Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
National News

‘ওরা গরু মেরেছে, আমি ওদের মেরেছি’, গোপন ক্যামেরায় স্বীকারোক্তি

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হাপুর জেলার বাজেখুর্দ গ্রামের বাসিন্দা রাকেশ।সম্প্রতি এনডিটিভি-রএকটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিল। গোপন ক্যামেরায় রাকেশের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ১৪:৪৭
Share: Save:

সদর্পে কথাগুলো বলতে শোনা গেল রাকেশ সিসৌদিয়াকে। বলতে বলতে তাঁর চোখে-মুখে একটা রূঢ় ভাব ফুটে উঠল যেন।হাবে ভাবে মনে হচ্ছিল, তিনি যে কাজটা করেছেন সেটা ‘গর্ব’ করার মতো! তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘ওরা গরু কাটছিল। আমি ওদের কেটে ফেলেছি।’’

গত ১৮ জুন উত্তরপ্রদেশের হাপুরে গরু চুরির অভিযোগে বছর পঁয়তাল্লিশের কাশিম কুরেশিকে পিটিয়ে খুন করে একদল লোক। তাঁর সঙ্গী সমীউদ্দিনকেও বেধড়ক মারা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। কাশেম কুরেশি খুনে অন্যতম অভিযুক্ত রাকেশ। আদালতে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন ওই ঘটনায় তাঁর কোনও যোগ নেই। এমনকি, ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিতই ছিলেন না। জেল হেফাজতে থাকার পর এখন জামিনে মুক্ত। কিন্তু আদালতে যা বলেছিলেন, ঠিকতার উল্টো কথা শোনা গেল রাকেশের মুখে। তিনি যে ওই ঘটনায় জড়িত সে কথা, নিজের মুখেই স্বীকার করলেন। আর সমস্ত কথোপকথন রেকর্ড হয়ে থাকল এনডিটিভি-র গোপন ক্যামেরায়।

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হাপুর জেলার বাজেখুর্দ গ্রামের বাসিন্দা রাকেশ।সম্প্রতি এনডিটিভি-রএকটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিল। গোপন ক্যামেরায় রাকেশের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়। সেখানে রাকেশকে বলতে শোনা গিয়েছে, “ওরা গরু মেরেছে, আমরা তাই ওদের খতম করেছি।” জেলে থাকাকালীন জেলরকেও তিনি গর্বের সঙ্গে এ কথা বলেছিলেন। রাকেশ বলেন, “এই প্রথম জেলে গেলাম। স্বাভাবিক ভাবে ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু, আমি ভয় পাইনি। জেলে গিয়েও বেশ হইচই করেছি জেলরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।” জেলর নাকি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, কোন কেসের আসামি?তাঁকেও একই কথা শুনিয়ে এসেছেন। রাকেশের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ৩০৭ ধারায় মামলা হয়। কিন্তু, জামিনে শেষমেশ ছাড়া পেয়ে যান। সেই ছাড়া পাওয়ার কয়েক দিন পরেই অন্য কথা শোনা গেল রাকেশের মুখে।

আরও পড়ুন: নিতিন গডকড়ীর ভুল চালকেই হাতিয়ার করে প্রশ্ন রাহুলের, ‘দেশে কাজ কই?’

তিনি যে ‘বাহাদুরি’র কাজ করেছেন সেটাও জানিয়েছেন। জেল থেকে যে দিন ছাড়া পেলেন, সে দিন ৩-৪টে গাড়ি করে লোক তাঁকে নিতে এসেছিল। তাঁরা রাকেশের নামে স্লোগান তুলছিলেন, ‘রাকেশ সিসৌদিয়া জিন্দাবাদ’। রাকেশ জানান, যে ভাবে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছিল তা দেখে গর্ববোধ হচ্ছিল তাঁর। মনে হচ্ছিল যেন একটা যুদ্ধ জয় করে ফিরেছেন!

রাকেশ এটাও জানান, তাঁর একটা গোটা ফৌজ রয়েছে। হুমকির সুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “কেউ যদি গরু কাটে, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের কেটে ফেলব।” এ জন্য যদি হাজার বার জেল খাটতে হয়, তাতেও তিনি রাজি!পুলিশ প্রশাসন সঙ্গে আছে বলেই যে এ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে, সেটাও জানান রাকেশ। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “পুলিশ সরকারের। আর সে কারণেই এ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। আজম খান ক্ষমতায় থাকলে কি এ সব সম্ভব হত! মোটেও না।”

কী ভাবে কাশিমকে মেরেছেন সেটাও জানিয়েছেন রাকেশ। মারের পর মার চলছিল। আশপাশে ভিড় জমেছিল বেশ। তাঁদের মধ্যে থেকেই কেউ বলেন, কাশিমকে একটু জল দিতে। কিন্তু না, কাশিমকে জল দেওয়া হয়নি সে সময়। উল্টে বলা হয়েছিল, গরুকে মারার সময় জল দিয়েছিস? তুইও জল পাবি না। মারতে মারতে শেষে মরেই যায় কাশিম!

একই রকম ভাবে অন্য একটি পিটিয়ে খুনের ঘটনার এক অভিযুক্ত নিজের ‘কীর্তি’র কথা স্বীকার করেছেন। সে ক্ষেত্রেও তাঁর কথোপকথন গোপন ক্যামেরায় রেকর্ড করেছে এনটিভি-র এক প্রতিনিধি দল।

আরও পড়ুন: আঁধার ঘনালেই হোমের সামনে দাঁড়াত সাদা-কালো গাড়ি, তার পর…

২০১৭-র এপ্রিলে রাজস্থানের অলওয়ারে পহেলু খানের ঘটনা গোটা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। পহেলুর বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ উঠেছিল। তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল।সেই ঘটনায় ন’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তবে এখন তাঁরা প্রত্যেকেই জামিনে মুক্ত। তাঁদের মধ্যেই এক জন বিপিন যাদব। যদিও তিনি দাবি করেন, এই হত্যার সঙ্গে তিনি ও তাঁর দলবল মোটেই জড়িত নন। কিন্তু এনডিটিভি-র প্রতিনিধিদের গোপন ক্যামেরায় অকপট স্বীকারোক্তি ধরা পড়ে বিপিনের। কী ভাবে পহেলুকে মারা হয়েছিল সে বর্ণনাও দেন তিনি।

বিপিন জানান, পহেলুর গাড়ি ধাওয়া করেন তিনি ও তাঁর দলবল। গাড়ি থেকে নামিয়ে চাবি কেড়ে নেওয়া হয়। প্রথমে ১০ জন ছিলেন তাঁরা। পরে আরও ২০ জন আসে। দেখতে দেখতে প্রায় ৫০০ জন হাজির হয় সেখানে। শুরু হয় মার। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে সেই পর্ব চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE