E-Paper

রাহুল-তেজস্বীর সভায় থাকার ভাবনা তৃণমূলের

রাজনৈতিক শিবির বলছে, গত কাল রাতে রাহুলের নতুন বাসভবনে বিরোধী দলনেতার নৈশাহারে রাহুল এবং অভিষেকের মধ্যে যে উষ্ণতা দেখা গিয়েছে, তা সাম্প্রতিকঅতীতে বিরল। নৈশাহারের আগে রাহুল এবং অভিষেক টানা পনেরো মিনিট কথা বলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৩২
রাহুল গান্ধী।

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

আগামী ১ সেপ্টেম্বর পটনার সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবের আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া নিয়ে ইতিবাচক ভাবেই ভাবনাচিন্তা করছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। আজ দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দু’জনের মধ্যে একজনের ওই দিন পটনায় যাওয়ার যথেষ্টসম্ভাবনা রয়েছে।

রাজনৈতিক শিবির বলছে, গত কাল রাতে রাহুলের নতুন বাসভবনে বিরোধী দলনেতার নৈশাহারে রাহুল এবং অভিষেকের মধ্যে যে উষ্ণতা দেখা গিয়েছে, তা সাম্প্রতিকঅতীতে বিরল। নৈশাহারের আগে রাহুল এবং অভিষেক টানা পনেরো মিনিট কথা বলেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, কী ভাবে ভোট চুরির বিষয়টিকে সেপ্টেম্বরের পরেও প্রচারের মধ্যে ধরে রাখা যায়। অভিষেক জানান, অনেক আগেই মমতা এই নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। পরে নৈশাহারের সময়ও তেজস্বী এবং অভিষেক ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জনের খুঁটিনাটি দিকগুলি এবং কী ভাবে ভোট চুরির মোকাবিলা করা যায়, তার কৌশল নিয়ে রাহুলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। নৈশাহারে অভিষেকের জন্য নির্ধারিত টেবিলে বসেছিলেন মেহবুবা মুফতি, সুপ্রিয়া সুলে, কানিমোঝিরা। সেখানে অভিষেকের পাশে চেয়ার আনিয়ে বসেন রাহুল এবং তাঁদের আলাপচারিতা চলে প্রায়পঁয়তাল্লিশ মিনিট।

নৈশাহারের পরে ভিতরের ঘরে রুদ্ধদ্বার আলোচনার জন্য যে নেতারা ঢোকেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, কে সি বেণুগোপাল, তৃণমূলের অভিষেক, ডেরেক ও’ব্রায়েন, এসপি-র অখিলেশ যাদব, রামগোপাল যাদব, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, ডিএমকে-র কানিমোঝি, সিপিএমের এম এ বেবী, এনসিপি-র শরদ পওয়ার, সুপ্রিয়া সুলে, আরজেডি-র তেজস্বী যাদবেরা। ভোটার তালিকা পরিমার্জন নিয়ে বিজেপি-র কৌশলকে কী ভাবে আটকানো যায়, তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি খড়্গে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে, ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী দিতে হবে। সম্মিলিত আলোচনায় স্থির হয়, এমন কাউকে দাঁড় করানো হোক, যিনি সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কংগ্রেসের কোনও প্রার্থী নয়, বরং সমাজের কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকেই দাঁড় করানোর কথা ভাবা হচ্ছে আপাতত। তবে এ ব্যাপারে কোনও নাম এখনও স্থির হয়নি। পাশাপাশি ওই বৈঠকে তেজস্বী ভোট চুরির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোট দখলের চেষ্টা করছে। সূত্রের খবর, রাহুল জানান, ‘গণতন্ত্রকে মজবুত করতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আমাদের ক্লান্ত হলে চলবে না, লড়তে হবে। তা না হলে এই দেশে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হবে না।’

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বিহার পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনের মূল্য সেখানে রয়েছে। তেজস্বীর পরিবারের সঙ্গে মমতার দীর্ঘদিনের পারিবারিক যোগ। গত কাল যাঁরা রাহুল গান্ধীর নৈশভোজে হাজির ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবার সঙ্গেই কংগ্রেসের নির্বাচনী জোট রয়েছে, তৃণমূল ছাড়া। তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ‘অ্যালার্জি’র অন্যতম কারণ ছিল প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরির উপস্থিতি, যিনি এখন অপসারিত। অন্য দিকে বিহারের পরেই বাংলায় ভোট। ভোটার তালিকার পরিমার্জনের বিষয়টিকে জিইয়ে রেখে জাতীয় স্তরে নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি সরকারের উপর চাপ বহাল রাখতে তৃণমূলেরও প্রয়োজন কংগ্রেসকে। তাই পারস্পরিক রাজনৈতিক স্বার্থপূরণের তাগিদেই নয়াদিল্লিতে রাহুল এবং অভিষেককে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গেল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। আগামী বছর বাংলার ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস জোট করবে, এমন দাবি অবশ্য এখনই কোনও পক্ষই করছে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rahul Gandhi Congress Tejashwi Yadav TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy