Advertisement
E-Paper

ত্রিপুরায় নামতেই পুলিশি বাধা! বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা ধর্নার পর শহরে ঢুকল তৃণমূল! ‘দরকারে আমিও যাব’, হুঁশিয়ারি মমতার

দলীয় পার্টি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনার পর ত্রিপুরায় গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়ল তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। তার প্রতিবাদে আগরতলা বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা ধর্না দিলেন কুণাল ঘোষ, সায়নী ঘোষ এবং বিরবাহা হাঁসদারা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:২৬
ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে বাধা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে বাধা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দলীয় পার্টি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনার পর ত্রিপুরায় গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়ল তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। তার প্রতিবাদে আগরতলা বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা ধর্না দিলেন কুণাল ঘোষ, সায়নী ঘোষ এবং বিরবাহা হাঁসদারা। এই ঘটনার কথা শুনে কলকাতা থেকে হুঁশিয়ারিও দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সে রকম হলে আমিও যাব। দেখি কার কত দম!’’

উত্তরবঙ্গের দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। এর পরেই ত্রিপুরায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে বুধবার ত্রিপুরায় যায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। সেই দলে রয়েছেন দলের মুখপাত্র কুণাল, যাদবপুরের সাংসদ তথা তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী, জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, মন্ত্রী বিরবাহা এবং টিএমসিপি নেতা সুদীপ রাহা। অভিযোগ, ত্রিপুরা বিমানবন্দর থেকে দলীয় পার্টি অফিসে যাওয়ার জন্য চারটি গাড়ি থাকার কথা ছিল। কিন্তু ছিল একটিই মাত্র গাড়ি। এর পর বিমানবন্দরের বাইরে থাকা প্রিপেড ট্যাক্সি করে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন কুণালেরা। অভিযোগ, তাতেও বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথাও বলা হয়। কিন্তু তাতে সুরাহা না হওয়ায় বিমানবন্দর চত্বরেই ধর্না দেন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা।

বুধবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় ফিরেই ত্রিপুরার ঘটনা নিয়ে সুর চড়়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে তিনি বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় আমাদের টিমকে প্রিপেড ট্যাক্সিও দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে আমি হেঁটে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’’ বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘আগে নিজের ঘরের দিকে তাকান।’’

যদিও প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিমানবন্দর চত্বরে ধর্না চলার পর পুলিশই তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে। তৃণমূল সূত্রে খবর, চারটি গাড়ি করেই পরে আগরতলার দলীয় কার্যালয়ে যান কুণালেরা। সুদীপ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এসে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন বিপ্লব দেবরা। কিন্তু তৃণমূলের নেতানেত্রীরা ত্রিপুরায় গেলে বাধার মুখে পড়তে হয়।’’

আগরতলার দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনের পর সেখানে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। সেখানে কুণালও বলেন, ‘‘ত্রিপুরার নেতারা তো বাংলায় গিয়ে ঘোরেন, বিয়েবাড়িও যান। কোথাও বাধা পান না। তা হলে আমাদের সঙ্গে কেন এ রকম? আমাদের এত ভয়?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দক্ষিণী সিনেমায় যা হয়, ত্রিপুরাতেও তা-ই হয়। এ বার তো গাড়ির চালককে বার করে দিয়েছে। টাকা দিয়ে দিয়েছি, তা-ও প্রিপেড ট্যাক্সি নিতে দিচ্ছে না। যখন হেঁটে যাচ্ছি, তখন পুলিশ আটকায়। আমরা বলছি, হেঁটেই তো যাব। তা-ও আটকে দিচ্ছে।’’

সাংবাদিক বৈঠকের পর ত্রিপুরা পুলিশের ডিজির সঙ্গেও দেখা করেছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বৈঠকের পর বাইরে বেরিয়ে তৃণমূলের প্রতিমা বলেন, ‘‘এর আগেও ত্রিপুরায় একাধিক বার হামলার মুখে পড়েছে তৃণমূল। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। এ বারও করল না। বিজেপির পদাধিকারীরই পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছে। আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে। আমরা সে কথাই জানিয়ে এলাম।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘খগেন মুর্মু এবং শঙ্কর ঘোষের উপর হামলাকে তৃণমূল সমর্থন করে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে খগেন মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেছেন হাসপাতালে। উনিও একই কথাই বলেছেন। তৃণমূল এই ধরনের রাজনীতি করে না।’’

খগেন এবং শঙ্করের উপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার আগরতলার বনমালীপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ, সেই বিক্ষোভ মিছিল থেকেই তাদের ত্রিপুরার রাজ্য কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, খগেন-শঙ্করের উপর হামলার ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তার কারণেই ত্রিপুরায় হামলা চালিয়েছেন বিজেপির লোকেরা। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। তাদের পাল্টা দাবি, কোনও হামলাই হয়নি।

পার্টি হামলার ঘটনার পরেই ত্রিপুরায় প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল। সেইমতো বুধবার সকালেই পড়শি রাজ্যে যান কুণালেরা। বিমানবন্দরে নেমেই কুণাল বলেন, ‘‘আগরতলায় আমাদের রাজ্য দফতর ভাঙচুর করেছে বিজেপি-আশ্রিত সমাজবিরোধীরা। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছিল। তবে ত্রিপুরায় আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। অতীতে সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলা হয়েছে, আমাদের আটক করা হয়েছে। সে রাত্রে কোনওক্রমে আমাদের প্রাণ বেঁচেছিল। গতকাল থেকে সমাজমাধ্যমে আবার সেই হুমকি শুরু হয়েছে। আমরা আজ যাচ্ছি, আমাদের মৃতদেহও ফিরতে পারে।’’

একই সুরে সায়নী বলেন, ‘‘আমরা দলীয় কর্মীদের বার্তা দিতে যাচ্ছি যে তাঁরা ওখানে একা নন। দল তাঁদের পাশে রয়েছে। আর সব কিছুতে বিজেপি তৃণমূলকে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে জ্ঞান দেয়। ত্রিপুরায় আইন-শৃঙ্খলা কোথায়? পুলিশের সামনে কাল পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হল। অতীতে আমাদের বার বার দলের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েও যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাতে বরং ত্রিপুরার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।’’

Mamata Banerjee tmc bjp clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy