Advertisement
E-Paper

নরবলিও তো প্রাচীন প্রথা, তালাক নিয়ে যুক্তি কেন্দ্রের

সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যালঘু নয়। তিন তালাক আসলে মুসলিম সমাজেরই পুরুষ বনাম নারীর অধিকারের প্রশ্ন। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আপত্তি খারিজ করতে সুপ্রিম কোর্টে এই পাল্টা যুক্তি দিল কেন্দ্রীয় সরকার।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০৩:৫২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যালঘু নয়। তিন তালাক আসলে মুসলিম সমাজেরই পুরুষ বনাম নারীর অধিকারের প্রশ্ন। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আপত্তি খারিজ করতে সুপ্রিম কোর্টে এই পাল্টা যুক্তি দিল কেন্দ্রীয় সরকার।

শীর্ষ আদালতে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড যুক্তি দিয়েছিল, তিন তালাক প্রথা খারিজ করে দিলে মুসলিম সমাজের মনে হবে, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। পাল্টা যুক্তিতে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি বলেন, সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যালঘুর ‘প্রিজম’ দিয়ে বিষয়টি দেখাই উচিত নয়।

পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আইনজীবী কপিল সিব্বলের যুক্তি ছিল, তিন তালাক ১৪০০ বছরের পুরনো ধর্মীয় প্রথা। রোহতগির পাল্টা প্রশ্ন, কেউ যদি ধর্মীয় বিশ্বাসের নামে নরবলি দিতে চায়, তাকে কি পুরনো প্রথা বলে ছাড় দিতে হবে! সিব্বলের যুক্তি ছিল, তিন তালাক খারিজ হলে বার্তা যাবে, হিন্দুদের ধর্মীয় প্রথা সুরক্ষিত রেখে, কোপ পড়ছে মুসলিমদের ধর্মীয় আচারে। আজ তিনি বলেন, ঈগলের শিকারের সামনে মুসলমানরা ছোট পাখির মতো আদালতের সুরক্ষা চাইছে। রোহতগি পাল্টা বলেন, তিন তালাক ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়। তা তুলে দিলে ইসলামের ভিত নড়ে যাবে না। হিন্দু ধর্মেও সতীদাহ, দেবদাসীর মতো প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে। চালু হয়েছে বিধবা বিবাহ।

যা শুনে প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের মন্তব্য, ‘‘এর মধ্যে কোন ক্ষেত্রে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে!’’ তিন তালাক রদে সরকার নিজে কেন আইন করছে না, কেনই বা ৬৭ বছরে এ বিষয়ে আইন হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।

আরও পড়ুন: গুরুঙ্গের খাসতালুকে ঘাসফুল ফোটালেন মমতা

আজ মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডকে আদালত প্রশ্ন করেছে, তারা কাজিদের এমন কোনও নির্দেশিকা দিতে পারেন কি না, যাতে নিকাহনামা বা মুসলিমদের বিয়ের চুক্তিতেই মহিলারা তিন তালাক মানবেন না বলে জানিয়ে দিতে পারবেন? পার্সোনাল ল’ বোর্ডের প্রকাশিত একটি বই দেখিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘শুক্রবারের নমাজেই বোঝানো হয়, তালাক-এ-বিদ্দাত বা তিন তালাক পাপাচার।’’ ল’ বোর্ডের আইনজীবীরা বলেছেন, সব সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জবাব দেওয়া হবে। তবে সব কাজি এমন নির্দেশিকা না-ও মানতে পারেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল অবশ্য নিকাহনামার কার্যকারিতাই উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, মুসলিম সমাজে যে সব মহিলা শিক্ষা, আয় ও অধিকারের প্রশ্নে পিছিয়ে, সেখানে তাঁদের নিকাহনামায় এই ‘দর কষাকষি’ করার সুযোগ কোথায়! সিব্বল যুক্তি দেন, আধুনিক নিকাহনামা চালু হচ্ছে। পার্সোনাল ল’ বোর্ড গত ১৪ এপ্রিল নিজেই প্রস্তাব এনেছে, তিন তালাক পাপাচার। কেউ তা করলে তাকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা উচিত। মুসলিমদের খুব সামান্য অংশ এই প্রথা মানে। তা-ও আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। কিন্তু আদালত বা সরকার ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করলে, মুসলিম সমাজের জেদ চেপে যাবে। জমিয়ত-উলেমা-ই-হিন্দও যুক্তি দিয়েছে, কোনটি খারাপ, কোনটি ভাল, তা আদালতের বলে দেওয়ার দরকার নেই।

রোহতগি ঠিক এইখানেই প্রশ্ন তুলেছেন, মুসলিমরাই যে প্রথাকে ‘পাপাচার’, ‘অবাঞ্ছিত’ ও তত্ত্বগত ভাবে খারাপ বলছেন, তা কী করে ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য, জরুরি অঙ্গ হতে পারে? তা তুলে দিলে ধর্ম উঠে যাবে না! তিন তালাক প্রথা কী ভাবে খারিজ করা যেতে পারে, তার জন্য আজ সুপ্রিম কোর্টের সামনে দু’টি প্রস্তাব পেশ করেছে কেন্দ্র। এক, তিন তালাক ১৯৩৭-এর মুসলিম পার্সোনাল ল’ (শরিয়ত)-এর অংশ। এটি আর পাঁচটা আইনের মতো হলেও সাংবিধানিক নয় বলে আদালত তা খারিজ করে দিতে পারে। দুই, তিন তালাক ধর্মীয় প্রথা হলেও ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। এটি মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারে আঘাত করছে বলে তা খারিজ করে দেওয়া যায়। ধর্মাচরণের অধিকার তো সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়। প্রবীণ আইনজীবীরা বলছেন, প্রথম ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, ব্যক্তি আইনের সঙ্গে সরকারি আইনের তফাতের কথা সংবিধানেই বলা আছে। আবার আদালত দ্বিতীয় পথ নিলে ভবিষ্যতে সব ধর্মেই বহু বিতর্কিত প্রথা রদ করার জন্য দাবি উঠবে।

বৃহস্পতিবার শুনানির শেষ দিন।

Central government Ancient customs Triple Talaq Human Sacrifice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy