তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। —ফাইল চিত্র।
নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হওয়ার পরে তিনি ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবাদ করে আসছেন। শুক্রবার রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে এই নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর তুলে আনলেন প্যারিস অলিম্পিক্স প্রসঙ্গ। বললেন, দেশের ১১৭ জন প্রতিযোগী জাত, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে দেশের হয়ে লড়ছেন। সেই উদাহরণ মাথায় রেখে বলতে হয়, ভারতীয় নাগরিকদের ধর্ম, ভাষা, জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজন করার রাজনীতি একেবারেই ঠিক নয়। এর পরেই তিনি সিএএ-র কথা বলে দাবি করেন, নাগরিকদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলার প্রচেষ্টাও সঠিক নয়। যদিও তাঁর এই অবস্থানকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে বিজেপি।
মতুয়াদের একাংশ থেকে বরাবর নাগরিকত্ব আইনের দাবি জানিয়ে আসছে। বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বও এই আইনের পক্ষে। সম্প্রতি লোকসভা ভোটের আগে এই আইন চালু করার নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। বনগাঁ এবং রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীদের বড় জয় থেকে মনে করা হচ্ছে, এই আইনের প্রতি প্রাথমিক ভাবে সমর্থনই জানিয়েছেন মতুয়ারা। তবে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই বলে আসছেন, যাঁরা এত দিন ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার নির্বাচন করছেন, তাঁদের আলাদা করে এই নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাঁর আরও আশঙ্কা, যাঁরা কাগজ দেখাতে পারবেন না, তাঁরা নাগরিকত্ব হারাতেও পারেন।
এ দিন মমতাবালা ঠাকুরও একই সুরে বলেন, ‘‘মতুয়ারা সব সময় নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি করে এসেছে। সিএএ-র নাম করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মতুয়াদের গোলাম বানিয়ে রাখতে চাইছে। এ, বি এবং সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা উদ্বাস্তু হিসাবে নিজের দেশ ছেড়ে নাগরিকত্বের আশায় ভারতের এসেছিলেন, তাঁরা কাগজপত্র নথি পাবেন কোথা থেকে?’’ এই সময়েই তিনি অলিম্পিক্সে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের হয়ে লড়াই করা ভারতীদের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘ভারতীয়দের বিশেষত্বই হল, শিল্প, ভাষা, ধর্মের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সুরটি আমাদের সমৃদ্ধ করে।’’ একই সঙ্গে মমতাবালা সিএএ-কে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে বলেন, “নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য অবাস্তব, অলীক কাগজ নাগরিকদের দেখাতে বলার পক্ষে নই।’’
তাঁর এই অবস্থানের সমালোচনা করেন মতুয়া সমাজের প্রতিনিধি নাগরিক কবিয়াল অসীম সরকার। বর্তমানে তিনি বিজেপির হরিণঘাটার বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘আমি মমতাবালা ঠাকুরকে দ্বিচারিতার রাজনীতির বন্ধ করতে অনুরোধ করব। কারণ, ওঁর দলের সর্বোচ্চ নেত্রী বলছেন, যাঁদের আধার কার্ড রয়েছে, ভোটার কার্ড রয়েছে, তাঁরাই নাকি দেশের নাগরিক। আর মমতাবালা বলছেন নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে। না হলে আন্দোলনে নামবেন। তৃণমূলের এই দুই অবস্থানের মধ্যে কোনটি ঠিক, আগে তারা ঠিক করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy