Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাথর পুঁতে আদিবাসী ক্ষোভ, রাষ্ট্রদ্রোহ দেখছেন রঘুবর

রবিবারই খুঁটি শহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে, কোচাং গ্রামে হয়ে গেল পাত্থলগাড়ি

খুঁটির কোচাং গ্রামে মাটিতে পোঁতা ‘পাথাল’। নিজস্ব চিত্র।

খুঁটির কোচাং গ্রামে মাটিতে পোঁতা ‘পাথাল’। নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১০
Share: Save:

না বিধানসভা। না লোকসভা। গ্রামসভার আইনই শেষ কথা। খুঁটি ও সংলগ্ন সরাইকেলা জেলার অন্তত ছ’টি আদিবাসী গ্রামে ‘পাথর’ পুঁতে আদিবাসীরা লিখে রেখেছেন এরকমই সব ‘নিয়মকানুন’। পাথরে কিছু কথা লিখে সেই পাথরকে পুঁতে দেওয়ার স্থানীয় নাম ‘পাত্থলগাড়ি’। এটি আদিবাসীদের প্রাচীন প্রথা। পুরনো দিনে পাথরের উপর আদিবাসীরা তাদের গ্রাম সভার নানা নিয়মকানুনের কথা লিখে রাখত। কিন্তুকিছু দিন ধরে খুঁটি ও সরাইকেলার কয়েকটি গ্রামে পাত্থলগাড়ি-র নামে যা শুরু হয়েছে, বিতর্ক তাকে ঘিরেই। পুলিশের অভিযোগ, একদল সমাজবিরোধীকে এই কাজে মদত দিচ্ছে দলছুট মাওবাদী জঙ্গিদের সংগঠন পিএলএফআই। মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস আরও এক ধাপ এগিয়ে এই কাজের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধীদের যোগসাজশের অভিযোগ এনেছেন।

রবিবারই খুঁটি শহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে, কোচাং গ্রামে হয়ে গেল পাত্থলগাড়ি। কয়েক হাজার আদিবাসীর ওই জমায়েত থেকে সরকারকে বয়কট করে লেখা হল তাদের নিজস্ব আইনের কথা। এমনকী পাথরে লিখে রাখা হল, গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া কোনও বহিরাগতকে গ্রামে ঢুকতে না-দেওয়ার ফরমানও।

গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড সরকার ছোটনাগপুর টেনেন্সি অ্যাক্ট ও সাঁওতাল পরগনা টেনেন্সি অ্যাক্ট সংশোধনের যে প্রস্তাব এনেছেন তা থেকেই শুরু হয়েছে আদিবাসীদের ক্ষোভ। সেই সঙ্গে পরিষেবা না পাওয়ার ক্ষোভকেও কাজে লাগাচ্ছে একদল মানুষ। আদিবাসী নেত্রী বাসবী কিরোর কথায়, ‘‘আদিবাসীদের বহু পুরনো এই প্রথায় আদিবাসীদের সাংবাধানিক অধিকারের কথা লেখা থাকত। পাত্থলগাড়ির নামে এখন যা করা হচ্ছে তা ঠিক নয়।’’

প্রশাসন মনে করছে, পাত্থলগাড়ির নামে একদল সমাজবিরোধী সাধারণ আদিবাসীদের ভয় দেখিয়ে গ্রামে অবাধে আফিম চাষ করার মতলব কষছে। সে কারণেই গ্রামে বহিরাগত ও পুলিশ প্রশাসনকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ফন্দি এঁটেছে তারা। খুঁটির পুলিশ সুপার অশ্বিনী কুমার সিনহা বলেন, ‘‘এই সব সমাজবিরোদীদের মদত দিচ্ছে পিএলএফআই জঙ্গিরা। তবে পুলিশ কড়া হাতে তা দমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস আজ বলেন, ‘‘পাত্থলগাড়ির নামে আসলে কিছু রাষ্ট্রবিরোধী মানুষের জমায়েত হচ্ছে। আমি গ্রামগুলিতে যাব।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ আখ্যা দিলেও পাত্থালের উপরে বড় করে অশোকস্তম্ভ খোদাই করা। তলায় লেখা ‘সত্যমেব জয়তে’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stone Tribal Kuching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE