উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে বলা হয়, রাজ্যের ছ’টি জেলা লখনউয়ের মসনদের হকদারকে বেছে নেয়। সেই ছ’টির মধ্যে আগামিকাল নির্বাচন হতে চলেছে পাঁচটিতে। লখনউ থেকে লখিমপুর খেরি, উন্নাও থেকে রায়বরেলীর মানুষ আগামিকাল পথে নামছেন ভোট দিতে।
উত্তরপ্রদেশের চতুর্থ দফার ভোটে মোট ৯টি জেলায় আগামিকাল ৫৯টি আসনে ভোট হতে চলেছে। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে লখনউ, হরদোই, সীতাপুর, উন্নাও, রায়বরেলী ও বারাবাঁকী-এই ছটি জেলায় যারা ভাল ফল করে তারাই লখনউয়ের মসনদ দখল করে থাকে। এর মধ্যে কেবল বারাবাঁকী জেলায় আগামী পর্বে ভোট রয়েছে। স্বভাবতই বাকি পাঁচটি জেলায় যারা ভাল ফল করবেন সেই দল ভোটের লড়াইতে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। গত বিধানসভার পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাবে, ৬০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৫১টি আসনে। শরিক আপনা দল (সোনেলাল) জেতে একটি আসনে। ৫৯টির মধ্যে এনডিএ একাই ৫২টি আসন জেতায় কার্যত প্রতিরোধ গড়তে পারেননি বিরোধীরা।
কিন্তু পাঁচ বছরে লখনউয়ের গোমতী নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। যোগীর শাসনের গোড়ায় যেমন উন্নাওয়ের ঘটনা ঘটেছে তেমনই শেষ বেলায় হয়েছে লখিমপুর খেরি কাণ্ড। উন্নাওয়ের ঘটনায় এক দিকে যেমন যোগী শাসনের উপরে ভরসা হারিয়েছে দলিত সমাজ তেমনই লখিমপুর খেরি কাণ্ডে কৃষকদের গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কৃষকদের প্রতি বিজেপি নেতাদের প্রকৃত মনোভাব নিয়ে। কৃষি আইন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে কৃষকদের ক্ষোভ তো ছিলই, উপরন্তু খেরি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিসের সরাসরি জড়িয়ে যাওয়া শাসক শিবিরকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। নির্বাচনের মাঝে অন্তর্বর্তী জামিনে ছাড়া পেয়েছেন আশিস। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, স্থানীয় ব্রাহ্মণ সমাজের পাশে থাকার বার্তা দিতে ব্রাহ্মণ নেতা অজয়ের ছেলে জামিনে মুক্তি পান। এতে ব্রাহ্মণ সমাজ আশ্বস্ত হলেও, খেরি জেলায় কৃষকদের মধ্যে বিজেপি প্রার্থীর প্রতি তীব্র অসন্তোষ যে রয়েছে তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। অন্য দিকে বান্দা বা ফতেহপুরের মতো বুন্দেলখণ্ড এলাকায় উন্নয়নকে পিছনে ফেলে ভোটে জিততে সব দলই ভরসা করছে জাতপাতের অঙ্কে। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, গত তিন বারের মতো যাদব নয় এমন পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোট যদি তাদের পিছনে এসে দাঁড়ায় তাহলে বিজেপি প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। সেই কারণে নরেন্দ্র মোদী থেকে যোগী আদিত্যনাথ সকলেই যাদব আমলে দুষ্কৃতী রাজের পুরনো ইতিহাসকে উস্কে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন। অন্য দিকে অখিলেশ ভরসা রেখেছেন চিরাচরিত যাদব ও মুসলিম ভোটের একজোট হওয়ার উপরে। অখিলেশ জানেন, মুসলিম ও যাদব ভোট বিভাজন না হলে বিজেপির পক্ষে তাঁকে রোখা মুশকিল হবে।
এ বারের পর্বে ভোট রয়েছে গান্ধী পরিবারের দুই গড়ে। এর মধ্যে পিলিভিত লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বিজেপি নেতা বরুণ গান্ধী হলেও, বিগত কিছু দিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ উঠেছে। ভোট চলাকালীন ধারাবাহিক ভাবে দল ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও ভূমিকা নিয়ে সমাজমাধ্যমে বরুণ সরব থাকলেও, উত্তরপ্রদেশে দলের প্রচারে এক বারের জন্যও দেখা যায়নি তাঁকে। আগামিকাল লড়াই হবে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর লোকসভা কেন্দ্র রায়বরেলীতে। মূলত রায়বরেলী-সহ উত্তরপ্রদেশে এ বারের নির্বাচনে লড়ার যাবতীয় দায়িত্ব একাই নিয়েছিলেন কন্যা প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। শুধু তাই নয়, রায়বরেলী লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা বিধানসভাগুলির মধ্যে মোট ক’টিতে কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে তারও পরীক্ষা হতে চলেছে আগামিকাল।