লোকসভা ও সব বিধানসভায় একই সঙ্গে ভোট করানোর কেন্দ্রীয় প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতায় সরব হল তৃণমূল-সহ অধিকাংশ বিরোধী দল। এমনকি বিজেপির সহযোগী গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির মতো ছোট দলও মুখ খুলেছে মোদী সরকারের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলি কী ভাবছে, তা জানতে তিন দিনের সম্মেলন ডেকেছে আইন কমিশন। আজ ছিল তার প্রথম দিন। সেখানেই ওই প্রস্তাবের সমালোচনা করে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রস্তাবটি শুনতে ভাল। কিন্তু আদৌ বাস্তবোচিত নয়।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘদিন ধরেই একসঙ্গে ভোট করানোর পক্ষে সওয়াল করছেন। যুক্তি: এক, এতে সরকারের খরচ কমবে। দুই, এখন সারা বছর দেশের কোথাও না কোথাও ভোট লেগে থাকে। নির্বাচনী আচরণবিধির ফাঁসে উন্নয়ন আটকে যায়। একসঙ্গে ভোট হলে এটা বন্ধ হবে। এনডিএ শরিক শিরোমণি অকালি দলের নরেশ গুজরাল আজ আইন কমিশনে প্রস্তাবটির সমর্থনে এই দু’টি যুক্তিই তুলে ধরেন। গা বাঁচানো অবস্থান নেয় তামিলনাড়ুর শাসক দল এডিএমকে। এই দলের থাম্বিদুরাই বলেন, ‘‘২০১৯ নয়, ২০২৪ সালে প্রস্তাবটি কার্যকর হলে তারা পাশে আছে।’’
বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, আইনবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের মতামত আগেই নিয়েছে কমিশন। আজ ছিল রাজনৈতিক দলগুলির পালা। এ দিন প্রথমে ডাকা হয় তৃণমূলকে। কল্যাণবাবু সেখানে বলেন, ‘‘তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, ২০১৯-এ লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হল। ২০২০-তে যদি কেন্দ্রের শাসক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, তখন আবার লোকসভা নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হবে। তখন কি ফের সব রাজ্যে বিধানসভা ভোট হবে?’’ একই ভাবে তাঁর প্রশ্ন, এক রাজ্যে সরকার পড়ে গেলে কি ফের সব রাজ্যে ভোট হবে? তৃণমূলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এ ভাবে কোনও রাজ্যের ঘাড়ে ভোট চাপিয়ে দিতে পারে না কেন্দ্র। লোকসভা ও বিধানসভার পৃথক মেয়াদ সংবিধানে স্বীকৃত। মানুষও সরকারকে নির্বাচিত করেন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। সেই স্বীকৃত অধিকার নস্যাৎ করা হবে কোন যুক্তিতে— প্রশ্ন তৃণমূলের। সিপিআইয়ের অতুল অঞ্জন বলেন, ‘‘সংবিধানের মূল ভাবনাটাই নষ্ট হবে এতে।
কংগ্রেস এ দিন ওই সম্মেলনে যায়নি। দলের তরফে আর পি এন সিংহ জানান, সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। কংগ্রেসের সন্দেহ, মোদী সরকার এক দেশ এক নির্বাচনের কথা বলছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে। বিরোধীদের মতে, বছর শেষে নির্বাচন রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মিজোরামের মতো রাজ্যে। সেখানে অবস্থা ভাল নয় বিজেপির। এর পরে লোকসভা ভোটের বছরেই ভোট হবে বিজেপি শাসিত হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্রে। ওই রাজ্যগুলিতে পরাজয় এড়াতেই লোকসভার সঙ্গে ভোট করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন মোদী।
বিজেপি সূত্র বলছে, কেন্দ্রের প্রস্তাবে ইতিমধ্যেই সহমত জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। বিজেপির আশা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ বা তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলিকে এই প্রশ্নে পাশে পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের সঙ্গেই ১০-১২টি রাজ্যে ভোট করিয়ে নেওয়া সম্ভব হতে পারে।