Advertisement
E-Paper

আড়াই ঘণ্টার পথ পেরোতে লাগল সাড়ে দশ ঘণ্টা

গত কাল প্রয়াগরাজে প্রায় সমস্ত ট্রেন বাতিল করেছে প্রশাসন। স্টেশন কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ভিড়ের চাপে। সেই চাপ পড়েছে জাতীয় সড়কের উপর। অনেক বাসই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছে, রাস্তাতেই সংসার পেতে চলছে রান্না-খাওয়া।

যানজটের মধ্যেই রাস্তায় রান্না ও খাওয়া চলছে।

যানজটের মধ্যেই রাস্তায় রান্না ও খাওয়া চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক পাল

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪২
Share
Save

এখন বাজে রাত আটটা পাঁচ। আড়াই ঘণ্টার রাস্তা পার হতে লেগে গেল সাড়ে দশ ঘণ্টা। প্রয়াগরাজ থেকে পৌঁছলাম বারাণসীতে।

তখন দুপুর পৌনে তিনটে, রাস্তায় সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে। অসহায় ভাবে দেখছি, গুগল ম্যাপে এক ঘণ্টা করে পিছিয়ে যাচ্ছি। প্রয়াগরাজ থেকে বেরিয়েছি পৌনে ১১টায়। বারাণসী বহু দূর, প্রায় ১১৫ কিলোমিটার। প্রায় ৭০ কিলোমিটার জুড়ে হওয়া এই যানজটের অন্ত দেখছি না। পথেই কাটবে দিন, আন্দাজ করেছিলাম।

ইচ্ছে ছিল গত কাল রাতের মধ্যে বারাণসীর উদ্দেশে বেরিয়ে যাব। রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম মুট্‌ঠিগঞ্জ কালীবাড়িতে। মেলেনি গাড়ি, টোটো বা অটোও। সকালেও দীর্ঘ ক্ষণ গাড়ি আসতে পারেনি কালীবাড়ির কাছে। অসংখ্য মানুষ পায়ে হেঁটে সঙ্গমের দিকে যাচ্ছেন বলে পুলিশ শাস্ত্রী ব্রিজে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। প্রবল ভিড় সামলাতে পুলিশ নাজেহাল, মানুষও দিকভ্রান্ত, দিশাহারা।

আশা ছিল, প্রয়াগরাজের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে রাস্তা ফাঁকা পাব। কিন্তু ক্রমাগত গাড়ি ঘুরিয়ে দিতে থাকল পুলিশ। ফাফোলি বলে একটা জায়গা দিয়ে বাইপাস করে বারাণসীর পথে রওনা দিলাম। তার পরেই এই যানজট।

গত কাল প্রয়াগরাজে প্রায় সমস্ত ট্রেন বাতিল করেছে প্রশাসন। স্টেশন কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ভিড়ের চাপে। সেই চাপ পড়েছে জাতীয় সড়কের উপর। অনেক বাসই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছে, রাস্তাতেই সংসার পেতে চলছে রান্না-খাওয়া। আবার অনেকের কাছে পর্যাপ্ত খাবার ও জল না থাকায় ভান্ডারাই ভরসা।

আলাপ হল বিহারের অস্মিতা দেবীর সঙ্গে। পাঁচ বছরের ছেলে মহেশ্বরকে নিয়ে সঙ্গমে এসে কার্যত জল ও বিস্কুট খেয়ে রয়েছেন। আফসোস করছেন, কোলের ছেলেকে কত দিন আর বিস্কুট খাইয়ে রাখবেন। আমরাও ভান্ডারা থেকে খেলাম। রাস্তায় মুড়ি বিক্রি হচ্ছে, মানুষ বাধ্য হয়ে চড়া দাম দিয়ে তা কিনে খাচ্ছেন।

জাতীয় সড়কের দু’পাশে পানীয় জল কেনার মতো একটা দোকানও নেই। মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলা থেকে ৭০ জনের একটি দল এসেছিল। তীব্র ক্ষোভ জানালেন, যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে তীর্থে এসে রাস্তায় বসে খেতে হচ্ছে।

ব্যাপারটা হল, শাস্ত্রী ব্রিজ দিয়ে যদি পুলিশ গাড়ি বার হতে দিত, তা হলে হয়তো এত ঝক্কির মধ্যে পড়তে হত না। কিন্তু গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ায় দূরত্ব আরও ৪০ কিলোমিটার বেড়ে গেল। এ দিকে, যানজট সামলানোর ব্যবস্থা নেই। তখন হিসাব করে দেখলাম, ৩৪ কিলোমিটার পথ পার হয়েছি ‘মাত্র ছ-ঘণ্টা ১৫ মিনিটে’। প্রশ্ন এটাই, একটা পুলও কি রাখা যেত না, যেটা দিয়ে সহজে গাড়ি যমুনা পার হতে পারে! মানুষ তো বিভিন্ন দিক দিয়েই পায়ে হেঁটে ঢুকছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করল। বুঝলাম যন্ত্রণা শেষ হচ্ছে। বারাণসীর দিকে এগিয়ে যেতে থাকল গাড়ি। তীব্র ক্লান্তিতে তখন চোখ বুজেছি। এ বার স্রেফ গন্তব্যে পৌঁছনোর পালা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Maha Kumbh 2025 Maha Kumbh Mela 2025 Prayagraj

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}