তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের অধিকাংশ নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা আটকে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সব রায় ‘সংবাদমাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত’ বলে বিচারপতিদের একাংশকে আক্রমণ করে সংসদে অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি পরীক্ষায় অনিয়ম প্রতিরোধ বিল নিয়ে আজ লোকসভার আলোচনায় কল্যাণ দাবি করেছেন, টিভির আলোচনা ও সংবাদপত্র যে জনমত গঠন করে দিচ্ছে, তাতে প্রভাবিত হয়ে বিচারপতিরা নিজেদের মতামত শোনাচ্ছেন। এটি কাম্য নয়। তাঁর মতে, এই কারণেই মামলাগুলি উচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রুখতে গত কাল ওই বিলটি সংসদে পেশ করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তের ১০ বছর পর্যন্ত জেল ও এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। বিল নিয়ে আলোচনায় কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ থেকে বিহারের বিজেপি সাংসদ রাজীব প্রতাপ রুডি— সকলেরই বক্তব্যে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ-দুর্নীতি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জেলযাত্রার কথাও উল্লেখ করেন রুডি। এর পাল্টা নিজের বক্তব্যে কল্যাণ কারওনাম না করে বিচার ব্যবস্থার সমালোচনায় সরব হন। বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গলবেঞ্চের এক বিচারপতি ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন। মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে গেলে চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেওয়া হয়, তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।সুপ্রিম কোর্ট গোটা মামলাই খারিজ করে দেয়।’’
তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, ‘‘ওই বিচারপতি আরও একটি সিদ্ধান্তে ১৫ হাজার শিক্ষককে বরখাস্ত করেন। সুপ্রিম কোর্টে সেই নির্দেশও খারিজ হয়।’’ ‘মিডিয়া ট্রায়াল’-এর জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ তুলে কল্যাণের অভিযোগ, ‘‘আমাদের দেশের বেশ কিছু বিচারপতি সন্ধ্যায় টিভিতে হওয়া বিতর্ক ও সকালের কাগজ পড়ার ভিত্তিতে মামলার রায় দিচ্ছেন। অগ্রাহ্য করা হচ্ছে আইনকে।’’ তাই ‘সংবাদমাধ্যমের বিচারসভা’ বন্ধ করা এবং দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে যাতে ‘বদনামের’ ভাগীদার হতে না হয়, সে দিকে নজর দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদনকরেন তিনি।
শাস্তির বিধানগুলি নিয়ে সবিস্তার আলোচনার জন্য বিলটিকে স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলেন আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রন। এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘‘সরকারি ক্ষেত্রে গত এক দশকে নিয়োগ অনেক কমে গিয়েছে। পরীক্ষায় দুর্নীতি রোখা যেমন শুভ উদ্যোগ, তেমনি জরুরি, সরকারি চাকরির সংখ্যা বাড়ানো।’’
এমআইএম সাংসদ ইমতিয়াজ জলিল সৈয়দের মতে, দুর্নীতি রাজ্যের পরীক্ষাতেও হয়ে থাকে। তাই রাজ্যের সরকারি চাকরিতেও ওই আইনের প্রয়োগ হওয়া উচিত। কারণ, অধিকাংশ দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দল জড়িত থাকে। এক বার প্রশ্ন ফাঁসের পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার উপরে জোর দেন তামিলনাড়ুর কংগ্রেস সাংসদ এম কে বিষ্ণু প্রসাদ-সহ একাধিক সাংসদ। এই দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জিতেন্দ্র সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘চাকরির পরীক্ষায় দুর্নীতি করলে কী শাস্তি হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই দণ্ড সংহিতায়। তাই নতুন আইন আনা হচ্ছে। এতে পড়ুয়াদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy