গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী জমানায় হওয়া ৩টি পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনাকে ‘ভুয়ো সংঘর্ষ’ অ্যাখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি। ওই ঘটনাগুলিতে ৯ জন পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সুপারিশও করেছে প্রাক্তন বিচারপতি এইচ এস বেদীর নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি। ফলে মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার সময়ে সে রাজ্যের পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল।
২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত গুজরাতে হওয়া পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন গীতিকার জাভেদ আখতার ও সাংবাদিক বি জি ভার্গিজ। ১৭টি ঘটনার তদন্তের জন্য প্রাক্তন বিচারপতি বেদীর নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। ৯ জানুয়ারি গুজরাত সরকারের আপত্তি না মেনে ওই রিপোর্ট আবেদনকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার অনুমতি দেয় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
বেদী কমিটি তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে মনে হয় সামির খান, কসম জাফর ও হাজি হাজি ইসমাইলের মৃত্যুর ঘটনা ‘ভুয়ো সংঘর্ষ’। পুলিশের অভিযোগ, সামির খান ১৯৯৬ সালে এক কনস্টেবলকে ছুরি মেরে খুন করে। পরে সে পাকিস্তানে গিয়ে জইশ ই মহম্মদে যোগ দেয়। ২০০২ সালে অক্ষরধাম মন্দিরে হামলার পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুন করার জন্য সামিরকে আমদাবাদে পাঠায় জইশ। পুলিশের দাবি, তখনই তাকে গ্রেফতার করে অপরাধ দমন শাখা। তদন্তের জন্য তাকে ১৯৯৬ সালের কনস্টেবল হত্যার ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখনই সে ইনস্পেক্টর বাঘেলার রিভলভার ছিনিয়ে গুলি চালায়। তার পরে ইনস্পেক্টর তরুণ বারট ও ইনস্পেক্টর এ এ চৌহানের গুলিতে সামির নিহত হয়। কিন্তু বেদী কমিটি জানিয়েছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে মনে হয় সামির মাটিতে কুঁকড়ে বসেছিল। পুলিশ অফিসারেরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন। সামিরের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সুপারিশ করেছে তারা।
দ্বিতীয় ঘটনা কসম জাফরের। পুলিশের অভিযোগ, জাফর অপরাধ- চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০০৬ সালের ১৩ এপ্রিল আমদাবাদের একটি হোটেল থেকে জাফর-সহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক দিন পরে তার দেহ একটি সেতুর নীচে পাওয়া যায়। বেদী কমিটি জানিয়েছে, জাফর যে আদৌ অপরাধ-চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল তা প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনায় জে এম ভরবাড ও গণেশভাই নামে দুই পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পাশাপাশি জাফরের পরিবারকে ১৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
২০০৫ সালে এক সরকারি হাসপাতালে নিহত হয় হাজি হাজি ইসমাইল। পুলিশের অভিযোগ, হাজি পুলিশের একটি দলের উপরে হামলা করেছিল। পুলিশের পাল্টা গুলিতে সে নিহত হয়। বেদী কমিটি জানিয়েছে, হাজির দেহে ছ’টি ক্ষত ছিল। তার মধ্যে পাঁচটি ক্ষতের চারপাশে কালো দাগ রয়েছে। তা থেকে বোঝা যায় খুব কাছ থেকে হাজিকে গুলি করা হয়েছিল।
মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে বেশ কিছু দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন অমিত শাহ। সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় অভিযুক্তও ছিলেন অমিত। সেই মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বেদী কমিটির রিপোর্টে বিজেপি ফের অস্বস্তিতে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy