রাজ কপূরের একশো বছর। বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই কপূর পরিবার এই দিনটি উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। উঠে এসেছে রাজ কপূরকে নিয়ে একের পর এক তথ্য। এর মধ্যে অন্যতম হল রাজ কপূরের সঙ্গে দিলীপ কুমারের বন্ধুত্ব। দু’জনের মধ্যে মাত্র দু’বছর বয়সের ব্যবধান। একসঙ্গে বড় হওয়া থেকে শুরু করে বলিউডে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা— এই সফর আলোচনায় উঠে আসে।
পেশোয়ারে জন্ম দুই তারকারই। সেখানেই বন্ধুত্ব। দুই তারকার বাবাদের মধ্যেও পরিচয় ছিল। এর পরে এক কলেজে পড়াশোনা। সেখান থেকে একই শুটিং স্টুডিয়োয় পরস্পরকে আবিষ্কার করেন তাঁরা। তার পর সমপরিমাণ সাফল্য। তবে পরস্পরের সাফল্যে করতালি দিতে থামেননি কেউই। তবে তাঁরা জানতেন, কী ভাবে পরস্পরের যাত্রাপথ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হয়।
রাজ কপূর ও দিলীপ কুমারের বাবাদের ফের দেখা হয় মুম্বইতে। পরিবারের মতোই হয়ে ওঠেন তাঁরা। তবে বিতণ্ডাও হয়েছে দুই পরিবারের মধ্যে। কিন্তু তার প্রভাব কখনও পড়েনি দুই তারকার বন্ধুত্বের উপর। মুম্বইয়ের খালসা কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন দিলীপ কুমার ও রাজ কপূর। সেখানেই ফুটবল টিমের সদস্য ছিলেন তাঁরা। রাজ বরাবরই খুব প্রাণবন্ত ছিলেন। সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। অন্য দিকে দিলীপ ছিলেন কিছুটা অন্তর্মুখী ও লাজুক। মহিলাদের সামনে সহজে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না। দিলীপ তাঁর আত্মজীবনীতে নিজেই জানিয়েছিলেন, এই কারণে রাজকে কিছুটা ঈর্ষা করতেন তিনি। দিলীপ লিখেছিলেন, “কলেজে মেয়েদের সঙ্গে খুব সহজেই কথা বলত রাজ। বহির্মুখী ছিল ও, যার ফলে ওকে কলেজে সকলে চিনত। লহমায় যে কোনও মহিলার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিতে পারত ও। মহিলার কাঁধে হাত রেখে গল্প করলেও, মহিলার হয়তো কিছু এসে যেত না। তবে পুরোটাই সম্মানের সঙ্গে করত রাজ। আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না।” দু’জনের স্বভাব বিপরীতমুখী হলেও বন্ধুত্বে তার কোনও প্রভাব পড়েনি।
আরও পড়ুন:
রাজ কপূর ও দিলীপ কুমার ‘অন্দাজ়’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। দুই বন্ধু এক ছবিতে, তাই এই ছবি ঘিরে নানা রকমের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। ছবির একটি দৃশ্যে রাজের চরিত্রটি হকি স্টিক দিয়ে দিলীপের চরিত্রকে মারে। ছবিটি মুক্তির আগেই খবর ছড়িয়ে গিয়েছিল, রাজ নাকি ছবির সেটে দিলীপকে মারধর করেছেন। দিলীপ নিজেই এই ঘটনার কথা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন। তবে সেই দৃশ্যে সামান্য চোটও পেয়েছিলেন অভিনেতা। সেই ছবি করতে গিয়ে রাজ ও দিলীপ উপলব্ধি করেছিলেন, একসঙ্গে কাজ করলে বিনোদনজগৎ তাঁদের বন্ধুত্ব সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেবে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখলেও, কখনও আর একসঙ্গে কাজ করবেন না। সমান্তরাল ভাবে দু’জন কাজ করে গিয়েছেন, অদৃশ্য প্রতিদ্বন্দিতা থেকেছে। কিন্ত তাকে কখনওই বন্ধুত্বের উপর প্রভাব ফেলতে দেননি তাঁরা। ব্যক্তিগত জীবনে বরাবর পরস্পরের পাশে থেকেছেন রাজ-দিলীপ।