তাঁকে বলা হয় ‘টাইগার ম্যান’, বলা হয় তিনি বাঘেদের অন্যতম বন্ধু। ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রাণপুরুষ ও ‘বাঘবন্ধু’ হিসেবে পরিচিত বল্মীক থাপার আজ ভোরে নয়াদিল্লিতে নিজের কৌটিল্য মার্গের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। দীর্ঘদিন কর্কট রোগে ভুগছিলেন তিনি। আজ দুপুরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
ভারতে ব্যাঘ্র সংরক্ষণের পুরোধা হয়ে উঠেছিলেন বল্মীক। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি। তবে তাঁর বিেশষ নজর ছিল ব্যাঘ্র সংরক্ষণে। বলা চলে, দেশের ব্যাঘ্র সংরক্ষণে তাঁর অবদান আজও বহন করে চলেছে অভয়ারণ্যের ছায়াঘেরা পথ।
১৯৮৮ সালে তৈরি হওয়া রণথম্ভোর ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা বল্মীক। এই স্বেচ্ছাসেবী অসরকারি সংগঠনটি বাঘ-সহ বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণের কাজ করে। চোরাশিকার ও পাচার বিরোধী আইন আরও জোরদার করা নিয়ে একাধিক বার জোর গলায় সওয়াল করেছিলেন বল্মীক। পাশাপাশি, তাঁর দাবি ছিল বাঘ ও অন্য বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক আবাসস্থলের সংরক্ষণ নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, “মানুষের লোকালয় থেকে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ দূরত্বে থাকা প্রয়োজন। তাদের আবাসস্থলে যেন মানুষের প্রবেশাধিকার বা হস্তক্ষেপ না থাকে।”
দেড়শোরও বেশি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কমিটির সদস্য ছিলেন বল্মীক। এগুলির মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল বোর্ড অব ওয়াইল্ডলাইফ, যার শীর্ষে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। ২০০৫ সালে সরিষ্কা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে বাঘ উধাও হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে একটি বিশেষ ‘টাইগার টাস্ক ফোর্সে’ নিযুক্ত করে কেন্দ্র।
ভারতের বন্যপ্রাণ নিয়ে ‘টাইগার ফায়ার: ৫০০ ইয়ার্স অব দ্য টাইগার ইন ইন্ডিয়া’-সহ প্রায় ৩০টিরও বেশি বই লিখেছেন বল্মীক। বন্যপ্রাণ নিয়ে একাধিক তথ্যচিত্রের সহপ্রযোজনাও করেছেন তিনি। করেছেন উপস্থাপনাও। এর মধ্যে রয়েছে বিবিসি-র বিখ্যাত সিরিজ় ‘ল্যান্ড অব দ্য টাইগার (১৯৯৭)’। ২০২৪ সালে ‘মাই টাইগার ফ্যামিলি’ বলে একটি তথ্যচিত্রে শামিল হয়েছিলেন তিনি। তাতে জানিয়েছিলেন, রণথম্ভোর উদ্যানে তাঁর নানা অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর আত্মজীবনী ‘টাইগার: মাই লাইফ, রণথম্ভোর অ্যান্ড বিয়ন্ড’-এর প্রতি পাতায় লেখা রয়েছে বাঘ সংরক্ষণে তাঁর ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা। তাঁর কথায়, “আমার লক্ষ্য এমন এক জায়গা তৈরি করা, যেখানে বাঘ মানুষের লোভের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারবে।”
ভারতের সাম্প্রতিক ‘প্রোজেক্ট চিতা’ নিয়েও সমালোচনা করেছিলেন বল্মীক। বলেছিলেন, “আফ্রিকার চিতাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ভারতে নেই।” ‘টাইগার ম্যান’-এর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে-সহ অনেকেই। প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী ও কংগ্রে নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, “তাঁর চলে যাওয়া বিরাট ক্ষতি।”
বল্মীকের বাবা রমেশ থাপার এক জন পরিচিত সাংবাদিক। ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার তাঁর আত্মীয়া। অভিনেতা শশী কপূরের মেয়ে সঞ্জনা কপূরকে বিয়ে করেছিলেন বল্মীক। তাঁর ছেলের নাম হামির। পরিবারের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)