বিরোধীদের পায়ের তলা থেকে সব জমি নিঃশেষে কেড়ে নেওয়াই কি লক্ষ্য? প্রশ্ন গোটা দেশেই।—ফাইল চিত্র।
এক বছরে চার বার। জনাদেশ বিজেপির পক্ষে না থাকা সত্ত্বেও গত এক বছরে দেশের অন্তত চারটি রাজ্যে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে নিল বিজেপি। তিনটি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদও বিজেপি নিজেদের দখলে রাখল। একটিতে মুখ্যমন্ত্রিত্ব শরিক দলকে ছেড়ে উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব নিল গেরুয়া ব্রিগেড। এই সাত মাসে খুব স্পষ্ট করেই মোদী-শাহ জুটি বুঝিয়ে দিল, বিরোধীদের পায়ের তলা থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ যে দিকে থাকবে, সে দিকেই হাত বাড়াবে বিজেপি। যে পথেই হোক, সরকারের দখল নেওয়াই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজেপির কাছে।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দলত্যাগ ৬ বিধায়কের, বাঘেলা-ধাক্কায় বিপাকে গুজরাত কংগ্রেস
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দলত্যাগ ৬ বিধায়কের, বাঘেলা-ধাক্কায় বিপাকে গুজরাত কংগ্রেস
বিহার:
সাম্প্রতিকতম নিদর্শন অবশ্যই বিহার। ২০১৫-র বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে শোচনীয় পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল বিজেপিকে। জেডি (ইউ)-আরজেডি-কংগ্রেসের মহাজোট ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় ১৭৮টি আসনের দখল নিয়েছিল। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ আটকে গিয়েছিল ৫৮-তে। কিন্তু মহাজোটের সরকার ২০ মাসের বেশি টিকল না। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার নিজেই নিজের সরকার ভেঙে দিলেন। এক ঘণ্টার মধ্যে বিজেপির হাত ধরে নিলেন। রাত পোহাতেই বিজেপিকে নিয়ে নতুন সরকার গড়ে ফেললেন।
এর আগে গোয়া এবং মণিপুরে একই ছবি দেখা গিয়েছে।
গোয়া:
গোয়ার রায় পুরোপুরিই বিজেপির বিরুদ্ধে ছিল। এক রাতের
তৎপরতায় বিধানসভার পাটিগণিত নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল বিজেপি।
এ বছরের ১৪ মার্চ গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিজেপির মনোহর পর্রীকর। আগের পাঁচ বছরও বিজেপিই ক্ষমতায় ছিল গোয়ায়। কিন্তু ৪০ আসনের গোয়া বিধানসভায় এ বার আর গরিষ্ঠতা পায়নি গেরুয়া শিবির। ২১টি আসন পেলে সরকার গড়া যায়। বিজেপি পায় ১২টি। গত পাঁচ বছর বিরোধী আসনে থাকা কংগ্রেস এ বারের নির্বাচনে তাদের আসন বাড়িয়ে নিয়ে ১৭-তে পৌঁছে যায়। প্রথা অনুযায়ী কংগ্রেসকেই আগে সরকার গড়তে ডাকা উচিত ছিল রাজ্যপালের। কিন্তু রাজ্যপাল তা করেননি। বিজেপিকেই সরকার গড়তে ডাকেন তিনি। বিজেপি নেতৃত্বও অত্যন্ত তৎপরতা দেখিয়ে এমজিপি, জিএফপি, নির্দল এবং এনসিপিকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়ে ফেলে।
জনাদেশ কিন্তু পুরোপুরি বিজেপির বিপক্ষেই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারসেকর নিজেই হেরে গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও গোয়ার মসনদ দখলে রাখার জন্য বিজেপির তরফে যে তৎপরতা দেখানো হয়েছিল, তাতে নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
মণিপুর:
সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে থেমে যাওয়া সত্ত্বেও
বিজেপির এন বীরেন সিংহই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন।
মণিপুরেও কিন্তু একই ভাবে বিজেপির নৈতিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ৬০ আসনের মণিপুর বিধানসভায় ৩১টি আসন পেলেই নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা মেলে। চলতি বছরের মার্চে হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ২১টি আসন। কংগ্রেস পায় ২৮টি। কিন্তু মণিপুরেও বৃহত্তম দল কংগ্রেসকে সরকার গড়তে ডাকেননি রাজ্যপাল। বিজেপি-কেই ডাকা হয়। এনপিপির ৪, এনপিএফ-এর ৪, এলজেপির ১ বিধায়ক এবং ১ নির্দল বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে মোট ৩১ জন বিধায়কের সমর্থনের চিঠি রাজ্যপালের কাছে জমা দিয়েছিল বিজেপি। কংগ্রেসের ২৮-এর চেয়ে সেই সংখ্যা বেশি। এই যুক্তিতেই বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা এন বীরেন সিংহকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল। বিজেপি-ই সরকার গড়ে। পরে কংগ্রেসের ৯ বিধায়ক এবং একমাত্র তৃণমূল বিধায়ককেও বিজেপিতে যোগদান করানো হয়।
অরুণাচল প্রদেশ:
পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল অরুণাচল থেকেই। নাবাম টুকির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছিল ২০১৬-র জুলাই থেকেই। তবে সাফল্য শুরুতেই আসেনি। কংগ্রেসের একটি বিক্ষুব্ধ অংশকে সমর্থন দিয়ে প্রথমে টুকি মন্ত্রিসভার পতন ঘটিয়েছিল বিজেপি। কালিখো পুলকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে পিপলস পার্টি অব অরুণাচলের নামে সরকার গড়া হয়। কিন্তু ১৪৫ দিনের মাথায় ফের কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে। সেপ্টেম্বরে ফের কংগ্রেসে ভাঙন ধরানো হয়। ফের সেই পিপলস পার্টি অব অরুণাচলের নামেই সরকার গঠন করে পেমা খান্ডুকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, পেমা-সহ অধিকাংশ বিধায়ককেই বিজেপিতে সামিল করা হয়। অতএব, অরুণাচলও খাতায়-কলমে বিজেপির হাতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy