প্রতিবাদের বিষয় এক। ধর্না মঞ্চও এক। তবু চলল লুকোচুরি।
প্রথমে ব্যপম কাণ্ড নিয়ে লোকসভায় আলোচনা ও তদন্ত দাবি। রাজ্যের বিষয় বলে সরকার তা খারিজ করতেই আজ উত্তাল হয়ে উঠল লোকসভা। প্রতিবাদে কংগ্রেসের সঙ্গে লোকসভা থেকে কক্ষত্যাগ করেন তৃণমূল ও সিপিএমের সাংসদরা।
কংগ্রেস সাংসদরা লোকসভা থেকে বেরিয়ে সংসদ ভবনেরই গাঁধী মূর্তির পাদদেশ ধর্নায় বসেন। দেখা যায়, সেখানে যোগ দিতে আসছেন তৃণমূল সাংসদেরা। ইতস্তত চাউনি। চোরা নজরে চট করে দেখে নেওয়া সিপিএমের কোনও সাংসদ আবার ওই ভিড়ের মধ্যে মিশে নেই তো! তেমন কাউ চোখে না পড়তে স্বস্তি পান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষদস্তিদারেরা! কংগ্রেসের ধর্না মঞ্চ থেকে ব্যপম কাণ্ড
নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গেই সরব হন তৃণমূলের সাংসদরা।
গত সপ্তাহে দলীয় সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে তৃণমূলকে তাদের ধর্না মঞ্চে আসার আহ্বান জানিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু আলাদা করে প্রতিবাদ জানালেও, এক মঞ্চে সামিল হয়নি তৃণমূল। কিন্তু আজ কেন সামিল হলেন, এ নিয়ে সুদীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘ব্যপম কাণ্ডে যে মৃত্যু মিছিল চলছে, তা অত্যন্ত চিন্তার। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকার হওয়ায় কেন্দ্র বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। এমনকী লোকসভাতেও আলোচনায় রাজি নয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই ধর্না মঞ্চে আসা।’’
গত কাল দিল্লিতে অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে একটি বৃহত্তর জোটের ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে কংগ্রেস উপস্থিত না থাকলেও আজ যে ভাবে সনিয়া গাঁধীর দলের সঙ্গে পা মিলিয়ে প্রথমে লোকসভা থেকে কক্ষত্যাগ ও পরে গাঁধী মূর্তির সামনে তৃণমূল সাংসদেরা ধর্না দিয়েছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যের। অ-বিজেপি ওই জোটে সিপিএমের থাকা নিয়ে গত কালই আপত্তি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে প্রতিবাদের বিষয় এক হলেও সিপিএমের সঙ্গে যে এক মঞ্চে থাকা যাবে না, তা বুঝতে পারছিলেন তৃণমূলের সাংসদরা।
মিনিট দশেক পরেই সিপিএমের সাংসদরা ভিড় জমালে চমকে যান তৃণমূল নেতারা। মুহূর্তে ইশারা খেলে যায় চোখে-মুখে। যার অর্থ— বেরিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে! সিপিএম সাংসদরা তখন সবে কংগ্রেসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্লোগান তুলতে শুরু করেছেন। ভিড় থেকে একে একে ছিটকে যেতে শুরু করেন সুলতান আহমেদ-কাকলি ঘোষ দস্তিদারেরা। আর নতুন সাংসদ, যারা এখনও রাজনীতির এই প্যাঁচে ততটা অভ্যস্ত হননি, তাদের দু-এক জনকে তখনও ধর্নায় উপস্থিত দেখে প্রমাদ গোনেন বর্ষীয়ানরা। দ্রুত আপ্ত সহায়কদের নির্দেশ, ‘‘ওদের ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে বল। না হলে একসঙ্গে ছবি উঠে যাবে।’’
সিপিএমের সাংসদেরা ধর্নায় এসেছেন বলেই কি তাঁরা চলে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নে আকাশ থেকে পড়া তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, ‘‘কই, আমি তো দেখতে পাইনি।’’ আর এক সাংসদের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘দুপুরের বিমানের টিকিট আছে। তাই ফিরযাচ্ছি!’’
কম যায়নি সিপিএমও। তৃণমূল সাংসদরা থাকবেন বুঝে বাংলার সাংসদদের ধর্না মঞ্চে যেতে বারণ করে দেওয়া হয়েছিল। বদলে পাঠানো হয় কেরলের সাংসদদের।