গান্ধী বা সুভাষচন্দ্রের পথ থেকে যেন ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে এ দেশ। বৃহস্পতিবার সাঁতরাগাছির দ্বীনিয়ত মুয়াল্লিমা কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ইতিহাসবিদ সুগত বসুর কণ্ঠে সেই আক্ষেপই গাঢ় হল। হরিয়ানার নুহে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে সুগত বললেন, “দেশভাগের সময়ে গান্ধীজির আশ্বাসেই হরিয়ানার নুহে মুসলিমেরা থেকে গিয়েছিলেন। আজ দেশের কী দুঃসময় যাচ্ছে…চারদিকে খালি ভেদাভেদ! নুহে গান্ধীজির আশ্বাস পর্যন্ত আমরা রক্ষা করতে পারিনি।”
এর ঠিক আগেই মণিপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজের যুদ্ধের সময়ে সুভাষচন্দ্রের সান্নিধ্যে মেইতেই, কুকি, মুসলিম, হিন্দু সবার সংগঠিত হওয়ার কথাও বলছিলেন সুগত। আজকের ভারতের সঙ্গে যার ফারাকটা সহজেই প্রকট। ‘নো ইয়োর নেবর’ এবং দ্বীনিয়ত মুয়াল্লিমা কলেজের যৌথ উদ্যোগে বক্তৃতা-আসরটিতে প্রধানত সুভাষচন্দ্রের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ‘সাংস্কৃতিক সান্নিধ্য’ তথা ‘কালচারাল ইন্টিমেসি’-র দর্শন নিয়ে বলেন সুগত। ১৯২৮-এর মে মাসে পুণেয় একটি বক্তৃতায় সুভাষ প্রথম ‘কালচারাল ইন্টিমেসি’র বিষয়ে বলেন। সুগতের ব্যাখ্যা, “সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, আমাদের দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ দূরে দূরে থাকেন। পরস্পরের আচার বিষয়ে জানা উচিত। সামাজিক ভাবে, সাংস্কৃতিক ভাবে আমাদের আরও কাছাকাছি আসতে হবে।”
সুভাষ-জীবন মানেই এই সাংস্কৃতিক সান্নিধ্য চর্চার ফলিত প্রয়োগ। দেশবন্ধুর আদর্শে প্রাণিত হয়ে তরুণ সুভাষচন্দ্র কলকাতা পুরসভায় মুসলিম তথা অনগ্রসরদের কাজের ন্যায্য অধিকার নিয়ে লড়াই করেন। আজ়াদ হিন্দ ফৌজেও তাঁর সহচরেদের মধ্যে অগ্রগণ্য মহম্মদ জমান কিয়ানি, আবিদ হাসান, সিরিল জন স্ট্রেসিরা। জনৈক ছাত্রীর প্রশ্নের জবাবে সুগত বলেন, “নেতাজি পার্থক্য বজায় রেখে ঐক্য গড়াতেই বিশ্বাসী ছিলেন।” সুভাষ-কথিত সবার জন্যশিক্ষার রূপায়ণে ব্যর্থতা নিয়েও তিনি আক্ষেপ করেন।
আজকের ভারতের ইতিহাস চর্চা প্রসঙ্গেও সুগত বলেন, “ইদানীং শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে চর্চা হলেও সুভাষ-অগ্রজ শরৎচন্দ্র বসুর লড়াই মনে রাখা হয় না। তবে রাষ্ট্র হয়তো আগেও সুভাষচন্দ্রকে প্রাপ্য সম্মান দেয়নি। কিন্তু তবুও মানুষের মনে তাঁর সিংহাসনটি অটুট।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)