ঘর তুমি কার!
বিতর্কিত বিল বা রাজনীতির বিশেষ কোনও উত্তপ্ত বিষয় নয়, শুধু একটি ঘরের দখল নিয়েই সংসদ ভবনে আজ তুমুল লড়াই হয়ে গেল দু’দলের মধ্যে। এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, অন্য দিকে চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল তেলুগু দেশম। কথা কাটাকাটি, হইচই, নেমপ্লেট উপড়ে ফেলা। জল গড়িয়েছে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন পর্যন্ত।
এক তলার পাঁচ নম্বর ঘর। বড়সড়, একসঙ্গে বসতে পারেন অনেকে। গত শুক্রবার পাঁচ নম্বর ঘরের মালিকানা হাতে আসে তৃণমূলের। অথচ ত্রিশ বছর ধরে ঘরটি দখলে রয়েছে তেলুগু দেশম পার্টির। ঘরের দখল নিতে গিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত আজ দুপুরে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদর যখন পাঁচ নম্বর ঘরে পৌঁছন, তখন সেখানে টিডিপি-র কোনও সাংসদই হাজির ছিলেন না। উপস্থিত সংসদের কর্মীরা ঘরের সামনে লাগানো টিডিপি নেতাদের নামের ফলক সরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস লেখা বোর্ড বসিয়ে দেন। ততক্ষণে খবর পৌঁছে গিয়েছে টিডিপি শিবিরেও। একে একে উপস্থিত হন চন্দ্রবাবুর দলের সাংসদেরা। শুরু হয়ে যায় হইচই, দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি। সুদীপ-সুলতানদের যুক্তি, “আমরা রাস্তার ভিখিরি নই। স্পিকারের দফতর চিঠি দিয়ে জানিয়েছে এই ঘরের বর্তমান মালিক তৃণমূল কংগ্রেস। তাই আমরা আমাদের ঘরে গিয়েছি। জোর করে কারুর ঘর দখল করিনি।’’ তৃণমূল ওই দাবি করলেও, টিডিপি নেতৃত্ব অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাঁচ নম্বর ঘরে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলেন। টিডিপি নেতা রমেশ রাঠৌর বলেন, “এ ভাবে অন্য দলের ঘরে প্রবেশ মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। তৃণমূল যা করেছে তা অন্যায়।” দলের আর এক নেতা এস সত্যনারায়ণের মন্তব্য, “ঘর ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এই ঘরের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। প্রথমে স্পিকার ও প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবে দল।”
বিনা যুদ্ধে কেউ জমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মাঠে নামতে হয়েছে খোদ স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে। বিকেলে স্পিকারের সঙ্গে উভয় দলের বৈঠকের পর ঠিক হয়েছে, সংসদ শেষ হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তত দিন যুদ্ধবিরতি। সামান্য একটি ঘর নিয়ে দু’দল আজ যে ভাবে রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। সন্ধ্যায় সেরা সাংসদকে সম্মানিত করার অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও সাংসদদের আচরণবিধি সম্পর্কে সরব হন। কোনও নাম না করেই তাঁর বক্তব্য, “দয়া করে আপনারা সংসদের মর্যাদা রক্ষা করুন। এটা সাংসদদেরই দায়িত্ব।”
তবে ঘটনা হল, ছয় বছর ধরেই সংসদে কোনও ঘর নেই তৃণমূল কংগ্রেসের। এ দিকে লোকসভা-রাজ্যসভা মিলিয়ে দলের সাংসদ সংখ্যা প্রায় ৪৬ জন। সংসদে দলীয় কোনও বিষয়ে জরুরি আলোচনা করতে গেলে ভরসা সেন্ট্রাল হল বা গ্রন্থাগার। কিন্তু সেখানেও সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্য দলের নেতা,কর্মী-সকলেরই অবারিত দ্বার। ফলে দলের রণকৌশল পাঁচ কান হওয়ার সম্ভাবনা। এই সমস্যা ঘোচাতে নতুন লোকসভা গঠনের শুরুতেই আদা-জল খেয়ে নেমেছে তৃণমূল শিবির।
আজকের ঘটনার মধ্যে তৃণমূল বলছে, এত দিন পরে ঘরটি যখন তাঁদের দলকে দেওয়া হয়েছে তখন কোনও ভাবেই মালিকানা ছাড়ার প্রশ্ন নেই। প্রয়োজনে তাঁরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে। আর পাল্টা হুমকি দিয়ে টিডিপি সাংসদেরা জানিয়েছেন, ঘর ছাড়ার প্রশ্নই নেই। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।