Advertisement
০৬ মে ২০২৪

জলবায়ু-ট্রাম্প, মোদী থাকতে চান মাঝখানে

এই পরিস্থিতিতে আপাতত মোদীর কৌশল, প্যারিস চুক্তিতে অনড় থাকা। আবার ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি যে ভাবে যৌথ বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে, সেই পথে না হাঁটা।

নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০৪:০৭
Share: Save:

প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি থেকে ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের আমেরিকা সরে দাঁড়ানোয় কূটনৈতিক অস্বস্তির মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জার্মানিতে জুলাই মাসে জি-২০ সম্মেলনের বহুপাক্ষিক মঞ্চে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হবেই। কিন্তু তার আগে জুনের শেষেই ওয়াশিংটনে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চান প্রধানমন্ত্রী। আবার প্যারিস চুক্তি নিয়ে আমেরিকা বেঁকে বসায় জলবায়ু চুক্তির নেতৃত্ব যে ভাবে ইউরোপের হাতে চলে যাচ্ছে, তাতে অ-মার্কিন জোটের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রাখাটা ভারতের পক্ষে জরুরি।

এই পরিস্থিতিতে আপাতত মোদীর কৌশল, প্যারিস চুক্তিতে অনড় থাকা। আবার ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি যে ভাবে যৌথ বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে, সেই পথে না হাঁটা।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, খাস আমেরিকাতেই জলবায়ু চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধ-কণ্ঠ রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের আগেই জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। এখন ওবামার স্বাস্থ্যনীতি খারিজ করার মতোই জলবায়ু চুক্তির ক্ষেত্রেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তিনি আসলে দেশবাসীর কাছে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করলেন মাত্র। মোদী শিবির এটাও মনে রাখছে, ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন বটে, তবে, চাইলেও আমেরিকা ২০২০-র আগে প্যারিস চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বেরোতে পারবে না। ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০১৯-এর নভেম্বর মাসে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আবেদন জানাতে পারে আমেরিকা। কিন্তু ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলে আমেরিকা চূড়ান্ত ভাবে চুক্তি থেকে বেরোতে পারবে। তত দিনে প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের মেয়াদই শেষ হয়ে আসবে। কাজেই যে জিনিসটি এখনই হচ্ছে না, তা নিয়ে এখনই মোদীর প্রতিক্রিয়া জানানোটা ভুল চাল হবে।

জলবায়ু চুক্তির শরিক থাকার পক্ষে ভারতের যুক্তি, ওই চুক্তির রূপায়ণ হলে পরিবেশ-বান্ধব ব্যবসায়িক প্রয়াস বাড়বে। ফলে জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল, টেসলা, অ্যাপলের মতো সংস্থা অনেক বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে বলে মনে করছে সংস্থাগুলি। ভারতীয় এক কূটনীতিক আজ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ট্রাম্পের নিজের দেশেই তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁর দুই আর্থিক উপদেষ্টা ইস্তফা দিয়েছেন। দু’টি বড় বাণিজ্যিক সংস্থার কর্ণধার তাঁরা। ট্রাম্পের কন্যাও ক’দিন আগে জলবায়ু চুক্তির পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষাও জানাচ্ছে, গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই চুক্তির পক্ষে। এই অবস্থায় আগ বাড়িয়ে ভারতের মার্কিন-বিরোধিতার লাইন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক।

ট্রাম্প ভারত-চিনকে আক্রমণ করলেও আমেরিকার কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেক বেশি। অনেকে এমনটাও মনে করছেন, ভারত-চিন দু’পক্ষকে একসঙ্গে আক্রমণ করে ট্রাম্প হয়তো বেজিংকেই খুশি করতে চেয়েছেন। কারণ, চিন নিয়ে অনেক কথা বললেও, ভারত নিয়ে অন্তত ভোটের আগে তিনি আক্রমণাত্মক হননি।

তবে সন্ত্রাস প্রশ্নে নরম হতে চাইছেন না মোদী। যে কারণে তিনি রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলির সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী ঐকমত্য রচনায় উদ্যোগী হয়েছেন। রাশিয়ায় সফরে গিয়ে আমেরিকার নাম না করেই তাঁর আর্জি, ‘ভাল সন্ত্রাসবাদী’ ও ‘খারাপ সন্ত্রাসবাদী’র মধ্যে ফারাক করাটা বন্ধ করুন। এ ভাবে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে সরব থাকলেও মোদীর ভারত এখন সতর্ক ভাবে ভারসাম্য রেখে চলারই পক্ষে। কূটনৈতিক অস্বস্তি এড়াতে সাবেকি ‘মঝঝিম-পথে’র বিদেশনীতিতে ভরসা রাখছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE