‘রাফাল— বিগ স্ক্যান্ডাল’।
রাহুল গাঁধীর রাফাল-অস্ত্র এ বার হাতে তুলে নিলেন তাঁর ‘মমতাদি’। বস্তুত এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাফাল নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করলেন। তা-ও ব্রিগেডের সমাবেশের মঞ্চ থেকে। বিরোধী দলের নেতাদের মহাসমাবেশে।
শনিবার ব্রিগেডে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাফালের উদাহরণ টেনে মমতা বলেন, ‘‘রাফাল ইজ এ বিগ স্ক্যান্ডাল।’’
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী নিজে ব্রিগেডের সমাবেশে যোগ না দিলেও দলের নেতাদের পাঠিয়েছিলেন। বিরোধী ‘ঐক্যের ছবি’ তুলে ধরার জন্য বার্তা পাঠিয়ে ‘মমতাদি’-কে সমর্থনও জানিয়েছেন। রাহুল হাজির না থাকলেও রাফাল নিয়ে তাঁর যাবতীয় অভিযোগ শোনা গিয়েছে বাকি বিরোধী নেতাদের মুখে। চন্দ্রবাবু নায়ডু, এইচ ডি কুমারস্বামীর মতো মুখ্যমন্ত্রীরাও রাফাল নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছেন। বিজেপি সাংসদ হয়েও শত্রুঘ্ন সিন্হা রাহুলের ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান তুলেছেন। একে দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্ব রাহুলের জয় হিসেবেই দেখছেন।
‘টিম রাহুল’-এর মুখে অবশ্য হাসি ফুটিয়েছে মমতার রাফাল-আক্রমণ। কারণ রাহুল যখন প্রথম রাফাল চুক্তি নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হন, তখন বাকি বিরোধীরা প্রথমে তাঁর সঙ্গে সুর মেলাননি। পরে অন্যরা যোগ দিলেও ব্যতিক্রমই ছিল তৃণমূল।
একাধিক বিষয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করলেও এত দিন মমতা তথা তৃণমূল নেতৃত্ব রাফাল নিয়ে নীরবই ছিলেন। সংসদে কংগ্রেসের রাফাল-চুক্তিতে জেপিসি তদন্তের দাবিকে অধিকাংশ বিরোধী সমর্থন করলেও সরব হয়নি তৃণমূল। যুক্তি দিয়েছে, জেপিসি তদন্ত করে কোনও লাভ হয় না। বফর্স, টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনে জেপিসি তার উদাহরণ।
আজ মমতা নিজেই বলেছেন, জন ধন যোজনা, ব্যাঙ্কের এনপিএ বা অনাদায়ী ঋণ এবং রাফাল— সবই বড় মাপের কেলেঙ্কারি। মোদীকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘লুটের টাকায় ভোট, লুটছে সব নোট। নোট বাতিল, জিএসটি— সবেতে কেলেঙ্কারি। ভারতকে লুটে নিয়েছে। বলছে, সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। উনিই একমাত্র সন্ত! একমাত্র সৎ! বাকি সব অসৎ!’’ মোদীকে কার্যত সাবধান করে মমতা বলেন, ‘‘একবার সরকার পড়ুক, বুঝতে পারবেন।’’
শনিবারের ব্রিগেড সমাবেশের ঠিক আগেই রাফাল নিয়ে বিরোধীরা নতুন অস্ত্র পেয়ে গিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, ইউপিএ-সরকার ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানে ভারতীয় বায়ুসেনার চাহিদা মতো অস্ত্র যোগ করতে বাড়তি ১৩০ কোটি ইউরো দেবে বলে ঠিক করেছিল। মোদী সরকার অস্ত্রের জন্য সেই ১৩০ কোটি ইউরোই দিয়েছে, তবে তা মাত্র ৩৬টি বিমানের জন্য। ফলে বিমানপিছু প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা বেশি দাম পড়েছে।
রাহুলের প্রতিনিধি হিসেবে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এই অস্ত্র নিয়েই মোদীকে নিশানা করেছেন। চন্দ্রবাবু-কুমারস্বামীরাও একই প্রসঙ্গ তুলেছেন। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে তা অপ্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু মমতার মুখে ‘অপ্রত্যাশিত’ রাফাল-নাম শুনে দিল্লি থেকে টিভির পর্দায় ব্রিগেড়ে চোখ রাখা এআইসিসি নেতাদের হাসি চওড়া হয়েছে।
নিজে রাফাল নিয়ে আক্রমণে যাওয়ার আগে অবশ্য তৃণমূল নেত্রী শরদ যাদবের ভুল শুধরে দিতে রাফালের কথা বলেন। প্রাক্তন জেডি (ইউ) নেতা শরদ যাদব আজ রাফাল বলতে গিয়ে ভুল করে বফর্স বলে ফেলেন। অস্বস্তিতে পড়েন মঞ্চে হাজির কংগ্রেস নেতারা। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন গিয়ে পিছন থেকে তাঁর ভুল শুধরে দেন। শরদ মাফ চান। শেষে প্রায়শ্চিত্ত করার ঢঙে তিন বার রাফাল বলেন। তখন মমতা বলেন, ‘‘শরদজি ভুল শুধরে নিয়েছেন। মাঝে মাঝে এমন হয়। পুরনো কথা মুখে চলে আসে। ওটা বফর্স নয়। রাফাল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy