০১৭-য় স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী দু’জনে বিয়ে করেন।

পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে তো জিতেছিলেন দু’জনেই। কিন্তু আরও বড় সঙ্ঘাত যে তাঁদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি শ্রুতি-শান। কাজ পেয়ে শ্রুতিকে নিয়ে হায়দরাবাদে চলে আসেন শান।সেখানেই সংসার পাতেন। হঠাৎ এক দিন শ্রুতি লক্ষ্য করেন তাঁর ঘাড়ের এক দিকটা ফুলে উঠেছে। প্রথমে খুব একটা আমল দেননি। কিন্তু কিছু দিন যেতেই ঘাড়ের অন্য পাশটাও ফুলে উঠতে শুরু করে। চিকিৎসকরা জানান, শ্রুতির যক্ষ্মা হয়েছে। চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। ব্যথায় ক্রমশ কুঁকড়ে যেতে থাকলেন শ্রুতি। এ বছরের জুনে কোচিতে চিকিৎসার জন্য শ্রুতিকে নিয়ে যান শান। তাঁদের জন্য সেখানে অপেক্ষা করে ছিল ভয়ানক এক খবর। পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন শ্রুতি লিম্ফোমায় আক্রান্ত। স্টেজ ফোর।

আরও পড়ুন: আগরা অগ্রবন হলে শাহ কেন অমিত? প্রশ্ন তুললেন ইতিহাসবিদ

খবরটা শুনেই মাথায় বজ্রাঘাত হয় শানের। সমাজ, পরিবারের সঙ্গে লড়াই করেছেন শ্রুতির জন্য। কিন্তু এ তো জীবনের সঙ্গে লড়াই! এই যুদ্ধ জয় করাই শানের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কলেজ জীবনে এই শ্রুতিই তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন। চার বছর পেরিয়ে আবারও শ্রুতি তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। সে দিন গর্বের সঙ্গে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছিলেন শান। চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি মন জিতে নিয়েছিলেন শ্রুতির। কিন্তু আজ যা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন শ্রুতি, তা কি পারবেন জয় করতে শান! হয়তো না, হয়তো বা হ্যাঁ। তবে একটা আশঙ্কা ক্রমশ যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে শানকে।

তাই যেটুকু সময় তিনি পাচ্ছেন, শ্রুতিকে আগলে রাখছেন। শ্রুতির ভাললাগাটাকে নিজের ভাললাগায় পরিণত করেছেন। চিকিৎসার কারণে শ্রুতিকে চুল খোয়াতে হয়েছে। শানও নিজের মাথা মুড়িয়ে দিয়েছেন।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

Cancer Kerala কেরল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy